
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে গভীর উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ের একের পর এক অগ্নিকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত, এবং সব ঘটনাই একই সূত্রে গাঁথা। দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে ষড়যন্ত্র চলছে বলে দাবি করেন তিনি।
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার (১৮ অক্টোবর) এক লিখিত বিবৃতিতে তিনি বলেন, “সম্প্রতি দেশে ঘটে যাওয়া বেশ কয়েকটি অগ্নিকাণ্ড এবং আজকের এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড একই সূত্রে গাঁথা।” তার দাবি, এসব অগ্নিকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিতভাবে ঘটানো হচ্ছে দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট ও জনগণের মনোযোগ অন্যদিকে ঘোরাতে।
অগ্নিকাণ্ড নিয়ে ফখরুলের উদ্বেগ ও অভিযোগ
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও জনবহুল এলাকায় ধারাবাহিকভাবে আগুন লাগার ঘটনাগুলো কোনোভাবেই স্বাভাবিক নয়। এগুলো একটি নির্দিষ্ট মহলের পরিকল্পিত কর্মকাণ্ড, যারা জনগণের আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে চায়।
তিনি আরও বলেন, “ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষার বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে এবং গণআন্দোলনের সাফল্য ব্যর্থ করতে ফ্যাসিস্ট শক্তির দোসররা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে।”
বিএনপি মহাসচিবের মতে, এই ধারাবাহিক অগ্নিকাণ্ডের পেছনে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শক্তির যোগসাজশ রয়েছে। তিনি দাবি করেন, রাষ্ট্রীয় যন্ত্রের একটি অংশও কখনও কখনও এমন ঘটনায় দায় এড়াতে পারে না।
‘একই সূত্রে গাঁথা’—সাম্প্রতিক আগুনের ঘটনার বিশ্লেষণ
মির্জা ফখরুল উল্লেখ করেন, গত কয়েক মাসে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে একাধিক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। কখনো বাজার, কখনো কারখানা, আবার কখনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনা—সব জায়গায় আগুন লেগেছে রহস্যজনকভাবে।
তিনি বলেন, “শাহজালালের আগুনসহ সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া অগ্নিকাণ্ডগুলো একই সূত্রে গাঁথা। এগুলোর উদ্দেশ্য একটাই—দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করা এবং জনগণের মধ্যে ভয় ছড়ানো।”
বিএনপি নেতা আরও বলেন, দেশের মানুষ এখন এসব ঘটনাকে নিছক দুর্ঘটনা হিসেবে নিচ্ছে না; বরং তারা বিশ্বাস করে এর পেছনে সুপরিকল্পিত চক্রান্ত কাজ করছে।
দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা
বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বলেন, “ফ্যাসিবাদী শক্তির সহযোগীরা দেশের অভ্যন্তরে নৈরাজ্য ও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দিতে সক্রিয়। তারা দেশের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে এবং বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে এইসব অগ্নিকাণ্ড ঘটাচ্ছে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শত্রুরা আজও আমাদের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার—বাংলাদেশকে আবারও অরাজকতার দিকে ঠেলে দেওয়া।”
ফখরুল বলেন, এই ধরনের কর্মকাণ্ড প্রতিহত করতে হলে জনগণকেই সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কারণ, রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে থাকা সংস্থাগুলোর সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও এসব ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না।
তদন্ত দাবি ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার ঘাটতি
মির্জা ফখরুল বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুনের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “অগ্নিকাণ্ডের পরপরই দেখা যায়, পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জাম না থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে সময় লেগে যায়। এতে ক্ষয়ক্ষতি আরও বেড়ে যায়। দেশের বড় বড় স্থাপনায় অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থার দুর্বলতা এখন ভয়াবহ আকার নিয়েছে।”
বিএনপি মহাসচিবের মতে, প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনায় অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষিত কর্মী নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। তিনি এ ব্যাপারে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও জনগণের দায়িত্ব
মির্জা ফখরুল তার বিবৃতিতে বলেন, “গত বছরের গণঅভ্যুত্থানের পর দেশ এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে। কিন্তু সেই সাফল্যকে ব্যর্থ করতে স্বৈরাচারী শক্তি এখনো সক্রিয়। তারা নতুন নতুন কৌশলে জনমনে ভীতি সৃষ্টি করতে চায়।”
তিনি মনে করেন, দেশের মানুষকে এখন আগের চেয়ে বেশি সচেতন হতে হবে, কারণ এই ধরনের ঘটনা গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে থামানোর চেষ্টা।
তার আহ্বান, “জাতির স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।”
তদন্ত ও সচেতনতার আহ্বান
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শেষ পর্যন্ত বলেন, “এই অগ্নিকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত না হলে সত্য কখনো প্রকাশ পাবে না। তাই এখনই কার্যকর তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে এবং জনগণকেও সতর্ক থাকতে হবে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “যদি এই ধারাবাহিক অগ্নিকাণ্ডের পেছনে ষড়যন্ত্র থাকে, তবে তা জাতির নিরাপত্তা ও ভবিষ্যতের জন্য ভয়াবহ হুমকি হতে পারে।”
পরিস্থিতি আরও জটিল হওয়ার আগে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
এম আর এম – ১৮২৯,Signalbd.com