
দেশের স্বর্ণবাজারে আবারও মূল্যহ্রাস। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম ভরিতে কমেছে ১,৬৬৮ টাকা। আজ ২৫ জুন থেকে কার্যকর হচ্ছে নতুন দাম।
স্বর্ণের দামে বড় পরিবর্তন
দেশের স্বর্ণপ্রেমীদের জন্য সুখবর। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) আবারও স্বর্ণের দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণে কমেছে ১ হাজার ৬৬৮ টাকা।
এতে করে এখন প্রতি ভরি ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭২ হাজার ৮৬০ টাকা। আগের মূল্য ছিল ১ লাখ ৭৪ হাজার ৫২৮ টাকা।
বাজুসের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার (২৪ জুন) রাতে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। নতুন মূল্য বুধবার (২৫ জুন) থেকে সারা দেশে কার্যকর হবে।
নতুন দামের তালিকা এক নজরে
বাজুসের ঘোষণায় ২২ ক্যারেটসহ অন্যান্য মানের স্বর্ণের দামও হালনাগাদ করা হয়েছে। দেখে নেওয়া যাক বর্তমান দামসমূহ:
ক্যারেট | দাম (প্রতি ভরি) |
---|---|
২২ ক্যারেট | ১,৭২,৮৬০ টাকা |
২১ ক্যারেট | ১,৬৪,৯৯৯ টাকা |
১৮ ক্যারেট | ১,৪১,৪২৬ টাকা |
সনাতন পদ্ধতি | ১,১৭,০০২ টাকা |
এই দামগুলো প্রতি ভরি ১১.৬৬৪ গ্রাম স্বর্ণের জন্য নির্ধারিত।
পূর্বের মূল্য এবং পরিবর্তনের হিসাব
মাত্র কয়েকদিন আগেই, অর্থাৎ ১৪ জুন, স্বর্ণের দাম বেড়েছিল। সে সময় ২২ ক্যারেটের ভরিতে ২ হাজার ১৮২ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ৭৪ হাজার ৫২৮ টাকা। একইভাবে অন্যান্য ক্যারেটের স্বর্ণেও দাম বাড়ানো হয়:
- ২১ ক্যারেট: ১ লাখ ৬৬ হাজার ৫৯৭ টাকা
- ১৮ ক্যারেট: ১ লাখ ৪২ হাজার ৮০২ টাকা
- সনাতন পদ্ধতি: ১ লাখ ১৮ হাজার ১৬৮ টাকা
এখন আবার স্বর্ণের দাম কমে এসেছে আগের চেয়ে নিচে, যা ক্রেতাদের জন্য কিছুটা স্বস্তির কারণ।
কেন কমলো স্বর্ণের দাম?
বাজুস জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের মূল্যে সাম্প্রতিক কিছু পরিবর্তন এসেছে। এছাড়া, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্য হ্রাস পেয়েছে। এসব পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চাপ, ডলারের মূল্য ওঠানামা, ও আন্তর্জাতিক স্বর্ণবাজারে অস্থিরতা – এসব বিষয়ও দেশের স্বর্ণবাজারে প্রভাব ফেলছে।
রূপার দামে কোনো পরিবর্তন হয়নি
যদিও স্বর্ণের দাম কমেছে, তবে রূপার দামে কোনো পরিবর্তন আসেনি। এখনও পূর্বের ঘোষিত দাম অনুযায়ী রূপা বিক্রি হচ্ছে। রূপার বর্তমান মূল্য (প্রতি ভরি):
- ২২ ক্যারেট রূপা: ২,৮১১ টাকা
- ২১ ক্যারেট রূপা: ২,৬৮৩ টাকা
- ১৮ ক্যারেট রূপা: ২,২৯৮ টাকা
- সনাতন পদ্ধতি: ১,৭২৬ টাকা
বাজুস জানিয়েছে, রূপার আন্তর্জাতিক বাজারে তেমন কোন পরিবর্তন না থাকায় দাম অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
বাজারে প্রভাব ও ভোক্তাদের প্রতিক্রিয়া
নতুন মূল্য কার্যকর হওয়ার পর স্বর্ণের দোকানগুলোতে কিছুটা চাপ লক্ষ্য করা গেছে। অনেকেই দাম কমার খবরে আগেই স্বর্ণ কিনে নিতে দোকানে ছুটে যাচ্ছেন।
রাজধানীর একটি জুয়েলারি দোকানের বিক্রয়কর্মী জানান, “যখনই দাম কমে, তখন ক্রেতাদের আগ্রহ বেড়ে যায়। বিশেষ করে বিয়ের মৌসুমে এই পরিবর্তন অনেক গুরুত্বপূর্ণ।”
এছাড়াও, সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। অনেক ভোক্তা মনে করছেন, বাজার স্থিতিশীল থাকলে দাম আরও কমতে পারে।
বাজার বিশ্লেষকরা কী বলছেন?
স্বর্ণবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারের ওঠানামা ছাড়াও ডলারের দর, আমদানির খরচ, ও সরকারের নীতিমালাও স্বর্ণের দামের ওপর প্রভাব ফেলে।
একজন অর্থনীতি বিশ্লেষক বলেন, “বাংলাদেশে স্বর্ণ একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ও বিনিয়োগ উপকরণ। দাম কমানো স্বর্ণের চাহিদা বাড়াতে পারে, তবে আন্তর্জাতিক বাজারে স্থিরতা না আসা পর্যন্ত দামের ওঠানামা চলতেই থাকবে।”
সামনের দিনে কী আশা করা যায়?
বর্তমানে বাজারে যে পরিবর্তন এসেছে, তা সাধারণ ক্রেতা ও স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্বস্তি এনেছে। তবে দাম স্থিতিশীল থাকবে কিনা, তা নির্ভর করবে আন্তর্জাতিক স্বর্ণবাজারের গতিপ্রকৃতি ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা অনুযায়ী।
বিশ্লেষকরা বলছেন, “যদি বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম আরও কমে, তাহলে দেশের বাজারেও আমরা তার প্রভাব দেখতে পারি।”
শেষ কথা:
স্বর্ণের দাম কমার এই ঘোষণা নিঃসন্দেহে স্বর্ণক্রেতাদের জন্য একটি ভালো খবর। তবে বাজারের দোলাচল ও বৈশ্বিক অর্থনীতি সবসময় নজরে রাখতে হবে। আপনি যদি স্বর্ণ কিনতে চান, তবে এখনই হতে পারে সময়। তবে ভবিষ্যতের দামের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে সচেতন থাকাও জরুরি।
এম আর এম – ০০৩৮, Signalbd.com