এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ৪৫৫ জন রোগী। এই ২ জনের মৃত্যুর ফলে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৩৯৮ জনে। আর নতুন রোগীসহ চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৯৮ হাজার ২৮৪ জন। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক নিয়মিত প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। ডেঙ্গুর প্রকোপ বছরের শেষ দিকেও অব্যাহত থাকায় স্বাস্থ্যখাত ও জনস্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
গত ২৪ ঘণ্টার চিত্র: মৃত্যু ও শনাক্তের হার
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় (রবিবার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিম্নরূপ:
| পরিসংখ্যান | সংখ্যা |
| নতুন মৃত্যু | ২ জন |
| নতুন শনাক্ত (হাসপাতালে ভর্তি) | ৪৫৫ জন |
| হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র | ৪৮৮ জন |
এই সময়ে নতুন করে যতজন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তার চেয়ে বেশি সংখ্যক রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন (৪৮৮ জন), যা কিছুটা স্বস্তিদায়ক। এ নিয়ে চলতি বছর হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৯৬ হাজার ২৩২ জন।
বিভাগভিত্তিক আক্রান্তের সংখ্যা
গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যায় ভিন্নতা দেখা গেছে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগেই রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
- ঢাকা বিভাগ ও সিটি কর্পোরেশন: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) ১০৬ জন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) ৫৫ জন ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া ঢাকা বিভাগে ভর্তি হয়েছেন আরও ৫৩ জন।
- অন্যান্য বিভাগ:
- বরিশাল বিভাগে: ৫৭ জন
- চট্টগ্রাম বিভাগে: ৫১ জন
- খুলনা বিভাগে: ৪৪ জন
- ময়মনসিংহ বিভাগে: ৩২ জন
- রাজশাহী বিভাগে: ৪৮ জন
- রংপুর বিভাগে: তিনজন
- সিলেট বিভাগে: ছয়জন
ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এবং বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের মতো উপকূলীয় ও ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলগুলোতে ডেঙ্গুর সংক্রমণ এখনও উচ্চ পর্যায়ে রয়েছে।
ডেঙ্গুর দীর্ঘমেয়াদী পরিসংখ্যান (২০২৫)
চলতি বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে বছরের সামগ্রিক পরিস্থিতি স্পষ্ট:
- মোট শনাক্ত রোগী: চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯৮ হাজার ২৮৪ জন। এই সংখ্যা দ্রুতই এক লাখের দিকে এগোচ্ছে।
- মোট মৃতের সংখ্যা: ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯৮ জনে।
- মৃত্যু হার: ডেঙ্গুতে মৃত্যুহারের সঠিক হিসাব এখনও চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করা না হলেও, আক্রান্তের বিপুল সংখ্যার কারণে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চরম চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
বছরের শেষ দিকে এসেও ডেঙ্গুর প্রকোপ না কমার কারণে দেশের স্বাস্থ্যখাতকে দীর্ঘমেয়াদী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
- হাসপাতালের চাপ: ডেঙ্গু রোগীদের জন্য নির্ধারিত শয্যা সংখ্যা, বিশেষ করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মতো বড় সরকারি হাসপাতালগুলোতে এখনও অতিরিক্ত রোগীর চাপ রয়েছে।
- চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা: ডেঙ্গুর বিভিন্ন ধরনের স্ট্রেইন এবং রোগীর শারীরিক জটিলতা বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসার ক্ষেত্রেও নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে।
- মশানিধন কর্মসূচি: ডেঙ্গুর প্রধান বাহক এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য সিটি কর্পোরেশন ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর বছরব্যাপী কার্যক্রমের দুর্বলতা আবারও স্পষ্ট হয়েছে। শুধুমাত্র বর্ষাকালে নয়, বরং সারা বছর ধরেই মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত ও প্রতিরোধের উপায়
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে না গেলেও, জনগণের মধ্যে আরও সচেতনতা জরুরি।
- সতর্কতা: ডেঙ্গু জ্বরকে কখনোই সাধারণ জ্বর ভেবে উপেক্ষা করা উচিত নয়। তীব্র জ্বর, মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, মাংসপেশি ও হাড়ের জোড়ায় ব্যথা—এই ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
- প্রতিরোধের উপায়:
- জমা জল অপসারণ: এডিস মশার প্রজননস্থল হলো পরিষ্কার, স্থির জল। তাই বাড়ি ও আশেপাশে কোনো পাত্রে জল জমতে দেওয়া যাবে না।
- মশারির ব্যবহার: দিনের বেলায়ও মশারির ব্যবহার করা।
- পোশাক: মশা কামড়াতে না পারে এমন লম্বা হাতার পোশাক পরা।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি
গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও ২ জনের মৃত্যু এবং ৪৫৫ জনের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া দেশের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়। চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ৪০০-এর কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়ায় এই রোগ এখন একটি জাতীয় স্বাস্থ্য সংকটে পরিণত হয়েছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সিটি কর্পোরেশন এবং স্থানীয় প্রশাসনকে আরও শক্তিশালী ও সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং মশার প্রজননস্থল ধ্বংসের মাধ্যমে এই মহামারি মোকাবিলা করা সম্ভব।
এম আর এম – ২৫৪৪, Signalbd.com



