
ভারতের হায়দরাবাদের সাংসদ এবং অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম) প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসি পাকিস্তানের প্রতি তীব্র হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি সম্প্রতি জানিয়েছেন, পাকিস্তান যদি ভারতের প্রতি হুমকি প্রদর্শন করে, তবে ভারত তার প্রতিক্রিয়া দেখাতে কোনো দ্বিধা করবে না। ওয়াইসি আরও উল্লেখ করেছেন, ভারতের কাছে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে, এবং দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।
পাকিস্তানের হুমকির পর ওয়াইসির প্রতিক্রিয়া
ওয়াইসি ভারতের সুপারসনিক দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্রহ্মসের কথা উল্লেখ করে বলেন, “আমাদের কাছে ব্রহ্মস আছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের এই ধরনের হুমকি অমূলক। এমন ধরনের বক্তব্য ভারতের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না।” তিনি আরও বলেন, “সরকার সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত রেখেছে। আপনার পথ সংশোধন করার পরিবর্তে, আমাদের হুমকি দিচ্ছেন। এই ধরনের হুমকি কাজে আসবে না। যথেষ্ট হয়েছে।”
পাকিস্তানের সাম্প্রতিক বক্তব্য
সম্প্রতি ইসলামাবাদে এক অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বলেন, “শত্রু ভারত আমাদের এক ফোঁটা পানিও কেড়ে নিতে পারবে না। যদি তারা এমন পদক্ষেপের চেষ্টা করে, আমরা এমন শিক্ষা দেব যা তারা ভুলতে পারবে না।” তিনি আরও জানান যে, আন্তর্জাতিক চুক্তির অধীনে পাকিস্তান তার অধিকারের সাথে আপস করবে না। পাকিস্তানি সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরসহ দেশের অন্যান্য নেতৃত্বের উপস্থিতিতে তিনি এই মন্তব্য করেন।
ভারতের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা ও প্রতিক্রিয়া
ওয়াইসি বলেন, ভারতের কাছে প্রয়োজনীয় সব সামরিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা রয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, ভারত একাধিকবার চরম ধৈর্য দেখিয়েছে, এমনকি ভয়াবহ উসকানির পরও। পেহেলগামে হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হওয়ার ঘটনা উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন তিনি। তিনি বলেন, “এক নববিবাহিতা বিয়ের সপ্তম দিনেই বিধবা হয়েছেন, অন্য একজন মাত্র দুই মাস আগে বিয়ে করেছিলেন—তিনি তার স্বামীকে হারিয়েছেন। এই হত্যাযজ্ঞের মানবিক দিকটা অনুধাবন করা জরুরি।”
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সন্ত্রাসবিরোধী নীতি
ওয়াইসি আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্তানকে ফের এফএটিএফ-এর ধূসর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের অর্থায়নে জড়িত রয়েছে। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ছাড়া এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়।” তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক পার্থক্য থাকলেও দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে ভারত ঐক্যবদ্ধ।
ভারতের সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল
ওয়াইসি বর্তমানে বিজেপি এমপি বিজয়ন্ত পাণ্ডার নেতৃত্বাধীন ভারতের সর্বদলীয় প্রতিনিধি দলের সদস্য। এই দলটি সৌদি আরব, কুয়েত, বাহরাইন এবং আলজেরিয়ার নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিচ্ছে। দলের মূল লক্ষ্য ২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল পেহেলগাম হামলার পর ভারতের প্রতিক্রিয়া ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো সহনশীলতা নীতি’ তুলে ধরা।
পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ওয়াইসির এই বক্তব্য শুধুমাত্র রাজনৈতিক হুঁশিয়ারি নয়, এটি ভারতের সামরিক ও কূটনৈতিক শক্তি প্রদর্শনেরও একটি মাধ্যম। ভারত নিজস্ব প্রতিরক্ষা সক্ষমতা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে পাকিস্তান থেকে আসা হুমকি মোকাবিলায় দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে।
ভবিষ্যতের প্রভাব
বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তান যদি একই রকম হুমকি প্রদর্শন চালায়, ভারতের প্রতিক্রিয়া আরও কঠোর হতে পারে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও সন্ত্রাসবাদের ক্ষেত্রে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে পারে। এই পরিস্থিতি ভবিষ্যতে দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক মানচিত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
এম আর এম – ০৮৪৯, Signalbd.com