দেশে আবারও করোনার হানা, একদিনে মৃত্যু ২, শনাক্ত ৭

গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে আরও দুইজনের। একই সময়ে নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ৭ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে উঠে এসেছে চলতি বছরের উদ্বেগজনক চিত্র।
দেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে ৭ জনের শরীরে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ১৮১টি নমুনা পরীক্ষার ভিত্তিতে এই ফলাফল পাওয়া গেছে।
ঘটনার বিস্তারিত
শনিবার (২৮ জুন) সকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২৪ ঘণ্টায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন পুরুষ ও একজন নারী।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ১৮১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে শনাক্তের হার ৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
এই সময়কালে শনাক্ত ৭ জনের মধ্যে ঢাকায় ৪ জন, চট্টগ্রামে ২ জন এবং ময়মনসিংহে ১ জন।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, মৃতদের মধ্যে একজনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছর, অপরজনের বয়স ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে।
করোনা পরিস্থিতির সাম্প্রতিক চিত্র
২০২০ সালে প্রথমবার বাংলাদেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর থেকে একাধিক ঢেউ দেখা গেছে। ২০২১ ও ২০২২ সালে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। সেই তুলনায় বর্তমানে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার তুলনামূলকভাবে কম হলেও এখনো ঝুঁকি শেষ হয়ে যায়নি।
চলতি বছরে এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। শনাক্ত হয়েছে মোট ৫৩৫ জন। এর মধ্যে নারীর সংখ্যা ১২ জন, আর পুরুষ ১০ জন।
প্রভাব ও জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শনাক্তের সংখ্যা কম হলেও মৃত্যুর হার উদ্বেগজনকভাবে বিদ্যমান থাকায় সতর্কতা অবলম্বন জরুরি। হঠাৎ করে শনাক্তের সংখ্যা কমে গেলে অনেকেই মাস্ক ব্যবহার, সামাজিক দূরত্ব বা স্বাস্থ্যবিধি মানার অভ্যাস বাদ দিয়ে দেন, যা পরবর্তী সময় বিপদের কারণ হতে পারে।
চট্টগ্রামের এক বাসিন্দা জানান, “বর্তমানে আমরা অনেকটাই নির্ভার ছিলাম। কিন্তু আবার যদি মৃত্যু বাড়ে, তাহলে তো চিন্তার বিষয়।”
পরিসংখ্যান ও তুলনা
২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে মৃত্যুহার ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ। শনাক্তের হার গত ২৪ ঘণ্টায় ছিল ৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।
বিশ্লেষণ বলছে, তুলনামূলকভাবে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক কমে এসেছে। ফলে প্রকৃত সংক্রমণের হার আরও বেশি হতে পারে বলে ধারণা করছেন স্বাস্থ্য বিশ্লেষকরা।
বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞ মতামত
স্বাস্থ্যনীতি গবেষক ডা. মাহবুব রশীদ বলেন, “যে কোনো সময় করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালীন ও বর্ষাকালে ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যায়। তাই আমরা সতর্ক না থাকলে পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “টিকাদান কর্মসূচি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে। সেজন্য আবারও সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করা উচিত।”
সারসংক্ষেপঃ
করোনার সংক্রমণ কিছুটা কমে এলেও একেবারে বিলীন হয়ে যায়নি। দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, যদি এখনই সতর্ক না হওয়া হয়, তাহলে আগামী দিনে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। তাই প্রশ্ন রয়ে যায়—আমরা কি আবারও পুরনো ভুলের পুনরাবৃত্তি করবো?
এম আর এম – ০০৮৬, Signalbd.com