স্বাস্থ্য

৩০ দিন রাতে পুদিনা চা পান করলে কী ঘটে শরীরে

Advertisement

দিনের কর্মব্যস্ততা শেষে রাতে এক কাপ উষ্ণ পানীয় অনেকেরই প্রয়োজন হয়। প্রশান্তিদায়ক পানীয় হিসেবে আজকাল ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে পুদিনা চা (Peppermint Tea)। পুদিনা পাতা, যা সর্দি-কাশির মতো ছোটখাটো সমস্যায় ব্যবহৃত হয়, নিয়মিত রাতে পান করলে এটি কেবল মনের শান্তিই দেয় না, বরং শরীরের অভ্যন্তরেও নিয়ে আসে বহু ইতিবাচক পরিবর্তন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, টানা একমাস বা ৩০ দিন নিয়মিত পুদিনা চা পান করলে হজম প্রক্রিয়া, ঘুমের মান এবং সামগ্রিক মানসিক স্বস্তির ক্ষেত্রে কার্যকরী উপকারিতা পাওয়া যায়। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি-তে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়েছে।

হজমের অস্বস্তি কমায়: প্রাকৃতিক অ্যান্টিস্পাসমোডিক

রাতে খাওয়ার পরে হজমের সমস্যা, গ্যাস বা বদহজমের মতো অস্বস্তি প্রায়শই দেখা যায়। এই ধরনের সমস্যা সমাধানে পুদিনা চা অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে।

  • পেশী শিথিলকরণ: পুদিনার পাতায় প্রাকৃতিক অ্যান্টিস্পাসমোডিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি পরিপাকতন্ত্রের পেশীগুলোকে শিথিল করতে সহায়তা করে। পেশী শিথিল হলে হজম প্রক্রিয়া মসৃণ হয়।
  • গ্যাস ও ফোলাভাব হ্রাস: এর ফলে গ্যাস, ফোলাভাব (Bloating) এবং বদহজম বা ইনডাইজেশন কমাতে পারে। এই সমস্যাগুলো মূলত রাতে অনিয়মিত বা গুরুপাক খাবার খাওয়ার পর হয়ে থাকে।
  • আইবিএস-এ প্রভাব: জার্নাল অব গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিতে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, পুদিনার তেল আইবিএস (Irritable Bowel Syndrome)-এর লক্ষণগুলোকে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে পারে, যা পুদিনা চায়ের উপকারিতার সম্ভাবনাকে ইঙ্গিত করে।

৩০ দিন নিয়মিত পুদিনা চা পান করলে পরিপাকতন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত হয় এবং রাতে পেট ফাঁপা বা অস্বস্তির সমস্যা কমে আসে।

সহজে ঘুমাতে সাহায্য: ক্যাফিনমুক্ত শিথিলতা

ঘুমের মান উন্নত করার ক্ষেত্রে পুদিনা চা একটি দারুণ বিকল্প। রাতের পানীয় হিসেবে এর জনপ্রিয়তার প্রধান কারণ হলো এটি প্রাকৃতিকভাবে ক্যাফিনমুক্ত

  • মানসিক শান্তি: পুদিনা চায়ের শীতল ও সতেজ সুবাস মনের একটি শান্ত অবস্থা বজায় রাখে, যা ঘুমের আগে মনকে শিথিল করতে সাহায্য করে।
  • মেন্থলের প্রভাব: পুদিনা পাতার মূল উপাদান মেন্থল থেকে হালকা শিথিলকরণ প্রভাব (Relaxation effect) আসে। এই প্রভাব শরীরকে নিজস্ব গতিতে বিশ্রাম নিতে উৎসাহিত করে।
  • মসৃণ ঘুমের পরিবর্তন: টানা একমাস নিয়মিত পুদিনা চা পান করলে ঘুমের পরিবর্তন লক্ষণীয় হবে। এমনকি রাতে অস্থির বোধ করলেও এর প্রশান্তিদায়ক গুণাগুণ অনুভব করা যায়। পুদিনা চা ঘুমের ঔষধের মতো কাজ না করলেও, এটি শান্ত পরিবেশে ঘুমানোর জন্য শরীরকে প্রস্তুত করে।

রাতে পরিষ্কার শ্বাস-প্রশ্বাসে সাহায্য

পুদিনা চা শ্বাসতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি শ্বাস-প্রশ্বাসের পথকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।

