আঞ্চলিক

গোপালগঞ্জে কারফিউ অব্যাহত থাকবে: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

Advertisement

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ও প্রাণহানির প্রেক্ষিতে জারি করা কারফিউর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এখনো জেলাজুড়ে কঠোর বিধিনিষেধ বলবৎ রয়েছে, যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছে প্রশাসন।

ঘটনাপ্রবাহের বিস্তারিত

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ঘোষিত পদযাত্রা ঘিরে গোপালগঞ্জে সংঘর্ষ, হামলা এবং হতাহতের ঘটনায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এরপর বুধবার (১৬ জুলাই) রাত ৮টা থেকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কারফিউ জারি করা হয়।

প্রাথমিকভাবে কারফিউর সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। কিন্তু পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক নতুন নির্দেশনায় জানায়, কারফিউ শুক্রবার (১৮ জুলাই) বেলা ১১টা পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। এরপর বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল করা হবে। দুপুর ২টার পর আবারও কারফিউ বলবৎ থাকবে এবং তা পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।

সহিংসতার পটভূমি

এনসিপির ঘোষিত কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানাতে গোপালগঞ্জে কয়েক হাজার নেতাকর্মী জড়ো হয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে কিছু উগ্র গোষ্ঠী হামলা চালায়, যার মধ্যে স্থানীয় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে।

দিনভর চলা সংঘর্ষে অন্তত কয়েকজন নিহত হন এবং অনেকেই গুরুতর আহত হন। ঘটনাস্থলে ব্যাপক ভাঙচুর, গাড়ি পোড়ানো এবং উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং সন্ধ্যায় কারফিউ জারি করা হয়।

কারফিউর প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

গোপালগঞ্জে কারফিউ জারির পর পুরো শহরে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়ে। দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, গণপরিবহন — সবই বন্ধ হয়ে যায়। মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছে না, জরুরি প্রয়োজনে বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রেও পুলিশের অনুমতি লাগছে।

সাধারণ জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। কেউ কেউ বলছেন, এতদিন পর গোপালগঞ্জে এমন পরিস্থিতি দেখা গেল যা ২০০১ সালের রাজনৈতিক সহিংসতাকেও ছাড়িয়ে গেছে।

অন্যদিকে, স্থানীয় ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের একাংশ মনে করছেন, কারফিউ দীর্ঘস্থায়ী হলে অর্থনৈতিক ক্ষতি ও শিক্ষাজীবনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

তদন্ত কমিটি ও প্রশাসনের পদক্ষেপ

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ইতোমধ্যে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি। তার সঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের একজন করে অতিরিক্ত সচিব থাকবেন।

এই কমিটিকে পরবর্তী দুই সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে জমা দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও পুলিশ পৃথকভাবে নিজ নিজ তদন্ত শুরু করেছে।

একইসঙ্গে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সেনাবাহিনী মোতায়েন রাখা হয়েছে এবং রাতদিন টহল দেওয়া হচ্ছে যাতে পরিস্থিতি পুনরায় অবনতি না ঘটে।

বিশেষজ্ঞ বিশ্লেষণ

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক রিজওয়ান আহমেদ বলেন, “গোপালগঞ্জের ঘটনাটি রাজনৈতিক বিদ্বেষের চরম পরিণতি। প্রশাসনের দৃঢ় অবস্থান এবং কারফিউ জারির মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া গেছে।”

তিনি আরও বলেন, “তবে দীর্ঘমেয়াদে এর রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব বিশ্লেষণ করে গণতান্ত্রিকভাবে সমাধানের পথ খুঁজে বের করা উচিত।”

“পরিস্থিতি পুনরায় উত্তপ্ত না হয়, সেজন্য কারফিউর সময় বাড়ানো হয়েছে”—স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

সারসংক্ষেপ

গোপালগঞ্জের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতা ও প্রশাসনিক কঠোরতার ফলে পরিস্থিতি আপাতদৃষ্টিতে নিয়ন্ত্রণে এলেও underlying উত্তেজনা এখনো রয়ে গেছে। কারফিউ সাময়িকভাবে বিশৃঙ্খলা ঠেকালেও সমাজ ও রাজনীতিতে এর প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।

প্রশ্ন হচ্ছে, রাজনৈতিক মতপার্থক্য ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষার পাশাপাশি কিভাবে সহিংসতা রোধ করা যায়? সময় এসেছে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার।


এম আর এম – ০৩৮৭, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button