
অনেকে ঘুমের সময় মুখ দিয়ে লালা পড়ার সমস্যা অনুভব করেন। সাধারণত এটি অস্বস্তিকর হলেও ভয়াবহ রোগের লক্ষণ নাও হতে পারে। তবে কখনও কখনও ঘুমের সময় লালা পড়া বিভিন্ন শারীরিক বা মস্তিষ্কসংক্রান্ত সমস্যার কারণে হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সঠিক ঘুমের ভঙ্গি, স্বাস্থ্যসম্মত অভ্যাস এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
ঘুমের সময় লালা পড়ার কারণ
ঘুমের অবস্থানের প্রভাব
ঘুমের সময় শরীরের সব পেশী শিথিল থাকে। মুখ খোলা থাকলে বা পাশ ফিরে ঘুমালে লালা সহজে বের হতে পারে। পিঠের ওপর বা চিত হয়ে ঘুমালে মুখ বন্ধ থাকে এবং লালা পড়ার সম্ভাবনা কমে।
মুখ ও দাঁতের স্বাস্থ্য
মুখের সমস্যা যেমন দাঁতের ক্ষয়, মাড়ি সংক্রমণ, মুখের আলসার বা সংক্রমণের কারণে অতিরিক্ত লালা উৎপন্ন হতে পারে। দাঁতের সংবেদনশীলতা, মাড়ি ফোলাভাব, মুখের দুর্গন্ধ, চিবানোর সময় ব্যথা ইত্যাদি লক্ষণ থাকলে ঘুমের সময় লালা পড়ার ঘটনা বৃদ্ধি পায়।
শ্বাসপ্রণালী ও স্লিপ অ্যাপনিয়া
স্লিপ অ্যাপনিয়া বা ঘুমের ব্যাঘাত থাকলে নাক দিয়ে শ্বাস নেওয়া কমে যায় এবং মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়ার ফলে লালা বের হয়। এ ছাড়া নাকের সাইনাস বন্ধ থাকলেও মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়া শুরু হয়, যা লালা পড়ার সঙ্গে যুক্ত।
জিইআরডি (গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ)
অ্যাসিড রিফ্লাক্স বা জিইআরডি থাকলে ঘুমের সময় গলা জ্বালা বা অস্বস্তি সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় শরীর অতিরিক্ত লালা তৈরি করে এবং মুখ দিয়ে বের হতে পারে।
স্নায়ুতন্ত্র ও মস্তিষ্কজনিত রোগ
স্ট্রোক, পার্কিনসন রোগ, সেরিব্রাল পালসি, হান্টিংটন রোগ বা মস্তিষ্কে আঘাত পেলে মুখের পেশী নিয়ন্ত্রণ দুর্বল হয়ে যায়। এর ফলে মুখের লালা ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।
ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
কিছু ওষুধ যেমন অ্যান্টিসাইকোটিক, আলঝাইমার চিকিৎসার ওষুধ, প্রশমক বা উদ্বেগ-শিথিলকরণ ওষুধের কারণে লালা উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। এ ধরনের ওষুধ সেবনের পর মুখ দিয়ে লালা পড়তে পারে।
ঘুমের সময় লালা পড়া কমানোর উপায়
ঘুমের ভঙ্গি পরিবর্তন
পাতলা বালিশ ব্যবহার করে বা চিত হয়ে ঘুমানো লালা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। পিঠের ওপর ভর দিয়ে ঘুমানোও কার্যকর।
নাকের পথ খোলা রাখা
সাইনাস বা নাকের সমস্যা থাকলে ঘুমের আগে নাক খোলার উপায় অবলম্বন করুন। ইউক্যালিপটাসের মতো এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করলে সাইনাস খোলা থাকে এবং মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়ার প্রয়োজন কমে।
ওজন নিয়ন্ত্রণ ও জীবনযাপন
অতিরিক্ত ওজন থাকলে স্লিপ অ্যাপনিয়ার ঝুঁকি বাড়ে। সুষম খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম এবং জীবনযাপন পরিবর্তন সমস্যার সমাধান করতে সাহায্য করে।
চিকিৎসা গ্রহণ
অ্যাসিড রিফ্লাক্স, স্লিপ অ্যাপনিয়া বা অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ বা থেরাপি গ্রহণ করুন। সঠিক চিকিৎসা লালা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
স্পিচ থেরাপি ও পেশী শক্তিশালীকরণ
মুখ ও গলার পেশী শক্তিশালী করার জন্য স্পিচ থেরাপিস্টের সঙ্গে কাজ করা যেতে পারে। এটি খাবার গিলতে এবং লালা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
বোটক্স ইনজেকশন
যদি স্নায়ুজনিত কারণে লালা পড়া হয়, তবে বোটক্স ইনজেকশন লালা উৎপাদন সাময়িকভাবে কমাতে পারে।
পরিশেষে
ঘুমের সময় মুখ দিয়ে লালা পড়া প্রায়শই সাধারণ সমস্যার সঙ্গে যুক্ত হলেও কখনও কখনও তা স্বাস্থ্যজনিত সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। সঠিক ঘুমের ভঙ্গি, নাক ও সাইনাসের যত্ন, জীবনযাপন পরিবর্তন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
এম আর এম – ১৬৩৩,Signalbd.com