  • নাকের পথ খোলা: পুদিনা পাতায় বিদ্যমান প্রাকৃতিক মেন্থল নাকের ভেতরের পথগুলো খুলতে এবং হালকা রক্তক্ষরণের মতো সমস্যাগুলো কমাতে অবদান রাখে।
  • অ্যালার্জি ও বন্ধ নাক: যারা মৌসুমি অ্যালার্জি বা রাতে পেট বন্ধ হওয়ার সমস্যায় ভোগেন, তাদের জন্য এটি বিশেষ উপকারী। নিয়মিত পুদিনা চা পান করলে বায়ুপ্রবাহ উন্নত হতে পারে এবং মাসের শেষ দিকে শ্বাস-প্রশ্বাস হালকা ও আরামদায়ক অনুভব হবে। এটি শ্বাসতন্ত্রের যেকোনো ছোটখাটো প্রদাহ কমাতেও সহায়তা করতে পারে।

শ্বাস-প্রশ্বাস সতেজ করে ও মুখে আরাম দেয়

পুদিনা পাতার স্বাস্থ্যগত সুবিধার পাশাপাশি এর সতেজতা মুখের স্বাস্থ্যবিধানেও ভূমিকা রাখে।

  • অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য: পুদিনায় বিদ্যমান প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য মুখের দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া কমাতে কাজ করে।
  • সতেজ স্বাদ: নিয়মিত রাতে পুদিনা চা পান করা হলে মুখে একটি পরিষ্কার ও সতেজ স্বাদ তৈরি হয়, যা পরদিন সকাল পর্যন্ত স্থায়ী থাকে।
  • শুষ্কতা হ্রাস: সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঘুম থেকে উঠার পর মুখে কম শুষ্কতা ও মনোরম অনুভূতি লক্ষ্য করা যায়। এটি মুখের ভেতরের পরিবেশকে স্বাস্থ্যকর রাখতে সহায়ক।

চাপ ও উত্তেজনা কমায়: স্নায়ুতন্ত্রের ওপর শান্ত প্রভাব

আধুনিক জীবনে চাপ এবং উত্তেজনা একটি সাধারণ সমস্যা। পুদিনা চা এই সমস্যা সমাধানে প্রাকৃতিক সহায়ক হিসেবে কাজ করে।

  • স্নায়ুতন্ত্রের প্রভাব: পুদিনা পাতার সুবাস স্নায়ুতন্ত্রের ওপর শান্ত প্রভাব ফেলে বলে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এর সতেজ গন্ধ মনকে দ্রুত প্রশমিত করে।
  • দীর্ঘস্থায়ী চাপ প্রশমন: নিয়মিত রাতে পুদিনা চা পান করলে সারাদিন তৈরি হওয়া দীর্ঘস্থায়ী চাপ প্রশমিত হয়। অনেকেই পানীয়টি নিয়মিত একমাস পানের পর মানসিক ও শারীরিকভাবে হালকা বোধ করেছেন বলেও জানিয়েছেন। এটি স্ট্রেস হরমোন নিয়ন্ত্রণ এবং মানসিক প্রশান্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে।

পুদিনা চা কি অ্যাসিডিটির কারণ?

পুদিনা চা সাধারণত অধিকাংশ মানুষের জন্য প্রতিদিন পান করা নিরাপদ। তবে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি:

  • রিফ্লাক্স সমস্যা: কিছু মানুষের ক্ষেত্রে পুদিনা চা খাদ্যনালীতে স্ফিঙ্কটারকে শিথিল করতে পারে, যা অ্যাসিডিটি বা রিফ্লাক্সের (Acid Reflux) কারণ হতে পারে।
  • চিকিৎসকের পরামর্শ: এটি পানে যদি অস্বস্তি বোধ করেন বা আগে থেকেই কোনো পরিপাকতন্ত্রের জটিলতা থাকে, তাহলে রাতের বেলায় পুদিনা চা পান করা এড়িয়ে চলা উচিত এবং অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

৩০ দিনের পুদিনা চায়ের উপকারিতা

৩০ দিন নিয়মিত রাতে পুদিনা চা পান করা একটি সাধারণ অভ্যাস হলেও এর উপকারিতা সুদূরপ্রসারী। হজমের উন্নতি, ঘুমের মান বৃদ্ধি, শ্বাস-প্রশ্বাস সহজ করা এবং মানসিক চাপ কমানোর মতো সুবিধাগুলো এটি প্রদান করে। সুইডেন যেমন জনস্বাস্থ্যে একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, তেমনি পুদিনা চা-ও প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় ছোট একটি পরিবর্তন এনে বড় ধরনের স্বাস্থ্যগত সুবিধা দিতে পারে।

এম আর এম – ২৫০৪, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button