বিশ্ব

ইয়েমেনে নার্স নিমিশা প্রিয়ার প্রাণ বাঁচাতে ভারতের ‘কিছুই করার নেই’

Advertisement

 আট বছর আগে খুনের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত কেরালার নার্স নিমিশা প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আর মাত্র একদিন বাকি। সুপ্রিম কোর্টে ভারত সরকার স্পষ্ট জানাল — কূটনৈতিক ও আইনি চেষ্টা করে তারা শেষ সীমায় পৌঁছে গেছে, এখন আর কিছুই করার নেই।

কোর্টে ভারতের অবস্থান ও সরকারি বক্তব্য

সোমবার সুপ্রিম কোর্টে ভারত সরকারের পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল আর ভেঙ্কটরামানি বলেন, “আমরা চেষ্টা করেও ইয়েমেনে আর কিছু করতে পারছি না। ভারতের সীমাবদ্ধতা আছে, আর আমরা সেই সীমায় পৌঁছে গেছি।”
তিনি জানান, ইয়েমেনের বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির মাধ্যমে আলোচনার চেষ্টা, মধ্যস্থতা, কূটনৈতিক যোগাযোগ — সব পথেই ব্যর্থতা এসেছে। এমনকি একজন প্রভাবশালী শেখের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু কোনোভাবেই ইয়েমেন সরকারের মনোভাব পরিবর্তন করা যায়নি।

আদালতের রায়ের দিন গণনার মধ্যে শুধুমাত্র ১৬ জুলাই (বুধবার) দিনটিই বাকি রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে সরকারি পক্ষের এমন বক্তব্যে হতাশা প্রকাশ করেছে মানবাধিকার কর্মী ও অভিযানে অংশ নেওয়া সংগঠনগুলো।

ঘটনা ও মামলা: কী ঘটেছিল?

নিমিশা প্রিয়া কেরালার একজন নার্স, যিনি পেশাগত কারণে ইয়েমেনে গিয়েছিলেন। অভিযোগ অনুযায়ী, ইয়েমেনের এক ব্যক্তি তাকে নানাভাবে নির্যাতন ও ব্ল্যাকমেইল করছিলেন। পরবর্তীতে সেই ব্যক্তিকে ইনজেকশন প্রয়োগ করে হত্যার অভিযোগ ওঠে নিমিশার বিরুদ্ধে।

২০১৭ সালে ইয়েমেনের আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেন। দীর্ঘদিন ধরেই পরিবার, বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এবং “সেভ নিমিশা প্রিয়া” নামে একটি আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম এই রায় প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছিল।

ভারতের চেষ্টা ও আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা

ভারত সরকার শুরু থেকেই কূটনৈতিকভাবে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করে। একাধিক দফা আলোচনায় বসা হয় ইয়েমেন সরকারের সঙ্গে।

তবে ইয়েমেনের আইন অনুযায়ী, নিহত ব্যক্তির পরিবার যদি আর্থিক ক্ষতিপূরণ গ্রহণ করে, তাহলে মৃত্যুদণ্ড থেকে অব্যাহতি মিলতে পারে। সেই চেষ্টায় ভারতের পক্ষ থেকে ৮.৫ কোটি টাকার প্রস্তাবও দেওয়া হয় নিহত ইয়েমেনি নাগরিকের পরিবারকে।

কিন্তু অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, “পরিবার সেই অর্থ গ্রহণ করতে রাজি হয়নি — তাদের মতে, এটি সম্মানের বিষয়।”

মানবিক আবেদন ও সেভ নিমিশা প্রিয়া আন্দোলন

‘সেভ নিমিশা প্রিয়া ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকশন কাউন্সিল’-এর পক্ষ থেকে বারবার আবেদন জানানো হয়েছে ভারত সরকারকে যেন শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করে যায়।

সংগঠনটির আইনজীবী আদালতে বলেন, “এই নার্স শুধুমাত্র আত্মরক্ষার জন্য এমনটা করেছিলেন। যদি নিহত ব্যক্তির পরিবার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিষয়টি দেখে, তাহলে এখনও একটি শেষ সুযোগ আছে।”

জনগণের প্রতিক্রিয়া ও কেরালায় উদ্বেগ

কেরালাজুড়ে এই ঘটনা ঘিরে ব্যাপক উদ্বেগ বিরাজ করছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘JusticeForNimisha’ হ্যাশট্যাগে চলছে ব্যাপক প্রচার।
একজন কেরালাবাসী বলেন, “আমরা একজন নার্সকে হারাতে যাচ্ছি, যিনি নিজের সম্মান রক্ষায় চরম পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছিলেন।”

মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, নারীদের নিরাপত্তা ও আত্মরক্ষার অধিকারে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হোক — এটি একটি উদাহরণ হতে পারত।

“আমরা যা যা সম্ভব, সব চেষ্টা করেছি — কিন্তু বাস্তবতা হলো, এখন আর কিছু করার নেই।” — অ্যাটর্নি জেনারেল আর ভেঙ্কটরামানি

ঘটনার সারসংক্ষেপ

ইয়েমেনে আটকে থাকা ভারতীয় নার্স নিমিশা প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের তারিখ ঘনিয়ে এসেছে। আট বছর আগে স্থানীয় এক নাগরিককে হত্যার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়া কেরালার এই নার্সকে বাঁচাতে ভারত সরকার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালালেও, সুপ্রিম কোর্টে আজ জানানো হয়েছে — “ভারতের আর কিছু করার নেই।”

নিমিশা প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার সম্ভাব্য দিন ১৬ জুলাই। শেষ মুহূর্তে কোনো অলৌকিক পরিবর্তন না ঘটলে, এই নার্সের ভাগ্য আর কেউ বদলাতে পারবে না।

তবে প্রশ্ন থেকেই যায় — একজন নারীর আত্মরক্ষার প্রয়াস যদি মৃত্যুদণ্ডে গিয়ে ঠেকে, তবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন আসলে কতটা কার্যকর?

বিশ্লেষকদের মতে, এই মামলার ভবিষ্যৎ পরিণতি শুধু ভারত নয়, বরং পুরো বিশ্বকেই নারীর নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার প্রশ্নে নতুন করে ভাবাবে।

এম আর এম – ০৩৪৭, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button