ইইউর বাজারে বাংলাদেশর তৈরি পোশাক রপ্তানি চীনের কাছে পৌঁছালো

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন শীর্ষে থাকা চীনের কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। চলতি বছরের প্রথম চার মাসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি চীনের তুলনায় মাত্র ৩২ কোটি ডলার কম হয়েছে। এই তথ্য ইইউর পরিসংখ্যান কার্যালয় ইউরোস্ট্যাট প্রকাশ করেছে।
ইইউর তৈরি পোশাক আমদানি বেড়েছে ১৪ শতাংশ
২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়ন মোট ৩,২৪৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বাজারে চীনের রপ্তানি মূল্য দাঁড়িয়েছে ৮৩৯ কোটি ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ২১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশের রপ্তানি মূল্য হয়েছে ৮০৭ কোটি ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ২৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০২৩-২৪ সালে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি চীনের চেয়ে বেশি
২০২৩ সালে ইইউর বাজারে চীনের তৈরি পোশাক রপ্তানি ছিল ২,৫৪১ কোটি ডলার এবং বাংলাদেশের ছিল ১,৮৮৬ কোটি ডলার। ২০২৪ সালে চীনের রপ্তানি ২.৬১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ২,৬০৭ কোটি ডলারে, যেখানে বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়ে হয় ১,৯৭৮ কোটি ডলার, যা ৪.৮৬ শতাংশ বৃদ্ধির পরিচায়ক।
এতে স্পষ্ট যে, চীনের তুলনায় অর্থের দিক থেকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি এখনও পিছিয়ে থাকলেও বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার অনেক বেশি।
পরিমাণে চীনকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ
আর্থিক দিক থেকে চীন এখনও সামান্য এগিয়ে থাকলেও পরিমাণের ভিত্তিতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ইইউর বাজারে চীনকে ছাড়িয়ে গেছে। ২০২২ সালে বাংলাদেশ ১৩৩ কোটি কেজি কাপড়ের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে, চীনের পরিমাণ ছিল ১৩১ কোটি কেজি। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে বাংলাদেশ ৪৮ কোটি কেজি ও চীন ৩৮ কোটি কেজি কাপড়ের সমপরিমাণ তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে।
ব্যবসায়ীদের আশা: বাংলাদেশ শীঘ্রই শীর্ষে উঠবে
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, “ইইউর বাজারে বাংলাদেশ এখন ভালো প্রবৃদ্ধি করছে। এ ধারা বজায় থাকলে শিগগিরই চীনকে টপকে বাংলাদেশ শীর্ষে উঠে আসতে পারে।”
ইইউর বাজারের অন্যান্য প্রধান রপ্তানিকারক দেশ
চীন ও বাংলাদেশের পর ইইউর বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে তুরস্ক, ভারত, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান, মরক্কো, শ্রীলঙ্কা ও ইন্দোনেশিয়া রয়েছে। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে:
- তুরস্কের রপ্তানি হয়েছে ৩১০ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই সময়ে ৫.৪১ শতাংশ কমেছে।
- ভারত রপ্তানি করেছে ২০১ কোটি ডলার, যা ২০.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
- কম্বোডিয়ার রপ্তানি হয়েছে ১৫৬ কোটি ডলার, যা ৩১.৭৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত: উন্নতির ধারা ও বিশ্ববাজারে স্থান
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প দেশের অর্থনীতির অন্যতম মূল স্তম্ভ। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ এবং মান দিন দিন বাড়ছে। দেশের শ্রমিকশক্তি ও শিল্পী দক্ষতার উন্নতির পাশাপাশি সরকারী নীতিমালা এবং বাণিজ্য চুক্তি বাংলাদেশকে বিশ্ববাজারে আরও শক্ত অবস্থানে নিয়ে আসছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নতুন প্রযুক্তি ও উন্নত উৎপাদন প্রক্রিয়া প্রয়োগ, পরিবেশবান্ধব কারখানা, এবং অধিক গুণগতমান নিশ্চিত করাই বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধির মূল চাবিকাঠি। এ ছাড়া, ইউরোপ ও আমেরিকা সেন্ট্রিক বাজারে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং এবং বাজারজাতকরণেও ব্যাপক উন্নতি ঘটেছে।
ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি: চীনকে টপকে বিশ্ববাজারে শীর্ষে বাংলাদেশ?
বিশ্ববাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানির জন্য চীন দীর্ঘদিন ধরে শীর্ষস্থানীয় ছিল। তবে বর্তমান প্রবণতা এবং বাংলাদেশের দ্রুত গতির উন্নয়ন বোঝায়, আগামী কয়েক বছরে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক মূল্যে চীনকে টপকে বিশ্বের শীর্ষ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হতে পারে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, যদি বাংলাদেশ বর্তমান ধারায় নীতিগত উন্নয়ন, দক্ষ শ্রমশক্তি রক্ষা ও পরিবেশগত দায়িত্ব পালন করে যেতে পারে, তবে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে।
- ২০২৫ সালের প্রথম চার মাসে ইইউর বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৮০৭ কোটি ডলার।
- একই সময় চীনের রপ্তানি হয়েছে ৮৩৯ কোটি ডলার।
- বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধি গত বছরের তুলনায় ২৪%, চীনের ২১%।
- পরিমাণে বাংলাদেশ ইইউর বাজারে চীনকে ছাড়িয়ে গেছে।
- অন্যান্য বড় রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে তুরস্ক, ভারত ও কম্বোডিয়ার অবস্থান।
- বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল আশাবাদী, বাংলাদেশ শিগগিরই শীর্ষে উঠবে।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। দীর্ঘ সময় ধরে শ্রমিকদের দক্ষতা, সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ, বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করায় বাংলাদেশ আজ চীনের সঙ্গেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়ে।
এই প্রবণতা বজায় থাকলে, খুব দ্রুত বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানির বিশ্ব মানচিত্রে শীর্ষস্থান দখল করবে।