
ঢাকা, ১০ জুলাই ২০২৫ – চলতি বছরের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। মোট গড় পাশের হার ৬৮.৪৫ শতাংশ, যা গত বছরের ৮৩.৪ শতাংশের তুলনায় প্রায় ১৫ শতাংশ কম। এই ফলাফল শিক্ষা ক্ষেত্রে নতুন কিছু প্রশ্ন তোলে, তবে এক্ষেত্রে বিশেষভাবে লক্ষণীয় বিষয় হলো ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা পাস ও জিপিএ-৫ পাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছেন।
পাসের হার কমেছে, কিন্তু মেয়েরা এগিয়ে
২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ছিলেন ১৯ লাখ ৪ হাজার ৮৬ জন, যার মধ্যে মেয়েরা ৯ লাখ ৫২ হাজার ৩৮৯ জন এবং ছেলে পরীক্ষার্থী ৯ লাখ ৫১ হাজার ৬৯৭ জন। উত্তীর্ণ হয়েছে মোট ১৩ লাখ ৩ হাজার ৪২৬ জন। পাসের হার মেয়েদের মধ্যে ছিল ৭১.০৩ শতাংশ, যা ছেলেদের পাসের হার ৬৫.৮৮ শতাংশ থেকে বেশ এগিয়ে।
গত বছরের তুলনায় এই বছর পাসের হার কমলেও মেয়েদের পাসের হার এখনও ছেলেদের থেকে বেশি রয়েছে। গত বছর মেয়েদের পাসের হার ছিল ৮৪.৪৭ শতাংশ, ছেলেদের ছিল ৮১.৫৭ শতাংশ।
জিপিএ-৫ পাওয়ায় মেয়েরা ছেলেদের থেকে এগিয়ে
এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় সর্বোচ্চ গ্রেড জিপিএ-৫ পাওয়ার দিক থেকেও মেয়েরা ছেলেদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন। মোট জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩২ জন, যার মধ্যে মেয়েরা ৭৩ হাজার ৬১৬ জন এবং ছেলেরা ৬৫ হাজার ৪১৬ জন।
পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে
২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৭০ জন, যা ২০২৪ সালের তুলনায় প্রায় এক লাখ কম। এই কমতির পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, যেমন করোনার পর শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন, অনেকে হয়তো পুনরায় ভর্তি হয়নি, অথবা অন্যান্য বিকল্প শিক্ষা পদ্ধতি বেছে নিয়েছে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বক্তব্য
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির আজ এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্যগুলো প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “যদিও এবারের পরীক্ষায় গড় পাশের হার কমেছে, তবুও মেয়েদের সাফল্য বিশেষভাবে প্রশংসনীয়। তারা শিক্ষা ক্ষেত্রে আরও এগিয়ে যাচ্ছে, যা আমাদের জাতীয় শিক্ষানীতির জন্য ভালো সংকেত।”
ফলাফলে কমতির কারণ
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পাসের হারের এতো বড় পতনের পিছনে অনেক কারণ কাজ করছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:
- গত কয়েক বছরে শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি এবং মনোযোগে পরিবর্তন
- করোনা মহামারির কারণে শিক্ষাব্যবস্থায় দীর্ঘ বিরতি
- প্রায় এক লাখ পরীক্ষার্থীর কমে যাওয়া
- বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে সিলেবাস ও মূল্যায়ন পদ্ধতির পার্থক্য
শিক্ষাবোর্ডগুলোর ভূমিকা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
দেশের বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড ফলাফল বিশ্লেষণ করে আগামীতে শিক্ষার মান উন্নয়নে কাজ করছে। শিক্ষার্থীদের মানোন্নয়নে নিয়মিত প্রশিক্ষণ, শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার, এবং শিক্ষানীতি সংস্কারের মাধ্যমে তারা ফলাফল উন্নত করতে চাইছে।
মেয়েদের শিক্ষায় উন্নতি: একটি ইতিবাচক দিক
মেয়েদের শিক্ষায় এগিয়ে চলা আমাদের সমাজের জন্য অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। এটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের এই সাফল্য শিক্ষাব্যবস্থার সামগ্রিক উন্নতি এবং লিঙ্গ সমতার দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত।
ভবিষ্যতের জন্য করণীয়
শিক্ষাবিদরা পরামর্শ দিচ্ছেন, পাসের হার উন্নত করার জন্য:
- শিক্ষার্থীদের জন্য আধুনিক ও সহজবোধ্য শিক্ষাপদ্ধতি গ্রহণ
- শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধি
- পরিবারের সহযোগিতা ও শিক্ষার প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি
- পরীক্ষার সময় ছাত্রছাত্রীদের মানসিক চাপ কমানো
- অনলাইন ও অফলাইন শিক্ষার সঠিক সমন্বয়
সার্বিক বিশ্লেষণ: শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে
এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল থেকে স্পষ্ট যে শিক্ষার মান উন্নয়ন এখন সময়ের অন্যতম প্রধান দাবি। গড় পাসের হার কমে যাওয়া উদ্বেগজনক হলেও, মেয়েদের সফলতা আমাদের আশাবাদী করেছে। শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হলে সকল অংশগ্রহণকারীর—শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষার্থী এবং প্রশাসনের—একযোগে কাজ করতে হবে।
এসএসসি ফলাফল ২০২৫: প্রধান তথ্য ও পরিসংখ্যান
তথ্য | সংখ্যা (প্রায়) | মন্তব্য |
---|---|---|
মোট পরীক্ষার্থী | ১৯,০০৪,৮৬ | ২০২৪ সালের তুলনায় কম |
মোট উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী | ১৩,০০৩,৪২৬ | গড় পাসের হার ৬৮.৪৫% |
মেয়েদের অংশগ্রহণ ও উত্তীর্ণ | ৯৫২,৩৮৯ / ৬৭৬,৪৪৫ | পাসের হার ৭১.০৩% |
ছেলেদের অংশগ্রহণ ও উত্তীর্ণ | ৯৫১,৬৯৭ / ৬২৬,৯৮১ | পাসের হার ৬৫.৮৮% |
মোট জিপিএ-৫ প্রাপ্ত | ১,৩৯,০৩২ | মেয়েরা এগিয়ে |
মেয়েদের জিপিএ-৫ | ৭৩,৬১৬ | |
ছেলেদের জিপিএ-৫ | ৬৫,৪১৬ |
২০২৫ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। পাসের হার কমলেও মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় অধিক সফলতা অর্জন করেছে। জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক থেকেও মেয়েরা এগিয়ে। শিক্ষাবোর্ডের উদ্যোগে শিক্ষার মান উন্নয়নে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে, যা দেশের সামগ্রিক শিক্ষার ভবিষ্যতের জন্য আশাব্যঞ্জক।