স্বাস্থ্য

ডেঙ্গুতে একদিনে ৩ মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৩৩ জন

Advertisement

বাংলাদেশে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত মাত্র একদিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন রোগী হিসেবে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৩৩ জন।

এই ডেটা দেশের বিভিন্ন বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রকাশিত হয়েছে। ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে বরিশাল বিভাগের ১১৩ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ১১৯ জন, ঢাকা বিভাগের (সিটি কর্পোরেশনের বাইরে) ১৫৮ জন, ঢাকা উত্তর সিটিতে ১৬৭ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ১১৬ জন, রাজশাহী বিভাগের (সিটি কর্পোরেশনের বাইরে) ৬৫ জন, ময়মনসিংহ বিভাগের (সিটি কর্পোরেশনের বাইরে) ৭৭ জন, রংপুর বিভাগের (সিটি কর্পোরেশনের বাইরে) ১২ জন এবং সিলেট বিভাগের (সিটি কর্পোরেশনের বাইরে) ৬ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।

এদিকে, গত একদিনে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৮৫৯ জন রোগী সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র পেয়েছেন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত মোট ৭৮,৮৪৮ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

চলতি বছরের পরিস্থিতি

২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে আজ পর্যন্ত সবমিলিয়ে ৮২,৬০৬ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুবরণ করেছেন ৩২৬ জন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ডেঙ্গুর প্রকোপের সঙ্গে মৌসুমি বৃষ্টিপাত, গরম এবং পানি জমে থাকা এলাকায় মশার বিস্তার জড়িত।

ঢাকা শহরে বিশেষ করে সিটি কর্পোরেশন এলাকার আশেপাশে ডেঙ্গু সংক্রমণ বেশি। রাজধানীর স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে প্রতিদিন গড়ে ১৫০–১৬০ জন নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছেন।

অতীতের তুলনা

ডেঙ্গুর পরিস্থিতি নতুন নয়। ২০২৪ সালে, জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে এক লাখ এক হাজার ২১৪ জন রোগী ভর্তি হন এবং ৫৭৫ জন মৃত্যুবরণ করেন। তুলনামূলকভাবে ২০২৩ সালে ডেঙ্গু আরও মারাত্মক ছিল; ওই বছর মোট ৩২১,১৭৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হন এবং ১,৭০৫ জনের মৃত্যু হয়।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, যদি এখনই ব্যাপক সচেতনতা ও নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তবে এই বছরও আগের বছরের চেয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে পারে।

স্বাস্থ্য বিভাগের সতর্কবার্তা

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সাধারণ মানুষকে সতর্ক করেছেন যে, ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে মশার লার্ভা ধ্বংস করা, জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করা, ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং অসুস্থ হলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া অত্যাবশ্যক।

ডেঙ্গুর সাধারণ উপসর্গের মধ্যে রয়েছে হঠাৎ জ্বর, মাথা ব্যথা, চোখে ব্যথা, মাংসপেশিতে ব্যথা, বমি এবং ত্বকে চুলকানি বা র‍্যাশ। এই উপসর্গ দেখা দিলে অবিলম্বে নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

হাসপাতালে প্রস্তুতি এবং চিকিৎসা

দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা ইউনিট তৈরি করেছে। ঢাকার কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল ডেঙ্গু রোগীদের ভর্তি ও চিকিৎসার জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি রেখেছে। সেখানে প্লাজমা, ডেঙ্গু নির্ণয়ের কিট এবং অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জাম পর্যাপ্তভাবে রয়েছে।

ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা মূলত জ্বর নিয়ন্ত্রণ, ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ, লোহিতকণিকা ও প্লেটলেট পর্যবেক্ষণ এবং প্রয়োজন হলে হাসপাতালে ভর্তি করা। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, রোগী যত দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হয় এবং যথাযথ চিকিৎসা নেয়, মৃত্যু ঝুঁকি তত কম থাকে।

সচেতনতা ও প্রতিরোধ

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্য সংস্থা মিলিতভাবে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রচারণা চালাচ্ছে। স্কুল, কলেজ ও সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্পর্কিত ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা হচ্ছে।

নাগরিকদের প্রতি বিশেষজ্ঞরা অনুরোধ জানিয়েছেন, ব্যক্তিগত পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা, বাড়ির চারপাশে পানি জমতে না দেওয়া, মশারি ব্যবহার করা এবং লার্ভা ধ্বংসকরণ কার্যক্রমে অংশ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা

বিশ্বব্যাপী ডেঙ্গুর প্রকোপ দক্ষিণ এশিয়া ও লাতিন আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ রোধ করতে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা অনুসরণ করা প্রয়োজন। বিশেষ করে, শহর পরিকল্পনা, পানি নিষ্কাশন ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে আন্তর্জাতিক মডেল অনুসরণ করা যেতে পারে।

ডেঙ্গু শুধু একটির স্বাস্থ্য সমস্যা নয়; এটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যাও সৃষ্টি করে। কর্মক্ষম মানুষ অসুস্থ হলে পরিবার এবং অর্থনীতিতে প্রভাব পড়ে। তাই, সময়মতো সতর্কতা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।

MAH – 13790 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button