গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছরের শুরু থেকে এডিস মশাবাহিত এই রোগে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১৩। একই সময়ে, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ১৯৫ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে সোমবার পাঠানো প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
ঢাকা ও বিভাগীয় হাসপাতালে ডেঙ্গুর ঢেউ
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত ১ হাজার ১৯৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন ৩৩৫ জন, ঢাকা বিভাগের (সিটি করপোরেশনের বাইরে) হাসপাতালে ২৭৮ জন, বরিশাল বিভাগে ১৫৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৩২ জন, খুলনা বিভাগে ১১৪ জন, ময়মনসিংহে ৫৯ জন, রাজশাহী বিভাগে ১১৩ জন, এবং সিলেট বিভাগে ৯ জন ভর্তি হয়েছেন।
চলতি বছরে ডেঙ্গুর প্রভাব
এ পর্যন্ত ২০২৫ সালের শুরু থেকে ৭৮ হাজার ৫৪৩ জন মানুষ হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, জমে থাকা পানির স্থান ও মশার বিস্তার এই রোগের প্রকোপ বাড়াচ্ছে।
ডেঙ্গুর প্রধান লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে উচ্চ জ্বর, শরীরের ব্যথা, মাথাব্যথা, বমি, এবং শারীরিক দুর্বলতা। বিশেষজ্ঞরা মনে করান, রোগীর জ্বর যদি ৩-৪ দিন ধরে থাকে, সাথে রক্তপাত, ত্বকে দাগ বা অতিরিক্ত দুর্বলতা দেখা দেয়, তবে তা অবিলম্বে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সংকেত।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকার ও স্বাস্থ্য বিভাগে পদক্ষেপ
সরকারি ও স্বাস্থ্য বিভাগ নিয়মিত ডেঙ্গু প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিশেষভাবে মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে:
- বাড়ি ও আশেপাশের জমে থাকা পানির জায়গা পরিষ্কার করা
- মশার লার্ভা নির্মূল করা
- রোদ বা বিশেষ কীটনাশক দিয়ে মশা নিয়ন্ত্রণ করা
- জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা
স্বাস্থ্য অধিদফতর পরামর্শ দিচ্ছে, সাধারণ মানুষ যেন নিজ বাড়ি ও আশেপাশে পানি জমতে না দেয়, বিশেষত ক্যান, টব, লাইটার বা পাত্রে।
ডেঙ্গুর ঋতু এবং স্বাস্থ্যবিধি
ডেঙ্গু মূলত বর্ষা এবং বর্ষার পরে গ্রীষ্মের সময়ে বেশি ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এডিস মশা সাধারণত পরিষ্কার পানিতে ডিম ফেলে। তাই ব্যক্তিগত সতর্কতা যেমন মশারি ব্যবহার, লম্বা হাতা-পায়জামা পরা, এবং মশার কাঁটার থেকে রক্ষা পাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ডেঙ্গু চিকিৎসায় হাসপাতালগুলোতে ফ্লুইড থেরাপি, রক্তের পর্যবেক্ষণ এবং প্রয়োজনমতো ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা এবং সরকারি উদ্যোগ মিলিতভাবে রোগের বিস্তার কমাতে সাহায্য করছে।
জনসচেতনতা এবং আগামী দিনের প্রস্তুতি
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, শুধু চিকিৎসা নয়, জনসচেতনতা, পরিচ্ছন্নতা ও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়াও সমান গুরুত্বপূর্ণ। তারা আরও বলেন, “ডেঙ্গু প্রতিরোধের মূল চাবিকাঠি হল মশার বংশবিস্তার বন্ধ করা। এটি না হলে হাসপাতালে ভর্তি সংখ্যা ক্রমশ বাড়বে।”
সরকারি ও অ-সরকারি সংস্থাগুলো সচেতনতা বৃদ্ধি করতে স্কুল, কলেজ, মসজিদ, ও কমিউনিটি সেন্টারে শিক্ষামূলক প্রচারণা চালাচ্ছে।
MAH – 13711 I Signalbd.com



