করোনায় আরও ৫ জনের মৃত্যু, নতুন করে শনাক্ত ৩৬

দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি ফের উদ্বেগজনক, সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি ফের নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আরও ৫ জন। একই সময়ে নতুন করে ৩৬ জনের শরীরে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে। এসময়ে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৮০ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টার করোনা পরিস্থিতি: সরকারি হালনাগাদ তথ্য
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রবিবার বিকেলে প্রকাশিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গতকাল শনিবার সকাল ৮টা থেকে আজ রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ৬২১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৬ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। নতুন মৃত্যুর ফলে দেশে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৫১৫ জনে।
মৃতদের মধ্যে চারজন পুরুষ ও একজন নারী ছিলেন। তাদের মধ্যে চারজন বেসরকারি হাসপাতালে এবং একজন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
চলতি বছরের চিত্র: মৃত্যু ও সংক্রমণের পরিসংখ্যান
২০২৫ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনা আক্রান্ত হয়ে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৪৩৩ জন। এই বছর করোনার প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ৫ জুন, এরপর ১৩, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ১৯ ও ২১ জুনেও মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
এছাড়া ২০২০ সালের মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত দেশে মোট ১ কোটি ৫৭ লাখের বেশি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে এবং শনাক্তের হার গড়ে ১৩ দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ। বর্তমানে করোনাভাইরাসে মোট শনাক্তের সংখ্যা ২০ লাখ ৫১ হাজার ৯৭৮ জন।
করোনায় মৃতদের বয়স ও অঞ্চলভিত্তিক তথ্য
গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৫ জনের বয়স ছিল বৈচিত্র্যময়। তাদের মধ্যে একজন ১১ থেকে ২০ বছর বয়সী, একজন ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী, একজন ৬১ থেকে ৭০ বছর বয়সী, একজন ৭১ থেকে ৮০ বছর বয়সী এবং একজন ৯১ থেকে ১০০ বছর বয়সী ছিলেন। এদের মধ্যে তিনজন চট্টগ্রাম বিভাগের, একজন ঢাকা বিভাগের এবং একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।
করোনার নতুন উত্থান: বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দেশে করোনার নতুন ঢেউ শুরুর আশঙ্কা অমূলক নয়। যেহেতু শনাক্তের হার ৫ শতাংশের ওপরে উঠছে, তাই জনসাধারণকে স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। বিশেষ করে বয়স্ক ও শিশুদের জন্য সতর্কতা অবলম্বন জরুরি বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
“পরিস্থিতি যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে যদি স্বাস্থ্যবিধি না মানা হয়, তাহলে সংক্রমণ আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে”— জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. সাইফুল ইসলাম।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা ও প্রস্তুতি
করোনাভাইরাসের নতুন সংক্রমণ ঠেকাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ইতিমধ্যে দেশের হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশনা দিয়েছে। হাসপাতালগুলোতে করোনার চিকিৎসা শয্যা এবং অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থাপনা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। একইসাথে মাস্ক পরিধান, হাত ধোয়া এবং ভিড় এড়িয়ে চলার পরামর্শও পুনরায় জারি করা হয়েছে।
করোনা পরিস্থিতি নিয়ে জনমনে উদ্বেগ
নতুন করে সংক্রমণ ও মৃত্যু বৃদ্ধির খবরে জনমনে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে যেসব মানুষ গণপরিবহন ও জনসমাগমে বেশি থাকেন, তারা ঝুঁকিতে আছেন। রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামের হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডগুলোতে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হয়েছে বলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সতর্কতা এবং করণীয়
বর্তমান করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সতর্কতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই একমাত্র উপায়। নাগরিকদের মধ্যে করোনা নিয়ে পুনরায় সচেতনতা তৈরি এবং স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে পালন এখন সময়ের দাবি। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে তা নির্ভর করছে আগামী দিনগুলোতে জনসচেতনতা ও সরকারি উদ্যোগের ওপর।
এম আর এম – ০০০৪ , Signalbd.com