বিশ্ব

রুবিও–লাভরভ ফোনালাপ: ইউক্রেন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের

Advertisement

ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে চলমান সংকট নিরসনের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। ইউক্রেনের ইউরোপীয় মিত্ররা মস্কোকে ৩০ দিনের নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার আহ্বান জানালেও, রাশিয়ার পক্ষ থেকে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ও মস্কোর প্রতিক্রিয়া

গত মাসে সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র এক মাসের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেয়, যা ইউক্রেন ইতোমধ্যে গ্রহণ করেছে। তবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন স্পষ্ট কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবের আগে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জবাব চান এবং যুদ্ধবিরতির বাস্তবায়ন নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছেন।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, মস্কো যুদ্ধবিরতি চায় না; বরং তারা যুদ্ধক্ষেত্রে নিজেদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করার কৌশল নিচ্ছে। তিনি আরও অভিযোগ করেন যে পুতিন যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করছেন।

রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনার বর্তমান অবস্থা

রোববার রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফোনালাপে অংশ নেন। তাঁদের আলোচনায় গত মাসে সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে গৃহীত সমঝোতার দিকগুলো নিয়ে আলোচনা হয়।

রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, লাভরভ ও রুবিও দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক যোগাযোগ চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র টামি ব্রুস বলেছেন, আলোচনা অব্যাহত থাকবে এবং উভয় পক্ষই যোগাযোগ পুনরুদ্ধারে একমত হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের প্রতিক্রিয়া ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা

ইউক্রেন নিয়ে একটি ভার্চুয়াল সম্মেলনের আয়োজন করেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। এতে ২৬ জন বিশ্বনেতা অংশ নেন। স্টারমার বলেছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে আলোচনার টেবিলে আনতে বাধ্য করা হবে এবং মস্কোর বিরুদ্ধে চাপ অব্যাহত রাখা হবে। তিনি রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনের নিন্দা করেন এবং বলেন, ইউক্রেনের জনগণের পাশে থাকবে যুক্তরাজ্য।

ইউক্রেনের অভিযোগ, গত কয়েক দিনে রাশিয়া দেশটির নয়টি অঞ্চলে ৯০টিরও বেশি ড্রোন হামলা চালিয়েছে। ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর দাবি, তারা কিছু হামলা প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে, তবে রুশ হামলার মাত্রা বেড়েই চলেছে।

পুতিনের দাবির পাল্টা প্রতিক্রিয়া

রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন দাবি করেছেন যে কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনীয় সেনাদের ঘিরে ফেলেছে রুশ বাহিনী। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং বলেছেন, পুতিন যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, “পুতিন মিথ্যা বলছেন, বাস্তবতা হলো তিনি আলোচনার টেবিলে বসতে চান না এবং যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করতে চান।”

পরবর্তী সম্ভাব্য পদক্ষেপ

১. যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন: যদি রাশিয়া যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়, তবে সাময়িকভাবে যুদ্ধ কমতে পারে। তবে রাশিয়া এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি।

২. কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার: যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ন্যাটো মিত্ররা রাশিয়ার ওপর চাপ বৃদ্ধি করতে পারে।

৩. যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতি পরিবর্তন: ইউক্রেন ও রাশিয়া উভয় পক্ষই সামরিক কৌশল পরিবর্তন করতে পারে।

৪. আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: বিশ্বনেতারা রাশিয়াকে আলোচনায় আনতে আরও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন।

ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে আসন্ন সপ্তাহগুলো গুরুত্বপূর্ণ হবে। বিশ্বনেতারা কূটনৈতিক সমাধানের দিকে এগিয়ে যেতে চাপ প্রয়োগ করলেও রাশিয়ার অবস্থান এখনো অনিশ্চিত।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button