সরকারি খরচে বিদেশ সফর বন্ধ, কেনা যাবে না গাড়ি

চলতি অর্থবছরে ব্যয় সাশ্রয়ের লক্ষ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিদেশ ভ্রমণ, সেমিনার, ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ ও নতুন গাড়ি কেনা আপাতত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে। ব্যতিক্রম কেবল বিশেষ অনুমোদনের ক্ষেত্রেই।
কী ঘোষণা এলো অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে?
সরকারি ব্যয় কমাতে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়েছে, এখন থেকে নতুন করে সরকারি দপ্তরগুলো কোনো গাড়ি কিনতে পারবে না এবং সরকারি খরচে বিদেশ সফরও সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ থাকবে। উন্নয়ন ও পরিচালন বাজেট — উভয় ক্ষেত্রেই এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, সব ধরনের সেমিনার, সিম্পোজিয়াম এবং কর্মশালায় সরকারি অর্থায়নে অংশগ্রহণ বন্ধ থাকবে। এই সিদ্ধান্ত সরকারের কৃচ্ছ্র নীতির একটি অংশ।
কেন এমন সিদ্ধান্ত?
বর্তমান আর্থিক বাস্তবতায় সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতির অংশ হিসেবে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিশ্বজুড়ে চলমান অর্থনৈতিক চাপে বাংলাদেশও ব্যয় ব্যবস্থাপনায় আরও সচেতন হওয়ার দিকে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ ও বিলাসবহুল ব্যয় কমানো এখন সময়ের দাবি। বিশেষ করে রাজস্ব ঘাটতি, আমদানি খরচ বৃদ্ধি এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চাপে পড়ায় সরকারের কৌশলগত এই সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত ও প্রয়োজনীয়।
নির্দেশনার মূল দিকগুলো: কী কী বন্ধ থাকছে?
১. সরকারি খরচে গাড়ি কেনা পুরোপুরি বন্ধ:
- পরিচালন বাজেট থেকে গাড়ি কেনার জন্য কোনো খরচ করা যাবে না।
- ১০ বছরের বেশি পুরনো টিওএন্ডইভুক্ত গাড়ি প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের অনুমতি নিয়ে ব্যয় করা যাবে।
২. বিদেশ সফর ও কর্মশালায় অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ:
- সরকারি অর্থায়নে কোনো ধরনের বিদেশ ভ্রমণ, সেমিনার, কর্মশালা বা সিম্পোজিয়ামে অংশ নেওয়া যাবে না।
- ব্যতিক্রম কেবল বৃত্তি বা বিদেশি সংস্থার অর্থায়নে মাস্টার্স/পিএইচডি ও পেশাগত প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে।
৩. অবকাঠামো নির্মাণেও কড়াকড়ি:
- শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি ব্যতীত অন্য খাতে নতুন ভবন নির্মাণ নিষিদ্ধ।
- চলমান নির্মাণকাজ ৫০% অগ্রগতি হলে অর্থ বিভাগের অনুমোদন সাপেক্ষে কাজ চালিয়ে যাওয়া যাবে।
৪. ভূমি অধিগ্রহণ ও থোক বরাদ্দেও নিষেধাজ্ঞা:
- ভূমি অধিগ্রহণ এবং থোক বরাদ্দ খাতে খরচ বন্ধ থাকবে।
- উন্নয়ন বাজেট থেকেও কোনো যানবাহন কেনা যাবে না।
কাদের ওপর প্রভাব পড়বে?
এই সিদ্ধান্তের ফলে সরকারি কর্মচারীদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, বিদেশ সফর এবং অফিসিয়াল যানবাহন কেনার সুযোগ আপাতত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া যেসব মন্ত্রণালয় অবকাঠামো নির্মাণে ব্যস্ত ছিল, তাদেরও প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হতে পারে।
বিশেষ করে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা এবং সরকারি প্রকৌশল বিভাগ এই সিদ্ধান্তে সরাসরি প্রভাবিত হবে।
কোন ক্ষেত্রে অনুমোদন মিলতে পারে?
সরকারি অর্থায়নে বিদেশ সফর পুরোপুরি নিষিদ্ধ হলেও কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে শিথিলতা রয়েছে:
- বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় বা আন্তর্জাতিক সংস্থার বৃত্তি/ফেলোশিপে মাস্টার্স বা পিএইচডি কোর্সে অংশ নিতে বাধা নেই।
- পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত প্রশিক্ষণে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনসাপেক্ষে বিদেশ ভ্রমণ করা যাবে।
সব ধরনের বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের ২০২৪ সালের ৯ ডিসেম্বরের পরিপত্র অনুসরণ বাধ্যতামূলক থাকবে।
এই সিদ্ধান্তের ইতিবাচক দিক কী?
বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপ সরকারি খরচ কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। একইসাথে বৈদেশিক মুদ্রা অপচয় রোধ হবে এবং অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাতে অর্থ বরাদ্দের সক্ষমতা বাড়বে।
সরকার যদি কঠোরভাবে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারে, তাহলে আগামী বছরগুলোতে দেশের আর্থিক ভারসাম্য রক্ষায় এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
“সরকারি ব্যয় সীমিত করা এখন সময়ের দাবি। বিদেশ সফর ও নতুন গাড়ি কেনা বন্ধ করার মাধ্যমে সরকারের দায়বদ্ধতা আরও বাড়বে।” — একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা
সামনে কী হতে পারে?
সরকারের এমন কড়াকড়ি নির্দেশনার বাস্তবায়ন কতটা কার্যকর হয়, তা এখন দেখার বিষয়। তবে চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশও যদি কৃচ্ছ্র নীতিকে গুরুত্ব দেয়, তাহলে এটি ভবিষ্যতের জন্য একটি দৃঢ় ভিত্তি তৈরি করতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং ধারাবাহিকতা রক্ষা করা এখন সবচেয়ে জরুরি।
এম আর এম – ০২৫৮, Signalbd.com