জাতীয়

নির্বাচন নিয়ে ধূম্রজাল: ‘সংক্ষিপ্ত’ ও ‘বৃহৎ সংস্কার’ নিয়ে আলোচনা

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সর্বশেষ বক্তব্য রাজনীতিতে নতুন আলোচনা সৃষ্টি করেছে। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো মনে করছে, প্রধান উপদেষ্টার পূর্ববর্তী অবস্থান পরিবর্তিত হয়েছে, যা সরকারের প্রতি মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে।

প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গত শুক্রবার ঢাকায় জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠকে সরকারের সংস্কারের উদ্যোগ এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যদি ‘সংক্ষিপ্ত সংস্কার প্যাকেজ’ নিয়ে একমত হয়, তবে নির্বাচন ডিসেম্বরেই হতে পারে। অন্যদিকে, ‘বৃহৎ সংস্কার প্যাকেজ’ গ্রহণ করলে নির্বাচন আগামী বছরের জুনে অনুষ্ঠিত হবে।

রাজনৈতিক দলের প্রতিক্রিয়া

দলগুলোর নেতারা বলছেন, প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নতুন করে ভাবনায় ফেলছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা যেটা বলেছেন, তাতে তাঁর আগের কমিটমেন্টের পরিবর্তন মনে হচ্ছে। তিনি অল্প সংস্কার আর বৃহৎ সংস্কার বলতে কী বোঝাতে চাইছেন পরিষ্কার নয়।”

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, “সংস্কার কোনটা সংক্ষিপ্ত, কোনটা বিস্তৃত—সেটা ডিসাইড (ঠিক) করবে কে? তাহলে তো এটা ঠিক করার জন্য আরেকটা কমিশন করতে হবে।”

নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা

বিএনপি নেতারা আঁচ করছেন যে সরকারের ভেতর থেকেই নির্বাচন বিলম্বিত করার প্রচেষ্টা রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে ‘বৃহৎ সংস্কার প্যাকেজ’ গ্রহণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি করেছে।

সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “সংস্কার তো এখনো শুরু হয়নি। মাত্র থিওরিটিক্যাল কাজ হয়েছে। আমরা চাই প্রয়োজনীয় সংস্কার, অর্থাৎ যে সংস্কারে একটি কোয়ালিটি (মানসম্মত) নির্বাচন হয়, সেটাই করতে হবে।”

সরকারের পরিকল্পনা

অন্তর্বর্তী সরকারের লক্ষ্য দেশের বিভিন্ন খাতে সংস্কার আনা। এ লক্ষ্যে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। কমিশনগুলো তাদের প্রস্তাব জমা দিয়েছে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত চেয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “আমরা মনে করি, নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট সংস্কারে এক-দেড় মাসের বেশি লাগার কথা নয়। সে হিসেবে আগামী জুন-জুলাইতে নির্বাচন হতে পারে।”

নির্বাচন নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হওয়া রাজনৈতিক অঙ্গনে বিভ্রান্তি বাড়াচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা ও সমঝোতা প্রয়োজন, যাতে জনগণের মধ্যে সঠিক তথ্য পৌঁছায় এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ হয়।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button