স্বাস্থ্য

শুক্রবার সকালের মধ্যেই বেগম জিয়াকে নেয়া হবে লন্ডন: ডা. জাহিদ

Advertisement

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শুক্রবার সকালের মধ্যে লন্ডনে নেওয়ার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) বিকেলে সাংবাদিকদের এই তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, সবকিছু ঠিক থাকলে কাতারের পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে আজ মধ্যরাতের পরে অথবা কাল ভোরে তাঁকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হবে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুসারে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং লন্ডনে একটি হাসপাতালের সঙ্গে এরইমধ্যে যোগাযোগ করা হয়েছে। দীর্ঘ ১২ দিন ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকা বেগম খালেদা জিয়ার এই স্থানান্তর তাঁর চিকিৎসার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়

লন্ডনে নেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ও সময়সূচি

ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে।

  • স্থানান্তর প্রক্রিয়া: কাতার এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে নেওয়া হবে।
  • সম্ভাব্য সময়: আজ মধ্যরাতের পরে অথবা আগামীকাল শুক্রবার সকালের মধ্যে তাঁকে লন্ডনের উদ্দেশে রওয়ানা করানো হবে।
  • চিকিৎসক দল: ব্যক্তিগত চিকিৎসকসহ প্রায় ১৪ জন তাঁর সঙ্গে যাওয়ার কথা রয়েছে।

ডা. জাহিদ বলেন, ‘আমরা অনেক অনেক আশাবাদী, আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে এবারও তিনি আমাদের মধ্যে ফিরে আসবেন।’ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুসারে এবং তাঁর শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করেই এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

কাতার এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের প্রস্তুতি ও সহযোগিতা

খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার জন্য কাতারের পক্ষ থেকে বিশেষ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। ঢাকাস্থ কাতার দূতাবাস থেকে জানানো হয়েছে, বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার জন্য দেশটির আমিরের বিমান – কাতার এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রয়েছে। চিকিৎসকদের সম্মতি পেলেই কাতার থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি দ্রুত ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা হবে।

এই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং বিশেষায়িত মেডিকেল টিম দ্বারা সজ্জিত, যা দীর্ঘপথের জরুরি ভ্রমণের জন্য অপরিহার্য। কাতারের এই মানবিক সহায়তা দুই দেশের মধ্যেকার কূটনৈতিক ও মানবিক সম্পর্কের একটি ইতিবাচক দিক।

খালেদা জিয়ার বর্তমান অবস্থা: অপরিবর্তিত কিন্তু স্থিতিশীল

বেগম খালেদা জিয়া গত ২৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন এবং এরপর থেকে তিনি সংকটাপন্ন পরিস্থিতিতে রয়েছেন। গত ১২ দিন ধরে তিনি সিসিইউতে চিকিৎসাধীন। তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. জাহিদ হোসেনসহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা জানিয়েছেন, তাঁর শারীরিক অবস্থা আগের মতোই অপরিবর্তিত রয়েছে।

তবে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানান, ‘বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের মতোই অপরিবর্তিত। তাঁর চিকিৎসা চলছে।’ এর আগে চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, তিনি চিকিৎসায় ‘রেসপন্স’ করছেন। তাঁর এই স্থিতিশীলতা এবং চিকিৎসার প্রতি সাড়া দেওয়ার কারণেই তাঁকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হয়েছে।

সরকারের প্রস্তুতি ও বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারও প্রস্তুত রয়েছে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনসহ আইন উপদেষ্টারা আগেই জানিয়েছিলেন, দল বা পরিবারের সিদ্ধান্ত এলে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা দেবে।

এছাড়াও, বেগম জিয়াকে রাষ্ট্রের ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ (VIP) ঘোষণার পর থেকেই এভারকেয়ার হাসপাতাল এলাকার নিরাপত্তায় এসএসএফ (SSF) ও পিজিআর (PGR) সদস্যরা নিয়োজিত আছেন। তাঁর বিদেশ যাত্রাকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে জানানো হয়, এসএসএফের নিরাপত্তা প্রটোকল অনুযায়ী বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) বেলা ১২টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে এভারকেয়ার হাসপাতালের নিকটস্থ দুটি উন্মুক্ত মাঠে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার পরীক্ষামূলক অবতরণ ও উড্ডয়ন পরিচালনা করেছে।

লন্ডন সফর ও প্রত্যাবর্তন

৮০ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে হৃদ্‌রোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস ও কিডনি জটিলতাসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। গত বছরের ৫ আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি মুক্তি পান।

এরপর চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি ১১৭ দিন লন্ডনে অবস্থান করেন। চিকিৎসার পর গত ৬ মে তিনি দেশে ফেরেন। দেশে ফেরার পর নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হলেও, সবশেষ ২৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তাঁকে দ্রুত ভর্তি করা হয়।

জিয়া পরিবারের তদারকি ও হাসপাতালের যোগাযোগ

লন্ডনে তাঁর বড় ছেলে ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং তাঁর স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান সার্বক্ষণিক তাঁর শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর রাখছেন। তাঁরাই লন্ডনের হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং তাঁর চিকিৎসার বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন। লন্ডনে একটি হাসপাতালের সঙ্গে এরইমধ্যে যোগাযোগও সম্পন্ন হয়েছে, যেখানে তাঁর উন্নত চিকিৎসা শুরু হবে।

ডা. জাহিদ হোসেনের বক্তব্য অনুযায়ী, ‘সর্বোচ্চটা মনে রাখতে হবে রোগীর বর্তমান অবস্থা এবং মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শের বাইরে কোনো কিছু করার সুযোগ এই মুহূর্তে আমাদের নেই।’ এখন সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ায় জিয়া পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে দ্রুত তাঁকে লন্ডনে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে।

অপেক্ষার অবসান ও নতুন আশাবাদ

ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনের ঘোষণার মধ্য দিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা নিয়ে দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান হলো। কাতার এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে শুক্রবার সকালের মধ্যে তাঁর লন্ডন যাত্রা তাঁর জীবন রক্ষায় এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই যাত্রা তাঁর উন্নত চিকিৎসার সুযোগ তৈরি করবে এবং তাঁর দ্রুত সুস্থতার জন্য নতুন আশাবাদ জাগাবে। এখন সবার অপেক্ষা সেই মুহূর্তের জন্য, যখন তিনি নিরাপদে লন্ডনে পৌঁছে উন্নত চিকিৎসা নিতে পারবেন।

এম আর এম – ২৪৯৭, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button