জাতীয়

মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশু আছিয়ার মৃত্যু, বিচার চেয়ে উত্তাল জনমত

মাগুরায় ধর্ষণের শিকার পাঁচ বছর বয়সী শিশু আছিয়া শেষ পর্যন্ত চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) দুপুর ১টায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। বিষয়টি ‘বাংলাদেশ আর্মি’ ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।

শেষ হলো একটি নিষ্পাপ প্রাণের লড়াই

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, “অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে জানানো যাচ্ছে যে, মাগুরায় পাশবিক নির্যাতনের শিকার শিশুটি আজ (১৩ মার্চ) দুপুর ১টায় সিএমএইচে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে। চিকিৎসকরা তাকে বাঁচানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন, কিন্তু তিনবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হওয়ার পর আর তার হৃদস্পন্দন ফিরে আসেনি।”

গত ৮ মার্চ শিশুটিকে সংকটাপন্ন অবস্থায় সিএমএইচে ভর্তি করা হয়। এর আগে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার শারীরিক অবস্থার ক্রমাগত অবনতি ঘটতে থাকে।

কীভাবে ঘটল এই নির্মম ঘটনা?

গত ৬ মার্চ মাগুরা শহরের পারনান্দুয়ালী এলাকায় বোনের শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে গিয়েছিল পাঁচ বছর বয়সী আছিয়া। সেখানেই পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয় সে। অভিযোগ রয়েছে, তার বোনের শ্বশুর হিটু শেখ (৫০) তাকে ধর্ষণ করে। পরে শিশুটিকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

পরিবারের সদস্যরা জানান, ঘটনার পরপরই তাকে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থা গুরুতর হলে তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হয়ে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়। অবস্থার আরও অবনতি হলে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয় এবং পরে তাকে সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়।

গ্রেপ্তার ও বিচার প্রক্রিয়া

শিশুটিকে ধর্ষণের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত হিটু শেখসহ চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতদের মধ্যে রয়েছে শিশুটির দুলাভাই এবং তার পরিবারের আরও দুই সদস্য। আদালত তাদের মধ্যে প্রধান অভিযুক্ত হিটু শেখের সাত দিনের এবং বাকি তিনজনের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে।

শোক প্রকাশ ও বিচার দাবি

শিশুটির মৃত্যুতে দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী, মানবাধিকার সংস্থা ও সাধারণ জনগণ দ্রুত বিচার নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস শোক প্রকাশ করে দ্রুততম সময়ে দোষীদের আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের নির্দেশ দিয়েছেন।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “শিশুটির পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি এবং যে কোনো প্রয়োজনে তাদের পাশে থাকার অঙ্গীকার করছি। আমরা শিশুটির বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।”

বিচারের দাবিতে উত্তাল জনমত

শিশুটির মৃত্যুর খবরে মাগুরার সাধারণ মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। জনগণের একটাই দাবি—অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button