
রাজধানী ঢাকাবাসীর জন্য আজকের দিনটি নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। সরকারের উদ্যোগে তিনটি নতুন নাগরিক সেবাকেন্দ্রের যাত্রা শুরু হয়েছে, যার মাধ্যমে নাগরিকরা আরও সহজে, দ্রুত ও স্বচ্ছভাবে সরকারি সেবা গ্রহণ করতে পারবেন।
এই তিনটি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে রাজধানীর গুলিস্তান, বনশ্রী ও মোহাম্মদপুরে। বুধবার (২২ অক্টোবর ২০২৫) প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক ঘোষণায় বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
নাগরিক সেবাকে হাতের নাগালে আনতেই নতুন উদ্যোগ
বাংলাদেশে নাগরিক সেবাকে আরও সহজ, স্বচ্ছ ও ডিজিটালমুখী করার লক্ষ্যেই সরকারের এই নতুন পদক্ষেপ।
“নাগরিকদের পাশে সরকার”— এই মূলমন্ত্রে নতুন তিনটি সেবাকেন্দ্রের উদ্বোধন করা হয়েছে।
ঘোষণায় বলা হয়, এখন থেকে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসকারী নাগরিকরা তাদের নিকটস্থ সেবাকেন্দ্রে গিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, পাসপোর্ট সংক্রান্ত সহায়তা, অনলাইন আবেদন, জমির খতিয়ান যাচাই, ট্রাফিক জরিমানা পরিশোধসহ নানাবিধ সরকারি সেবা গ্রহণ করতে পারবেন।
তিনটি নতুন কেন্দ্রের অবস্থান ও বিস্তারিত তথ্য
নিচে নতুন তিনটি কেন্দ্রের অবস্থান ও যোগাযোগের বিস্তারিত দেওয়া হলো, যাতে নাগরিকরা সহজেই তাদের নিকটতম কেন্দ্র খুঁজে পেতে পারেন:
১. নাগরিক সেবাকেন্দ্র, গুলিস্তান
ঠিকানা: রমনা টেলিফোন ভবন, গুলিস্তান (নগর ভবনের পাশে)
যোগাযোগ: মো. জাহিদ হাসান (০১৭৪৪৯৮৭৬০৬)
গুগল ম্যাপ: https://maps.app.goo.gl/cAet4WzmPEBeJTXG9
এই কেন্দ্রটি মূলত পুরান ঢাকার নাগরিকদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। সরকারি অফিসে ভিড় না করে এখান থেকে একই জায়গায় একাধিক সেবা পাওয়া যাবে।
২. নাগরিক সেবাকেন্দ্র, বনশ্রী
ঠিকানা: বাড়ি নম্বর: ১/এ, রোড: ০২, ব্লক ডি, বিটিসিএল, বনশ্রী, ঢাকা-১২১৯
যোগাযোগ: মোরশেদা মুক্তা (০১৮১১২৫৬৩৪১)
গুগল ম্যাপ: https://maps.app.goo.gl/LifX6NDRcU22dazD7
বনশ্রী এলাকাটি তুলনামূলকভাবে নতুন হলেও জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এই কেন্দ্র চালু হওয়ায় রামপুরা, বাড্ডা ও খিলগাঁওয়ের নাগরিকরাও সহজে সরকারি সেবা পাবেন।
৩. নাগরিক সেবাকেন্দ্র, মোহাম্মদপুর
ঠিকানা: প্লট ৪৭, আসাদ এভিনিউ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭
যোগাযোগ: মো. মুস্তাকিম (০১৭১৮৮৬৩৩৭১)
গুগল ম্যাপ: https://maps.app.goo.gl/DHqACmu21nys38nh9
মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, আদাবরসহ আশেপাশের এলাকার নাগরিকদের জন্য এই কেন্দ্রটি হবে সবচেয়ে সহজ সরকারি সহায়তা কেন্দ্র।
বর্তমানে ঢাকায় মোট ছয়টি নাগরিক সেবাকেন্দ্র
এই তিনটি নতুন কেন্দ্র যুক্ত হওয়ায় বর্তমানে রাজধানীতে মোট ছয়টি নাগরিক সেবাকেন্দ্র কার্যক্রম পরিচালনা করছে। পূর্বে চালু ছিল গুলশান, উত্তরা ও নীলক্ষেত কেন্দ্র।
এই ছয়টি কেন্দ্র যৌথভাবে এখন প্রায় ১ কোটি নাগরিকের জন্য সরাসরি ও অনলাইন সেবা প্রদান করতে সক্ষম।
কী ধরনের সেবা পাওয়া যাবে নাগরিক সেবাকেন্দ্রে
নাগরিক সেবাকেন্দ্রগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে এক জায়গা থেকেই নাগরিকরা একাধিক সরকারি সেবা নিতে পারেন। এসব সেবার মধ্যে রয়েছে —
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ও নবায়ন
জন্ম, মৃত্যু ও বিবাহ নিবন্ধন
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট
