
গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি আলোচনা চলছে, তবুও ইসরায়েলি বিমান হামলার ধ্বংসযজ্ঞ থামেনি। গত ২৪ ঘণ্টায় উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক বোমা হামলা চালিয়ে প্রাণহানি হয়েছে আরও ৮২ জন ফিলিস্তিনির। হামলা চালানো হয়েছে স্কুল, আবাসিক এলাকা ও শিশু ও নারীদের উপস্থিত বিভিন্ন হাসপাতালের আশপাশেও।
দৈনিক তাণ্ডব: বোমাবর্ষণ ও নিরীহ প্রাণের বলি
কাতার ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১০ জুলাই গাজার বিভিন্ন স্থান লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী বিধ্বংসী হামলা চালায়। দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস ও দেইর আল বালার মতো স্থানগুলোতেও আঘাত হেনেছে। বিশেষ করে দেইর আল বালায় শিশু খাদ্য ও চিকিৎসা নিতে যাওয়ার সময় ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ১০ শিশু ও ৪ নারীসহ ১৬ জন।
এই হামলায় সাধারণ মানুষ নিহত হওয়ার পাশাপাশি তাদের জীবনযাত্রার অবস্থা আরও সংকটাপন্ন হয়েছে। স্কুল-হাসপাতাল ও আবাসিক এলাকায় বোমাবর্ষণ চালানো হয়েছে যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলে।
সেনাবাহিনীর তান্ডব: খান ইউনিসে বোমা হামলা
খান ইউনিসের একটি আবাসিক এলাকা লক্ষ্য করে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বিমান হামলা চালায়। এতে অনেকেই হতাহত হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হামলায় অনেক বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে এবং সাধারণ মানুষ দিশাহীন হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে স্থানীয় হাসপাতালগুলো অতিরিক্ত রোগী গ্রহণ করতে পারছে না।
যুদ্ধবিরতির আশা ও বাস্তবতার সংঘর্ষ
দীর্ঘ ২১ মাস ধরে চলা গাজা যুদ্ধের মাঝে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে হামলা বন্ধ হচ্ছে না, প্রাণহানিও অব্যাহত। হামাস ও ইসরায়েল উভয় পক্ষই যুদ্ধবিরতি চুক্তির নিকট পৌঁছানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু এখনও কার্যকর কোনো চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি। গাজায় এ পর্যন্ত ৫৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধবিরতি আলোচনার মাঝেও ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আক্রমণ বাড়ানোর পেছনে তাদের কৌশলগত উদ্দেশ্য রয়েছে। তারা চায়, আগের হামলাগুলোকে বড় ধরনের ভাঙ্গন সৃষ্টি করতে এবং প্রতিপক্ষকে দুর্বল করতে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় হাজার হাজার সাধারণ মানুষ মৃত্যুবরণ করছেন, তাদের অধিকাংশই শিশু, নারী ও বয়স্ক।
মানবিক সংকট ও আন্তর্জাতিক উদ্বেগ
গাজায় চলমান যুদ্ধে অসংখ্য পরিবার গৃহহীন হয়েছে। শিশুদের শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্ত, চিকিৎসা পরিষেবা দুর্বল, খাদ্য সংকট প্রকট। স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই পরিস্থিতির দ্রুত সমাধানের জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে আবেদন জানাচ্ছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা গাজার অবিলম্বে মানবিক সাহায্য পৌঁছে দিতে উদ্যোগ নিয়েছে।
বিশ্বজুড়ে ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সহমর্মিতা ও সমর্থন জানিয়ে বিক্ষোভ ও শান্তি আহ্বান চলছে। বিশেষ করে সামাজিক মাধ্যমে গাজার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচারণা জোরদার করা হয়েছে।
গাজার ইতিহাস ও সাম্প্রতিক যুদ্ধ পরিস্থিতি
গাজা উপত্যকা দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের মূল কেন্দ্রবিন্দু। এটি ফিলিস্তিনের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, যেখানে প্রায় ২০ লাখ মানুষ বাস করে। ২০০৭ সালের পর থেকে হামাস গাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি অনেকবার ভঙ্গ হয়েছে এবং এতে সাধারণ মানুষের জীবন-যাত্রা নাজুক হয়েছে।
গত দুই বছরে গাজার ওপর ইসরায়েলের বিমান হামলা ও স্থল অভিযান বেড়ে গেছে। প্রতিদিনই চলছে বন্দুকযুদ্ধ, বোমাবর্ষণ, এবং সেনাবাহিনীর অভিযান। মানবাধিকার লঙ্ঘন, স্কুল, হাসপাতাল ধ্বংসের খবর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে। এসব পরিস্থিতিতে গাজার জনগণ নিঃস্ব ও ভীতসন্ত্রস্ত।
আসন্ন যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা ও আন্তর্জাতিক ভূমিকা
বিশ্বজুড়ে ইসরায়েল-হামাস সংঘাতের অবসান ঘটানোর জন্য বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংগঠন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব রেখেছে। বিশেষ করে মিশর, কাতার ও সংযুক্ত জাতিসংঘ যুদ্ধবিরতি আলোচনায় মধ্যস্থতা করছে। আশা করা হচ্ছে, দ্রুত একটি স্থায়ী চুক্তি হবে যা গাজার মানুষকে নির্ভরশীল জীবনের দুঃখ থেকে মুক্তি দেবে।
তবে রাজনৈতিক জটিলতা, ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ব এবং উভয় পক্ষের আস্থা সংকট যুদ্ধবিরতি প্রক্রিয়াকে কঠিন করে তুলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানবিক দিক থেকে অবিলম্বে শান্তি প্রতিষ্ঠাই একমাত্র সমাধান।
সংক্ষেপে:
- গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় ৮২ জন ফিলিস্তিনি নিহত, এর মধ্যে ১০ শিশু ও ৪ নারী।
- দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস ও দেইর আল বালা এলাকা আক্রমণের প্রধান কেন্দ্র।
- গাজার দীর্ঘ ২১ মাসের সংঘর্ষে মৃতের সংখ্যা ৫৭ হাজারের বেশি।
- যুদ্ধবিরতি আলোচনায় অগ্রগতি হলেও তাণ্ডব অব্যাহত।
- আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও মানবিক সংকট গুরুতর, বিশ্বজুড়ে সহমর্মিতা ও সাহায্যের আহ্বান।
গাজার এই ভয়াবহ পরিস্থিতি আমাদের সকলের হৃদয় স্পর্শ করে। আমরা আশা করি বিশ্বসমাজ দ্রুত হস্তক্ষেপ করবে, যাতে নিরীহ মানুষের রক্তপাত বন্ধ হয় এবং শান্তির বাতাস বয়ে আসে এই সংবেদনশীল অঞ্চলে।