
বিনা মূল্যে ডেঙ্গু শনাক্তকরণ পরীক্ষা চালুর ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। দেশের সকল সরকারি হাসপাতালে জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ ও অন্তর্বিভাগে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত এনএস-১ (NS-1) পরীক্ষা বিনামূল্যে করা হবে—এ বিষয়ে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপসচিব কাজী শরীফ উদ্দিন আহমেদের স্বাক্ষরিত অফিস আদেশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে পাঠানো হয়েছে।
ঘটনা ও সিদ্ধান্তের সংক্ষিপ্ত বিবরণ
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অফিস আদেশে বলা হয়েছে, ১৫ অক্টোবর থেকে কার্যকর হওয়া এই নির্দেশ ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। অর্থ বিভাগের পূর্বগত সম্মতি পাওয়া আছে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে। নির্দেশনায় সব সরকারি হাসপাতানাগুলোকে প্রয়োজনীয় কিট ও ল্যাব সংস্থান নিশ্চিত করে দ্রুত টেস্ট সুবিধা দেবার জন্য বলা হয়েছে। রোগীরা রেজিস্ট্রেশন করে, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এনএস-১ পরীক্ষা বিনামূল্যে করাতে পারবেন।
কেন এই পদক্ষেপ নেওয়া হলো
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, চলতি বর্ষে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৫৭ হাজার ৭৭০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং মারা গেছেন ২৪৩ জন। সেপ্টেম্বরেই হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ছিল—১৫ হাজার ৮৬৬ জন। ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমশ বাড়ায় দ্রুত রোগ নির্ণয়ের সুবিধা নিশ্চিত করতে ল্যাব টেস্ট বিনামূল্যে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের নথিতে বলা হয়েছে।
প্রভাব ও সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন
সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিনামূল্যে এনএস-১ পরীক্ষা চালু হলে রোগ নির্ণয়ে বিলম্ব কমবে এবং রোগীরা দ্রুত চিকিৎসা নিতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পরীক্ষার কিট সরবরাহ ও ল্যাব সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য জেলা ও মহানগর ল্যাবগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। জরুরি অবস্থায় সরাসরি হাসপাতালে এসে রেজিস্ট্রেশন করলেই রোগীরা টেস্ট করাতে পারবেন, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ থাকা বাধ্যতামূলক হিসেবে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অননুমোদিতভাবে বলেছেন, “বিনামূল্যে পরীক্ষা রোগ নির্ণয়ে বড় ভূমিকা রাখবে—বিশেষ করে মাঝারি ও কম আয়ের পরিবারগুলোর ক্ষেত্রে।” তিনি বলেন, সরকারি ল্যাবগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য দ্রুত কাজ চলছে এবং প্রয়োজনীয় কিট বরাদ্দ করা হবে।
লজিস্টিক ও চ্যালেঞ্জ
বিনা মূল্য পরীক্ষার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পথ সহজ নয়—প্রতিটি জেলা ও উপজেলাতে পর্যাপ্ত কিট ও প্রশিক্ষিত ল্যাব টেকনিশিয়ান প্রয়োজন। কিছু সরকারি হাসপাতালের ল্যাব অবকাঠামো সীমিত। এসব জায়গায় দ্রুত মোবাইল ল্যাব, রেফারেল সিস্টেম ও পরীক্ষার কিট বিতরণ নিশ্চিত করার আপ্রাণ প্রচেষ্টা দরকার। এছাড়া জনগণকে নকল কিট বা অননুমোদিত টেস্ট থেকে রক্ষা করতে হাসপাতালের নোটিশবোর্ডে অফিস আদেশ ও পরিষ্কার নির্দেশনা রাখার পরামর্শ এসেছে।
পরিসংখ্যান ও পূর্ববর্তী প্রতিবেদন
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, বছরের শুরু থেকে আগস্ট পর্যন্ত ধাপে ধাপে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। ২০২৩ ও ২০২৪ সালের তুলনায় চলতি বছরে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর হার কিছু ক্ষেত্রে নিম্ন হলেও সাম্প্রতিক উত্থান উদ্বেগজনক। ২০০০ সাল থেকে অধিদপ্তর ডেঙ্গু সংক্রান্ত ধারাবাহিক তথ্য সংগ্রহ করছে; সেই ডেটা ভিত্তিক ব্যবস্থা গ্রহণই এবারের বিনামূল্যে পরীক্ষার সিদ্ধান্তকে সমর্থন যোগাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞ মন্তব্য
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত রোগ নির্ণয় হলে চিকিৎসা শুরু করা সহজ হয় এবং জটিলতা রোধ করা যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিভাগের একজন অধ্যাপক মন্তব্য করেন, “NS-1 টেস্ট দ্রুত ডেঙ্গু শনাক্ত করতে সহায়ক; তবে এটি একা পর্যাপ্ত নয়—রোগীর ক্লিনিকাল লক্ষণ, সম্পূরক ল্যাব টেস্ট ও পর্যবেক্ষণ একসঙ্গে করতে হবে।” তিনি আরো যোগ করেন, “সরকারী ল্যাব সক্ষমতা না বাড়ালে বিনামূল্যে টেস্টের সেবা সম্পূর্ণ কাগজে সীমাবদ্ধ থাকবে।”
রোগী ও জনসচেতনতার গুরুত্ব
বিনা মূল্যে পরীক্ষার সুবিধা থাকলেও রোগী নিজে সচেতন না হলে সুফল পাওয়া দুরূহ। ডেঙ্গু এড়াতে বাড়ির আশপাশে পানি জমতে দেবেন না, মশার প্রজননস্থল নির্মূল করুন, অকারণে ওষুধ গ্রহণ এড়িয়ে চলুন এবং জ্বর, ব্লিডিং বা শরীরে চটির মতো উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করুন—এই বার্তাগুলো আবার সব হাসপাতাল ও স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রচার করা হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় দ্রুত শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা জরুরি। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে বিনা মূল্যে NS-1 পরীক্ষা দেবার সিদ্ধান্ত তাৎপর্যপূর্ণ হলেও সফল বাস্তবায়নের জন্য কিট সরবরাহ, ল্যাব সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ ও জনগণের সচেতনতা জরুরি। আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত কার্যকর এই উদ্যোগ যে কেমন প্রভাব ফেলবে সেটাই এখন নজরের বিষয়; তবে তাৎক্ষণিকভাবে রোগীদের আর্থিক বোঝা কমবে এবং রোগনির্ণয়ে সুবিধা বাড়বে বলেই প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানগুলোকে জনগণকে সঠিক তথ্য পৌঁছে দিতে এবং পরীক্ষার মান বজায় রাখতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশ কথা বলা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে এই পদক্ষেপ দ্রুত রোগনির্ণয়ের মাধ্যমে ডেঙ্গু ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হবে।
এম আর এম – ১৮২০,Signalbd.com