পবিত্র আশুরা পালিত হবে ৬ জুলাই

বাংলাদেশের আকাশে ১৪৪৭ হিজরি সনের মহররম মাসের চাঁদ দেখা গেছে। ফলে আগামী ৬ জুলাই, রোববার পালিত হবে মুসলিম বিশ্বের অন্যতম পবিত্র দিবস আশুরা। বায়তুল মুকাররমে অনুষ্ঠিত সভায় এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
ঘোষণার বিস্তারিত (চাঁদ দেখা ও সিদ্ধান্ত):
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) সন্ধ্যায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররমে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।
সভায় উপস্থিত প্রতিনিধিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের আকাশে ১৪৪৭ হিজরি সনের মহররম মাসের চাঁদ দেখা গেছে। তাই আগামীকাল শুক্রবার (২৭ জুন) থেকে মহররম মাস গণনা শুরু হবে। সে অনুযায়ী আগামী ১০ মহররম অর্থাৎ ৬ জুলাই রোববার পালিত হবে আশুরা।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব এ কে এম আফতাব হোসেন প্রামাণিক, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আব্দুস ছালাম খান, ওয়াকফ প্রশাসক মো. নূর-ই-আলম, আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. রাশেদুজ্জামান, এবং মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ শহিদুল ইসলাম।
আশুরার তাৎপর্য ও ইতিহাস
আশুরা শব্দটি আরবি ‘আশারা’ থেকে এসেছে, যার অর্থ ‘দশ’। এটি হিজরি ক্যালেন্ডারের প্রথম মাস মহররমের দশম দিন। ইসলামি ইতিহাসে এ দিনটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ হিজরি ৬১ সনের ১০ মহররম কারবালার প্রান্তরে মহানবী (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) শহীদ হন।
ইমাম হোসাইনের আত্মত্যাগ সত্য, ন্যায় ও মানবতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। কারবালার এই বেদনাদায়ক ঘটনা মুসলিম বিশ্বে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের এক অনন্য উদাহরণ হয়ে আছে।
ধর্মীয় ও সামাজিক প্রেক্ষাপট:
বাংলাদেশে আশুরা দিনটি শিয়া সম্প্রদায়ের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। তারা দিনব্যাপী মিছিল, দোয়া মাহফিল, এবং কারবালার শহীদদের স্মরণে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে। তবে সুন্নি সম্প্রদায়ের মধ্যেও দিনটি রোজা রাখা এবং নফল নামাজ আদায়ের মাধ্যমে পবিত্রভাবে পালন করা হয়।
ধর্মীয় বিশেষজ্ঞদের মতে, আশুরা শুধু শোকের দিন নয়, বরং তা শিক্ষা, ত্যাগ ও মানবিক মূল্যবোধের প্রতীক।
জনপ্রশাসন ও সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা:
প্রতিবছরের মতো এবারও পবিত্র আশুরা উপলক্ষে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে। ঢাকায় তাজিয়া মিছিল ও অন্যান্য ধর্মীয় জমায়েত শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার জন্য পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তৎপর থাকবে বলে জানা গেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ জানিয়েছে, তাজিয়া মিছিলে নির্দিষ্ট রুট ও সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। প্রয়োজনীয় মেডিকেল সহায়তা ও অগ্নিনির্বাপক ইউনিট প্রস্তুত থাকবে।
বিশেষজ্ঞ মতামত ও ধর্মীয় মূল্যায়ন
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “আশুরা শুধু মুসলিম ইতিহাসের বেদনাদায়ক অধ্যায় নয়, বরং এটি নৈতিক শক্তি ও আদর্শের প্রতীক। ইমাম হোসাইনের জীবন ও শাহাদাত আমাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর অনুপ্রেরণা দেয়।”
একজন ইসলামি চিন্তাবিদ বলেন, “এই দিনটি সবার জন্য আত্মশুদ্ধি, আত্মত্যাগ ও মানবিকতা চর্চার শিক্ষা বহন করে।”
উপসংহার:
পবিত্র আশুরা শুধু একটি ধর্মীয় দিন নয়, বরং তা ইতিহাস, ন্যায়বিচার এবং আত্মত্যাগের মহিমান্বিত স্মৃতি বহন করে। এবারের আশুরা ৬ জুলাই পালিত হবে, যা মুসলমানদের জন্য এক গভীর ভাবনা, স্মরণ ও প্রার্থনার দিন হবে।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, আশুরার মূল বার্তাকে সমাজে ছড়িয়ে দিতে পারলে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও মানবিক মূল্যবোধ আরও সুদৃঢ় হবে।
এম আর এম – ০০৬৯, Signalbd.com