এইচএসসি পরীক্ষা শুরু কাল, অংশ নিচ্ছে ১২ লাখ ৫১ হাজার পরীক্ষার্থী

আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় শুরু হচ্ছে ২০২৫ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। ২ হাজার ৭৯৭টি কেন্দ্রে অংশ নিচ্ছেন সারা দেশের প্রায় সাড়ে ১২ লাখ শিক্ষার্থী। পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে নেয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা, বন্ধ থাকবে কোচিং সেন্টার।
শুরু হচ্ছে এই বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা
২০২৫ সালের উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আগামীকাল বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন। সকাল ১০টায় বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষার মাধ্যমে শুরু হবে লিখিত পরীক্ষা, যা চলবে ১০ আগস্ট পর্যন্ত। লিখিত পরীক্ষার পর শুরু হবে ব্যবহারিক অংশ। এ বছর সারা দেশের ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছেন এ পরীক্ষায়।
পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে, এবারই তিন বছরে সর্বনিম্ন
গত বছরের তুলনায় এ বছর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ২০২৪ সালে মোট ১৩ লাখ ৩২ হাজার ৯৯৩ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল, সেখানে এ বছর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে প্রায় ৮১ হাজার। এটি গত তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অংশ নিচ্ছে ১০ লাখ ৫৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে আলিম পরীক্ষার্থী ৮৬ হাজারের কিছু বেশি এবং বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অংশ নিচ্ছে ১ লাখ ৯ হাজারের মতো শিক্ষার্থী।
৪ লাখের বেশি শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করেও অংশ নিচ্ছে না
উল্লেখযোগ্য তথ্য হলো—প্রায় সাড়ে চার লাখ শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেও পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে না। এই হার পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় বেশ বড়। শিক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমে যাওয়ার ইঙ্গিত হতে পারে।
পরীক্ষা কেন্দ্র ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা
২০২৫ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা সারা দেশের মোট ২,৭৯৭টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পরীক্ষার সুষ্ঠু ও নকলমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আগামী ১৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে।
পরীক্ষাকেন্দ্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ, আনসার বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবে। পরীক্ষার দিন সকালে নির্ধারিত সেট অনুযায়ী খাম খুলে প্রশ্ন বিতরণ করা হবে এবং প্রশ্নফাঁস প্রতিরোধে কেন্দ্রের বাইরে জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে।
শিক্ষাবোর্ডের বিশেষ নির্দেশনা
শিক্ষার্থীদের জন্য এবার ১০টি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা জারি করেছে শিক্ষা বোর্ড। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হলো:
- পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে উপস্থিত হতে হবে
- ওএমআর ফর্ম সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে
- পরীক্ষার হলে মোবাইল ফোন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ
- উত্তরপত্র ভাঁজ করা যাবে না
- কেবল সাধারণ সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যাবে
ঢাকা বোর্ড ৩৩ দফা নির্দেশনা দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রতি ২০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন কক্ষ পরিদর্শক থাকবে, তিন ফুট দূরত্বে বসার ব্যবস্থা, প্রশ্নপত্র আনার সময় পুলিশের উপস্থিতি নিশ্চিত করা এবং কেন্দ্রে সিসিটিভি স্থাপন বাধ্যতামূলক।
স্বাস্থ্যবিধি ও আবহাওয়াজনিত প্রস্তুতি
বর্ষাকালীন সময়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাট এড়াতে সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ অফিসগুলোকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া কেন্দ্রে প্রবেশের সময় পরীক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট সবার জন্য মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
পরবর্তী ব্যাচের জন্য পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে পরীক্ষা
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) জানিয়েছে, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা ২০২৬ সালে পূর্ণাঙ্গ সিলেবাস ও পূর্ণ নম্বরের ভিত্তিতে পরীক্ষা দেবে। এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আগের সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের ধারা থেকে বের হয়ে আসছে শিক্ষা বোর্ড।
উপসংহার
২০২৫ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ গঠনের একটি ধাপ নয়, বরং দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সক্ষমতা ও প্রস্তুতিরও একটি বড় পরীক্ষা। প্রশ্নফাঁস, অনিয়ম ও অনুপস্থিতির মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সফলভাবে এ পরীক্ষা আয়োজন করতে পারলে তা হবে দেশের শিক্ষা খাতের জন্য একটি ইতিবাচক অগ্রগতি।
তবে, প্রশ্ন রয়ে যায়—চার লাখের বেশি পরীক্ষার্থীর অনুপস্থিতি কি কেবল ব্যক্তিগত কারণ, না কি বড় কোনো কাঠামোগত সংকেত?
এম আর এম – ০০৫২, Signalbd.com