পাসপোর্ট আবেদন সংক্রান্ত সহায়তা
জমির খতিয়ান যাচাই ও কপি সংগ্রহ
অনলাইন আবেদনপত্র পূরণে সহায়তা
ট্রাফিক জরিমানা পরিশোধ
বিদ্যুৎ ও পানির বিল প্রদান
সরকারি প্রকল্প ও ভাতা সংক্রান্ত তথ্য
এই সেবাগুলো প্রাপ্তির জন্য নাগরিকদের আর আলাদা দপ্তরে ছুটতে হবে না। বরং একটি কেন্দ্রেই সব কাজ সম্পন্ন হবে — যা সময় ও খরচ উভয়ই বাঁচাবে।
নাগরিকদের অংশগ্রহণে গড়ে উঠছে “ডিজিটাল সেবা সংস্কৃতি”
সরকারের “ডিজিটাল বাংলাদেশ” থেকে “স্মার্ট বাংলাদেশ”-এ রূপান্তরের ধারাবাহিকতায় এই কেন্দ্রগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণায় বলা হয় —
“আমরা চাই, প্রতিটি নাগরিক যেন সরকারি সেবা পেতে হয়রানির শিকার না হন। নাগরিক সেবাকেন্দ্র সেই লক্ষ্যে একটি বাস্তব সমাধান।”
এছাড়া জনগণকে তাদের অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ জানানোর আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে আরও কার্যকরভাবে সেবা ব্যবস্থা উন্নত করা যায়।
নাগরিকদের প্রতিক্রিয়া
গুলিস্তানের নতুন কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী হাসান কবির বলেন,
“আগে ছোট একটি কাজের জন্যও বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরতে হতো। এখন এই এক জায়গা থেকেই জাতীয় পরিচয়পত্র, ট্রেড লাইসেন্স ও বিদ্যুৎ বিলের কাজ করা যাচ্ছে।”
বনশ্রীর গৃহিণী মোরশেদা আক্তার বলেন,
“আমি অনলাইনে আবেদন করতে জানি না। কিন্তু এখানে এসে সহজেই কর্মীদের সাহায্যে আবেদন করতে পারি। এতে সময়ও কম লাগে, আর ভুলও হয় না।”
এমন ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখেই বোঝা যায়, নাগরিকরা এই সেবাকে আন্তরিকভাবে গ্রহণ করছেন।
প্রশাসনের বক্তব্য
নাগরিক সেবাকেন্দ্রগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা বলেন,
“আমরা শুধু সেবা দিচ্ছি না, নাগরিকদের মতামতও নিচ্ছি। এই কেন্দ্রগুলো মূলত সরকার ও জনগণের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করছে।”
তিনি আরও জানান, প্রতিটি কেন্দ্রে প্রশিক্ষিত কর্মী, আধুনিক কম্পিউটার সিস্টেম, ইন্টারনেট সংযোগ এবং অনলাইন ফর্ম পূরণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
সরকার জানিয়েছে, আগামী এক বছরের মধ্যে ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহরগুলোতেও একই ধরনের নাগরিক সেবাকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
এছাড়া কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে ধীরে ধীরে ডিজিটাল পেমেন্ট, ই-ট্যাক্স ফাইলিং, ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন ও হেলথ আইডি কার্ড সংক্রান্ত সেবা যুক্ত করা হবে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশের নাগরিক প্রশাসন এখন একটি রূপান্তরের পথে— যেখানে সেবা মানে আর কেবল কাগজপত্র নয়, বরং মানুষের হাতে প্রযুক্তি।
রাজধানীর গুলিস্তান, বনশ্রী ও মোহাম্মদপুরে চালু হওয়া এই নতুন কেন্দ্রগুলো নিঃসন্দেহে সরকারি সেবায় একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।
নাগরিকদের সহযোগিতা ও সচেতন অংশগ্রহণ থাকলে এই উদ্যোগ “স্মার্ট বাংলাদেশ” গড়ার পথে একটি দৃষ্টান্ত হয়ে উঠবে।
সারসংক্ষেপ:
- নতুন তিনটি নাগরিক সেবাকেন্দ্র চালু: গুলিস্তান, বনশ্রী ও মোহাম্মদপুরে
- এখন ঢাকায় মোট ছয়টি কেন্দ্র
- নাগরিকরা এক জায়গায় সরকারি সেবা পাবেন
- অনলাইন ও সরাসরি উভয় মাধ্যমেই সেবা
- ভবিষ্যতে দেশব্যাপী সম্প্রসারণের পরিকল্পনা
MAH – 13428 I Signalbd.com