কী ঘটেছিল ময়নার সঙ্গে, মরদেহ কীভাবে গেল মসজিদে?

নয় বছর বয়সী শিশু মায়মুনা আক্তার ময়নার নিখোঁজের একদিন পর মিলল তার রক্তাক্ত মরদেহ। বাড়ির পাশের মসজিদের দ্বিতীয় তলায় লাশ উদ্ধারে নেমে এল শোকের ছায়া। এলাকাবাসীর প্রশ্ন—কে নিল এ নিষ্পাপ প্রাণটি? তদন্তে নেমেছে একাধিক সংস্থা।
ঘটনার শুরু:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার হাবলিপাড়া এলাকায় ঘটেছে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। নয় বছরের শিশু মায়মুনা আক্তার ময়না শনিবার দুপুরে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। পরদিন রোববার সকালে পাওয়া যায় তার রক্তাক্ত নিথর দেহ, বাড়ির পাশের মসজিদের দ্বিতীয় তলায়। একদিকে শিশুর করুণ পরিণতি, অন্যদিকে ধর্মীয় স্থানে এমন ঘটনা—পুরো এলাকায় নেমে এসেছে শোক, উত্তেজনা আর আতঙ্ক।
কীভাবে মিলল মরদেহ?
শনিবার (৫ জুলাই) বিকেল ৩টার দিকে বাড়ি থেকে খেলতে বের হয় ময়না। কিন্তু এরপর থেকে তাকে আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরিবার ও এলাকাবাসী মাইকিং, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট এবং আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি ঘুরে তার খোঁজ চালাতে থাকে।
রাতেই ময়নার পরিবার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। এরপর পুলিশের পাশাপাশি স্থানীয়রাও রাতভর খোঁজ চালিয়ে যান।
অবশেষে রোববার সকালে পাশের হাবলিপাড়া জামে মসজিদের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে মসজিদে পড়তে আসা বাচ্চারা দেখতে পায় ময়নার রক্তাক্ত মরদেহ।
মায়ের দাবি ও এলাকাবাসীর প্রতিক্রিয়া:
ময়নার মা মোসাম্মৎ নীপা আক্তার বলেন,
“আমার মেয়েকে ধর্ষণের পর খুন করা হয়েছে। আমি চাই, যারা এই নৃশংস কাজ করেছে, তাদের ফাঁসি হোক।”
এ ঘটনায় পুরো গ্রামজুড়ে নেমে আসে নীরবতা আর ক্ষোভ। স্থানীয়রা বলেন, “মসজিদের মতো পবিত্র স্থানে এমন ভয়ঙ্কর ঘটনা অকল্পনীয়। আমরা ন্যায়বিচার চাই।”
জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্ত:
ঘটনার পরপরই সরাইল থানা পুলিশ মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
সরাইল সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার তপন সরকার বলেন,
“প্রাথমিকভাবে এটিকে হত্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ধর্ষণের বিষয়টি ময়নাতদন্তের রিপোর্টের ভিত্তিতে নিশ্চিত হওয়া যাবে।”
তিনি আরও জানান, পিবিআই, সিআইডি সহ একাধিক সংস্থা এ ঘটনার তদন্ত করছে।
পরিবারের মামলা ও পুলিশের পদক্ষেপ:
সোমবার সকালে ময়নার মা থানায় ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।
ওসি মোরশেদুল আলম চৌধুরী জানান,
“ঘটনার প্রতিটি দিক বিশ্লেষণ করে আমরা দ্রুতই অপরাধী শনাক্ত করতে পারব।”
এমন ঘটনা কি এর আগেও ঘটেছে?
এই অঞ্চলে শিশু নিখোঁজ বা নির্যাতনের মতো ঘটনা আগে ঘটলেও এভাবে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে লাশ উদ্ধার—এটি ব্যতিক্রমী ও গভীর উদ্বেগের বিষয়। এলাকাবাসীর অনেকে বলছেন, মসজিদে সিসি ক্যামেরা না থাকা বা নিরাপত্তার অভাব ঘটনার কারণ হতে পারে।
কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
একজন শিশু অধিকার কর্মী জানান,
“এটি শুধু একটি শিশুহত্যা নয়, এটি আমাদের সামাজিক ও ধর্মীয় নিরাপত্তাব্যবস্থার ব্যর্থতা। তদন্তের স্বচ্ছতা এবং দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতেই হবে।”
অপরাধ বিশ্লেষকদের মতে, এমন ঘটনায় দ্রুত বিচার না হলে অপরাধীরা আরও সাহসী হয়ে ওঠে।
“ধর্ষণ ও খুনের মতো বর্বরতায় আমরা হতবাক। ধর্মীয় স্থানে এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না”—একজন স্থানীয় বাসিন্দা
কী হতে পারে সামনে?
ময়নার করুণ মৃত্যু শুধু তার পরিবার নয়, পুরো সমাজকে কাঁদিয়েছে। এখন প্রশ্ন—এই নিষ্পাপ শিশুর ওপর এমন পাশবিকতা চালালো কে?
তদন্ত চলছে, সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ হচ্ছে। কিন্তু যতক্ষণ না প্রকৃত অপরাধী ধরা পড়ে
এম আর এম – ০২১০, Signalbd.com