ছয় দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন, তাদের দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত কর্মস্থলে ফিরবেন না স্বাস্থ্য সহকারীরা। এর ফলে আগামী ১ অক্টোবর থেকে সারা দেশে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার আউটরিচ ইপিআই টিকাদান কেন্দ্রের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে। একইসঙ্গে ১২ অক্টোবর শুরু হতে যাওয়া জাতীয় টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইনও কার্যত স্থবির হয়ে পড়বে।
দাবি উপস্থাপন ও স্মারকলিপি জমা
রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে ছয় দফা দাবি নিয়ে স্মারকলিপি জমা দেন স্বাস্থ্য সহকারীদের সংগঠনের নেতারা। স্মারকলিপিতে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য সহকারীরা শিশু ও নারীদের প্রাণঘাতী রোগ থেকে সুরক্ষা দিতে কাজ করলেও তাদের ন্যায্য মর্যাদা দেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় তারা আর আশ্বাসে আস্থা রাখতে পারছেন না।
ছয় দফা দাবি
সংগঠনের পক্ষ থেকে যেসব দাবির কথা বলা হয়েছে তা হলো—
- নিয়োগবিধি সংশোধন
- শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে স্নাতক সংযোজন
- ১৪তম গ্রেড প্রদান
- ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে টেকনিক্যাল পদমর্যাদা প্রদান
- বেতন স্কেল ১১তম গ্রেডে উন্নীতকরণ
- অন্যান্য ন্যায্য দাবি বাস্তবায়ন
স্বাস্থ্য সহকারীরা স্পষ্ট জানিয়েছেন, এসব দাবি পূরণ না হলে টিকাদান কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ থাকবে।
এটি নতুন কোনো দাবি নয়। ১৯৯৮ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য সহকারীদের দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে স্বাস্থ্য সচিব ও মহাপরিচালক একই প্রতিশ্রুতি দেন। এমনকি ২০২০ সালে স্বয়ং স্বাস্থ্যমন্ত্রী একটি রেজুলেশন গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে কোনো প্রতিশ্রুতিই কার্যকর হয়নি। ফলে স্বাস্থ্য সহকারীরা নিজেদের দীর্ঘদিনের অবহেলার শিকার হিসেবে দেখছেন।
সম্ভাব্য প্রভাব
দেশের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার একটি বড় অংশ নির্ভর করে স্বাস্থ্য সহকারীদের ওপর। বিশেষ করে ইপিআই কর্মসূচির মাধ্যমে শিশুদের ১০টি প্রাণঘাতী রোগের টিকা দেওয়া হয়, যা স্বাস্থ্য সহকারীরাই মাঠপর্যায়ে পৌঁছে দেন। কর্মবিরতির কারণে এসব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলে শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। পাশাপাশি টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন স্থগিত হলে জনস্বাস্থ্যের জন্য তা গুরুতর ক্ষতির কারণ হতে পারে।
বিশেষজ্ঞ ও অভিভাবকদের উদ্বেগ
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্য সহকারীদের যৌক্তিক দাবি পূরণ করা প্রয়োজন। তাদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা ও মাঠপর্যায়ের অবদান বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অভিভাবকরাও বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা বলছেন, শিশুরা নিয়মিত টিকা না পেলে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বেড়ে যাবে।
সরকারের অবস্থান কী
সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া এখনো পাওয়া যায়নি। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, দাবিগুলো নিয়ে আলোচনা চলছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দাবি বাস্তবায়নের সম্ভাব্য দিকগুলো বিবেচনা করছেন। স্বাস্থ্য সহকারীরা দাবি বাস্তবায়নের দ্রুত কোনো আশ্বাস না পেলে টিকাদান বন্ধ রাখবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
স্বাস্থ্য সহকারীদের কর্মবিরতি প্রশ্ন তুলছে বাংলাদেশের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার টেকসই ব্যবস্থাপনা নিয়ে। একদিকে তারা তাদের অধিকার আদায়ে আন্দোলনে নেমেছেন, অন্যদিকে সাধারণ মানুষ আশঙ্কায় রয়েছেন সেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ার। এখন দেখার বিষয়, সরকার কীভাবে এই সংকট নিরসন করে এবং শিশুদের টিকাদান কার্যক্রম যাতে বিঘ্নিত না হয়, সেই নিশ্চয়তা দেয়।
এম আর এম – ১৫৫০,Signalbd.com



