
রোববার (১০ আগস্ট) রাজধানীর বিমানবন্দর রেলস্টেশনে এক চীনা নাগরিকের মোবাইল ফোন হারানোর পর তার আকুতি ও আর্তনাদের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে। মোবাইল ফোন হারানো ওই ব্যক্তির আকুতি এমন দৃশ্য ধারণ করেছে, যা নানা প্রশ্ন ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। তবে এ ঘটনায় এখনও পর্যন্ত পুলিশে কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা পড়েনি বলে জানিয়েছেন ঢাকা রেলওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন।
ঘটনা ও পুলিশের বক্তব্য
বিমানবন্দর রেলস্টেশনে মোবাইল ফোন হারানো ওই চীনা নাগরিকের আকুতির ভিডিওতে দেখা গেছে, তিনি স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে হাঁটু গেড়ে বসে বেশ অসহায় ও হতাশার সঙ্গে পাশে থাকা কিছু মানুষের উদ্দেশ্যে মোবাইল ফোন ফিরিয়ে দেয়ার জন্য আকুতি জানাচ্ছেন। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর নেটিজেনরা বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন এবং পুলিশের প্রতি দ্রুত কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
ঢাকা রেলওয়ে পুলিশের ওসি জয়নাল আবেদীন জানান, ওই চীনা নাগরিক মূলত ট্রেনের ছাদে উঠেই ভ্লগ করার কাজ করতেন। তাকে আগে থেকেই এই ধরনের কাজ না করার জন্য সতর্ক করা হয়েছে। শনিবার তিনি ট্রেনের ছাদে চড়ে ভিডিও ধারণের সময় তার মোবাইল ফোন হারিয়ে ফেলেন। পরে ট্রেনের নিচে নেমে মোবাইল ফোন ফিরে পেতে আকুতি জানান। পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে চোরকে শনাক্তের চেষ্টা করছে। কিন্তু মোবাইল ফোন হারানো ব্যক্তি পুলিশে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ না করায় তদন্তে কিছুটা জটিলতা দেখা দিয়েছে।
ট্রেনের ছাদে ভিডিও ধারণের ঝুঁকি ও সতর্কতা
ঢাকা রেলওয়ে পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বহুবার ট্রেনের ছাদে ওঠার বিপদ ও এর সম্ভাব্য দুর্ঘটনার বিষয়ে সতর্কতা দেওয়া হয়েছে। এর পরও কিছু ব্যক্তি ভ্লগ বা ভিডিও ধারণের জন্য এ ধরনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করেন, যা আইন ও নিয়মের পরিপন্থী। বিশেষত বিদেশি পর্যটক ও ভ্রমণকারীদের এই বিষয়ে বিশেষ সচেতন হতে বলা হয়।
এ বিষয়ে একজন রেলওয়ে আধিকারিক জানান, ‘ট্রেনের ছাদে ওঠা অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং এটি আইনত নিষিদ্ধ। যদিও অনেক সময় পর্যটকরা বা যাত্রীরা ভিডিওর জন্য এ ধরনের ঝুঁকি নেন, যা তাদের জীবন এবং অন্যদের জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করে।’
সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও নেটিজেনদের মন্তব্য
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, অনেক নেটিজেন মোবাইল ফোন উদ্ধার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, ‘পুলিশকে দ্রুত বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে।’ আবার কেউ বলেছেন, ‘ভ্রমণকারীদের ট্রেনের ছাদে ওঠা বন্ধ করতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।’
একজন কমেন্টে লিখেছেন, ‘যদি পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে।’ অন্য একজন লিখেছেন, ‘ভ্রমণকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের আরও সজাগ হতে হবে।’
ভবিষ্যত পরিকল্পনা ও রেলওয়ের পদক্ষেপ
ঢাকা রেলওয়ে পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই ঘটনার পর থেকে ট্রেন ও স্টেশন এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করার পরিকল্পনা করছে। বিশেষ করে CCTV ক্যামেরার মাধ্যমে মনিটরিং বাড়ানো এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত সচেতনতা বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
ওসি জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আমরা সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে চোরকে শনাক্তের চেষ্টা করছি। পাশাপাশি স্টেশন ও ট্রেনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করার পরিকল্পনা রয়েছে। যাত্রীরা যেন নিরাপদে তাদের যাত্রা সম্পন্ন করতে পারেন, সে দিকে আমরা বিশেষ নজর দেব।’
পর্যালোচনা: পর্যটক ও যাত্রীদের নিরাপত্তা গুরুত্ব
বাংলাদেশে পর্যটন ও রেল যাত্রার প্রসারে বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ছে। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অন্যতম দায়িত্ব। ট্রেনের ছাদে ওঠা বা অনিরাপদ আচরণ পর্যটক ও সাধারণ যাত্রীদের জন্য ঝুঁকি বাড়ায়। তাই এ ধরনের আচরণ রোধে কার্যকর আইন প্রয়োগ এবং সচেতনতা জরুরি।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ‘পর্যটক ও যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারী ও বেসরকারি পর্যায়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ, প্রচারণা এবং মনিটরিং প্রয়োজন।’
সারসংক্ষেপ
বিমানবন্দর রেলস্টেশনে মোবাইল ফোন হারিয়ে এক চীনা নাগরিকের আকুতির ভিডিও ভাইরাল হলেও, এখনও পুলিশে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ না থাকায় তদন্তে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে পুলিশ ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে নিয়েছে এবং নিরাপত্তা জোরদার করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
আগামী দিনগুলোতে ট্রেন যাত্রার নিরাপত্তা আরও উন্নত করার জন্য কী পদক্ষেপ নেয়া হবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে এটি স্পষ্ট যে, নিরাপত্তা ও সচেতনতা ছাড়া এই ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধ করা কঠিন।
বিশ্লেষকদের মতে, ‘পর্যটক ও যাত্রীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করাই সবার প্রত্যাশা।’
এম আর এম – ০৭৯০, Signalbd.com