বাংলাদেশ

অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে ভারতীয় ট্রলারসহ ১৪ জেলে আটক

বঙ্গোপসাগরের ফেয়ারওয়ে বয়া সংলগ্ন গভীর সাগরে অবৈধভাবে প্রবেশ করে মাছ ধরার অভিযোগে ভারতীয় ট্রলার এফবি পারমিতাসহ ১৪ জেলেকে আটক করেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। আটক জেলেদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।
বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ জলসীমায় অনুপ্রবেশের দায়ে ১৪ জন ভারতীয় জেলেকে আটক করেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। শনিবার (২ আগস্ট) ভোর রাতে মোংলা বন্দরের অদূরে ফেয়ারওয়ে বয়া সংলগ্ন গভীর সমুদ্রে অভিযান চালিয়ে এফবি পারমিতা নামের ভারতীয় একটি ফিশিং ট্রলার আটক করা হয়। আটক ট্রলারে ইলিশসহ বিপুল পরিমাণ সামুদ্রিক মাছ জব্দ করা হয়েছে।

ঘটনাটি কীভাবে ঘটল

নৌবাহিনীর নিয়মিত টহলের অংশ হিসেবে এ অভিযান পরিচালিত হয়। নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ‘বানৌজা বিষখালী’ এই অভিযানে অংশ নেয়। ট্রলারটি বাংলাদেশ জলসীমায় প্রবেশ করে অবৈধভাবে মাছ ধরছিল বলে নিশ্চিত করে নৌবাহিনী। আটক হওয়া ১৪ জন জেলের বাড়ি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলায়।

অভিযান শেষে ট্রলারটি ও আটক জেলেদের মোংলা বন্দরে নিয়ে আসা হয়। রবিবার সকালে ট্রলারসহ জেলেদের স্থানীয় থানার কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়।

নৌবাহিনীর কর্মকর্তাদের বক্তব্য

মোংলা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, “নৌবাহিনী নিয়মিত টহলের অংশ হিসেবে এ ধরনের অভিযান চালায়। আটক ট্রলার থেকে উদ্ধার করা মাছ সরকারি নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করা হবে। এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

মোংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনিসুর রহমান বলেন, “বাংলাদেশের জলসীমায় অনুপ্রবেশ করে অবৈধভাবে মাছ ধরার অভিযোগে ভারতীয় জেলেদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হবে। এরপর আদালতের মাধ্যমে তাদের জেলহাজতে পাঠানো হবে।”

আগে এমন ঘটনা ঘটেছিল

এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। চলতি বছরের ১৪ জুলাই একই এলাকায় নৌবাহিনী আরও দুটি ভারতীয় ট্রলার এফবি ঝড় ও এফবি মঙ্গলচণ্ডী আটক করেছিল। ওই সময় ৩৪ জন ভারতীয় জেলেকে গ্রেপ্তার করা হয়। বঙ্গোপসাগরে এ ধরনের অবৈধ অনুপ্রবেশের ঘটনা নিয়মিত ঘটছে, যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় জেলেরা।

কেন বাড়ছে এ ধরনের অনুপ্রবেশ

সমুদ্র বিশেষজ্ঞদের মতে, বঙ্গোপসাগরে প্রচুর ইলিশ ও অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের প্রাচুর্য ভারতীয় জেলেদের এ অঞ্চলে টেনে আনে। এছাড়া ভারতের উপকূলীয় এলাকায় মাছের সংকট দেখা দেওয়ায় তারা বাংলাদেশ জলসীমায় প্রবেশের ঝুঁকি নিচ্ছে।

বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড নিয়মিত টহল দিলেও অনুপ্রবেশকারীদের কারণে সীমান্তবর্তী সমুদ্র এলাকায় জটিলতা তৈরি হচ্ছে। স্থানীয় জেলেদের অভিযোগ, বিদেশি ট্রলার ঢুকে পড়লে বাংলাদেশের জেলেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষকদের মত

সামুদ্রিক আইন বিশ্লেষকদের মতে, সমুদ্রসীমা অতিক্রম করে মাছ ধরা আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। এ ধরনের ঘটনায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কড়াকড়ি নজরদারি অব্যাহত রাখা উচিত। তারা আরও বলেন, সমুদ্রসীমায় ইলিশের প্রাচুর্য রক্ষায় প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।

পরবর্তী করণীয়

আটক জেলেদের সোমবার আদালতে সোপর্দ করা হবে। এরপর আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আটক হওয়া ট্রলার থেকে উদ্ধারকৃত মাছ সরকারি নিলামের মাধ্যমে বিক্রি হয়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হবে।

বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার নিরাপত্তা ও মাছের সম্পদ রক্ষায় নৌবাহিনীর এ অভিযান চলমান থাকবে বলে জানানো হয়েছে।

এম আর এম – ০৬৬৭, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button