
ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ফরিদপুরের নগরকান্দায় সোমবার সন্ধ্যায় ঘটে গেল এক অবিশ্বাস্য ঘটনা। ভুয়া র্যাব সেজে ডাকাতি করা একদলকে ধাওয়া করে আসছিল র্যাব-১০ এর একটি দল। কিন্তু ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি এমনভাবে মোড় নেয় যে স্থানীয় জনতার হাতে ভুয়া র্যাবের পাশাপাশি প্রকৃত র্যাব সদস্যেরাও গণপিটুনির শিকার হন।
ঘটনাটি কীভাবে ঘটল
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে জয় বাংলার মোড় এলাকায় দ্রুতগতির দুটি মাইক্রোবাস প্রবেশ করে। প্রথম মাইক্রোবাসটিকে সন্দেহজনকভাবে দৌড়াতে দেখে স্থানীয়রা মহাসড়কে গাছ ফেলে সেটি থামিয়ে দেয়। গাড়ি থেকে নামা লোকজন নিজেদের র্যাব সদস্য হিসেবে পরিচয় দিলেও কারও গায়ে র্যাবের পোশাক ছিল না। এতে সন্দেহ আরও বাড়ে এবং উত্তেজিত জনতা তাদের আটকে মারধর শুরু করে।
কিছুক্ষণের মধ্যে দ্বিতীয় মাইক্রোবাসটি ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এতে ছিলেন আসল র্যাব সদস্যরা, যারা প্রথম দলটিকে ধাওয়া করে আসছিলেন। কিন্তু বেশিরভাগই সাদাপোশাকে থাকায় স্থানীয়রা তাদেরও ভুয়া মনে করে আক্রমণ চালায়।
পুলিশ ও র্যাবের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় খবর পেয়ে নগরকান্দা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরে পুলিশের সহায়তায় প্রকৃত র্যাব সদস্যরা স্থানীয়দের বোঝানোর চেষ্টা করেন। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর পরিস্থিতি শান্ত হয় এবং উভয় পক্ষকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। রাত সাড়ে আটটার দিকে আটককৃত ভুয়া র্যাব সদস্যদের ফরিদপুর র্যাব ক্যাম্পের সদস্যরা নিয়ে যান।
কারা এই ভুয়া র্যাব?
র্যাব সূত্র জানায়, গ্রেফতারকৃতরা হলেন শরীয়তপুরের স্বপন খান (৪৫), চাঁদপুরের মিন্টু গাজী (৪৫), গাইবান্ধার সাইফুল ইসলাম (৩০), মাদারীপুরের জামিল (৩২) এবং ফরিদপুরের দিদার (২৯)। তারা সোনা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ডাকাতি করেছিল। শ্রীনগর থেকে শুরু হওয়া এই ধাওয়া শেষ পর্যন্ত ফরিদপুর পর্যন্ত গড়ায়।
র্যাব কর্মকর্তাদের বক্তব্য
র্যাব-১০ ফরিদপুর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার তারিকুল ইসলাম বলেন, “আমরা হেডকোয়ার্টার থেকে ডাকাত দলের পিছু নিয়েছিলাম। স্থানীয়দের ভুল বোঝাবুঝির কারণে আমাদের সদস্যদেরও আক্রমণের মুখে পড়তে হয়। সাদাপোশাকের কারণে তারা আমাদের চিনতে পারেননি।”
এ বিষয়ে র্যাব-১০ মুন্সিগঞ্জ ক্যাম্পের কমান্ডার আনোয়ার হোসেন বলেন, “ভুয়া র্যাবের দলটি পদ্মা সেতুর টোল অতিক্রম করে পালানোর চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ে। স্থানীয়রা যখন তাদের মারছিল, তখন আমরা গিয়ে তাদের বাঁচাতে চেষ্টা করি। কিন্তু স্থানীয়রা প্রথমে আমাদেরও ভুয়া ভেবে মারধর শুরু করে।”
কেন এমন ঘটল
গ্রামাঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরেই ভুয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। এই কারণে সাধারণ মানুষ এখন আরও সতর্ক। ঘটনার দিন ভুয়া র্যাব দলের গায়ে কোনো ইউনিফর্ম না থাকায় স্থানীয়রা দ্রুত সন্দেহে পড়ে এবং পরিস্থিতি উত্তেজিত হয়ে ওঠে। একই কারণে প্রকৃত র্যাব সদস্যরাও ভুল বোঝাবুঝির শিকার হন।
এলাকাবাসীর প্রতিক্রিয়া
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মহাসড়কে দৌড়ানো মাইক্রোবাস এবং ভুয়া র্যাবের আচরণ দেখে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “আমরা নিজেরাই থামিয়েছি। যদি আমরা না থামাতাম, হয়তো আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটত। তবে পরে বুঝলাম আসল র্যাবও তাদের পেছনে ছিল।”
নিরাপত্তা নিয়ে নতুন প্রশ্ন
এই ঘটনা সাধারণ মানুষের মনে এক নতুন প্রশ্ন তৈরি করেছে— কিভাবে সাধারণ মানুষ বুঝবে কে আসল র্যাব আর কে ভুয়া? নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সাদাপোশাকে অভিযান চালানো দরকার হলেও এর ঝুঁকি এখন বড় হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
ভবিষ্যতে যেন এমন ভুল বোঝাবুঝি না হয়, তার জন্য সচেতনতা বাড়ানো এবং প্রযুক্তিভিত্তিক পরিচয় যাচাইয়ের ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সারসংক্ষেপ
ভুয়া র্যাবের তাণ্ডব থামাতে গিয়ে এক নাটকীয় ভুল বোঝাবুঝি পুরো ঘটনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। যদিও শেষ পর্যন্ত প্রকৃত র্যাবের হস্তক্ষেপে অপরাধীরা ধরা পড়ে, তবে স্থানীয়দের এই প্রতিক্রিয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।
এম আর এম – ০৫৮২ , Signalbd.com