২০ কোটি বছর আগের ‘উড়ন্ত’ সরীসৃপের নতুন প্রজাতির সন্ধান, বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় মিলেছে এক অজানা প্রজাতির টেরোসরের জীবাশ্ম। বিজ্ঞানীদের দাবি, এটি উত্তর আমেরিকায় আবিষ্কৃত প্রাচীনতম উড়ন্ত সরীসৃপ। আগ্নেয়গিরির ছাই আর নদীর পলিমাটির নিচে প্রায় অক্ষত অবস্থায় সংরক্ষিত ছিল এর চোয়ালের হাড়।
প্রাচীন আকাশচারীর অজানা পরিচয় উন্মোচন
বিশ্বের প্রাচীন ইতিহাস ঘেঁটে আবারও এক চমকপ্রদ আবিষ্কার করলেন বিজ্ঞানীরা। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনার পেট্রিফাইড ফরেস্ট ন্যাশনাল পার্ক থেকে সম্প্রতি খুঁজে পাওয়া গেছে প্রায় ২০ কোটি বছর আগের এক ‘উড়ন্ত’ সরীসৃপের জীবাশ্ম। নতুন এই প্রজাতির নাম রাখা হয়েছে ইওটেফ্রাড্যাক্টিলাস ম্যাকইন্টায়ারি (Eotephradactylus mcintireae)।
গবেষকরা জানিয়েছেন, এটি ট্রায়াসিক যুগের একটি নতুন টেরোসর প্রজাতি, যেটি আগে কখনো শনাক্ত হয়নি। এই সরীসৃপকে গাঙচিলের মতো আকৃতির বলে বর্ণনা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আধুনিক প্রযুক্তিতে মিলল অজানা প্রজাতির চিহ্ন
২০১১ সালে প্রথমবারের মতো চোয়ালের একটি হাড় আবিষ্কৃত হয় অ্যারিজোনার মরুভূমিতে। তবে সেই সময় এটিকে এক সাধারণ জীবাশ্ম বলেই ধারণা করা হয়েছিল। এরপর আধুনিক স্ক্যানিং প্রযুক্তি, থ্রি-ডি মডেলিং এবং হাড়ের মাইক্রোস্ট্রাকচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হন, এটি আসলে এক সম্পূর্ণ নতুন প্রজাতি।
এই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন স্মিথসোনিয়ান ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্টরির জীবাশ্মবিদ ড. বেন ক্লিগম্যান। তাঁর মতে, “এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার, কারণ টেরোসরের হাড় সাধারণত পাতলা ও ফাঁপা হওয়ায় সেগুলো সচরাচর ফসিলে পরিণত হয় না।”
আগ্নেয়গিরির ছাইয়েই বেঁচে গেল ইতিহাস
আবিষ্কারের স্থান ছিল এক সময়কার নদীর তলদেশ। সেই প্রাচীন নদীতে স্তরে স্তরে পলি জমে, আগ্নেয়গিরির ছাইয়ের প্রভাবে ফসিলটি সংরক্ষিত হয়। ফলে ২০৯ মিলিয়ন বছর আগের একটি সময়ের আভাস আমরা পাচ্ছি আজ।
এই ফসিলের সঙ্গে আরও উদ্ধার করা হয়েছে মাছের আঁশ, দাঁত, হাড় এবং এমনকি কোপ্রোলাইট—অর্থাৎ জীবাশ্মে পরিণত হওয়া প্রাণীর মল।
খাদ্যাভ্যাস ও বাস্তুতন্ত্রের চিত্র
গবেষকরা চোয়ালের দাঁতের গঠন বিশ্লেষণ করে জানতে পেরেছেন, এই গাঙচিল আকৃতির সরীসৃপটি এমন কিছু খেত যার শরীরে ছিল শক্ত আবরণ। অর্থাৎ প্রাচীনকালের আঁশযুক্ত মাছ ছিল এর প্রধান খাদ্য।
ড. ক্লিগম্যান বলেন, “এ ধরনের দাঁত শক্ত দেহবিশিষ্ট শিকারের জন্য উপযোগী ছিল। এটি আমাদের জানায় যে, টেরোসরদের খাদ্যচক্র কতটা বৈচিত্র্যময় ছিল।”
এক যুগে মিলেমিশে থাকা বিচিত্র প্রাণী
এই আবিষ্কার শুধু এক প্রজাতির তথ্য দেয়নি, বরং ট্রায়াসিক যুগের শেষ দিকে বিশ্বে কী ধরনের জীববৈচিত্র্য ছিল তার স্পষ্ট প্রমাণও দিয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ঐ সময় একইসাথে বাস করত ব্যাঙ, কচ্ছপ, বিশাল উভচর ও কুমিরের পূর্বপুরুষদের মতো প্রাণীরা।
বিজ্ঞানীরা বলেন, “এই ফসিল প্রমাণ করে যে, বিভিন্ন প্রজাতি একসাথে অবস্থান করত এবং ট্রায়াসিক যুগের বিবর্তনগত সন্ধিক্ষণ আমরা এখন বুঝতে পারছি।”
বিজ্ঞানীদের মতে কেন এত বড় আবিষ্কার?
বিশেষজ্ঞদের মতে, উত্তর আমেরিকায় এটাই এখন পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে প্রাচীন টেরোসর। এটি ট্রায়াসিক বিলুপ্তির আগে যে টেরোসরেরা বাস করত, তাদের সম্পর্কে গবেষণার নতুন দিক উন্মোচন করবে।
ড. ক্লিগম্যানের মতে, “এই হাড় শনাক্ত করার ক্ষমতা আমাদের বিশ্বের অন্যান্য ট্রায়াসিক যুগের শিলাস্তরেও টেরোসরের ফসিল খুঁজে পেতে সাহায্য করবে।”
“এটি শুধু একটি ফসিল নয়, বরং বিবর্তনের ইতিহাসের একটি মাইলফলক”—ড. বেন ক্লিগম্যান, জীবাশ্মবিদ
শেষ কথা
২০ কোটি বছর আগের এক অজানা অধ্যায় উঠে এসেছে মাত্র একটি হাড় থেকে। টেরোসরের মতো বিলুপ্ত প্রাণীদের নিয়ে নতুন করে গবেষণার দ্বার উন্মোচিত হচ্ছে এই আবিষ্কারের মাধ্যমে। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, ভবিষ্যতে আরও এমন জীবাশ্ম আবিষ্কার হলে প্রাচীন পৃথিবীর ইকোসিস্টেম সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা মিলবে।
এম আর এম – ০২৩০, Signalbd.com