“সায়মা ওয়াজেদ: ৩৩ কোটি টাকার সিএসআর ফান্ড আত্মসাতের অভিযোগ সূচনা ফাউন্ডেশনে”

ঢাকা: সূচনা ফাউন্ডেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান ব্যাংকের করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি (সিএসআর) ফান্ড থেকে প্রায় ৩৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে সায়মা ওয়াজেদ (পুতুল) বিরুদ্ধে। তাঁর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ওঠার পেছনে সহযোগিতা করেছেন এক্সিম ব্যাংক ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) এর সাবেক চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম মজুমদার।
এই অভিযোগের ভিত্তিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত শুরু করেছে। দুদক সূত্র জানাচ্ছে, ব্যাংকগুলোর সিএসআর ফান্ডের টাকা ব্যবহার করা হয়েছিল জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য, কিন্তু সায়মা ওয়াজেদ সেই টাকা জোরপূর্বক আত্মসাৎ করেছেন। ২০টি ব্যাংক এই ফান্ডে অংশগ্রহণ করেছিল, এবং এর মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক এবং ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি অর্থ দিয়েছে।
ব্যাংকগুলোকে বাধ্য করা হয়েছিল টাকা দেওয়ার জন্য
এ বিষয়ে প্রথম আলোকে একাধিক ব্যাংক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, বিএবি এর সাবেক চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম মজুমদার তাঁদের ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়েছিলেন, যার ফলে তারা বাধ্য হয়ে সূচনা ফাউন্ডেশনকে অর্থ দিয়েছেন। এই অর্থ ব্যাংকগুলোর সিএসআর ফান্ড থেকে নেওয়া হয়েছিল, যা মূলত শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার জন্য নির্ধারিত ছিল।
কীভাবে ঘটেছিল আত্মসাৎ?
২০১৪ সালে সায়মা ওয়াজেদ সূচনা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন। ফাউন্ডেশনটি ছিল প্রতিবন্ধীদের জন্য আর্থিক সহযোগিতা প্রদানের উদ্দেশ্যে গঠিত। ২০১৭ সালে, জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির কার্যাবলির সহায়ক হিসেবে তিনি সরকারের পক্ষ থেকে নতুন দায়িত্ব লাভ করেন। এর পর থেকেই সায়মা ওয়াজেদ সূচনা ফাউন্ডেশনের হর্তাকর্তা হিসেবে তার ক্ষমতা ব্যবহার করেছেন।
বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ভূমিকা
সূচনা ফাউন্ডেশনের জন্য সবচেয়ে বেশি টাকা দিয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক (প্রায় ১০ কোটি টাকা) এবং ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (প্রায় ১০ কোটি টাকা)। অন্য ব্যাংকগুলো, যেমন ইউনিয়ন ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক ও এনসিসি ব্যাংক এর মতো আরও কয়েকটি ব্যাংকও ফান্ড প্রদান করেছে।
দুদকের তদন্ত এবং মামলা
এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১৬ সাল থেকে সূচনা ফাউন্ডেশন এই ফান্ডের টাকা গ্রহণ করতে শুরু করে এবং ২০টি ব্যাংক মোট ৩৩ কোটি ৫ লাখ টাকা দিয়েছে। দুদক এই অভিযোগে সায়মা ওয়াজেদ এবং নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। দুদক এই মামলার তদন্ত করছে এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছে।
মিথ্যা শিক্ষকতার দাবি ও মামলা
একই সময়ে, সায়মা ওয়াজেদ বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে, তিনি বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (সাবেক বিএসএমএমইউ) শিক্ষকতার মিথ্যা দাবি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া আঞ্চলিক পরিচালক পদে আবেদন করেছিলেন এবং নির্বাচিত হয়েছিলেন। এই অভিযোগের ভিত্তিতেও দুদক মামলা করেছে।
এই মামলার প্রেক্ষাপটে সায়মা ওয়াজেদ এবং মো. নজরুল ইসলাম মজুমদার এর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা দেশের ব্যাংক খাত ও সিএসআর ফান্ড ব্যবহারের স্বচ্ছতা নিয়ে নতুন প্রশ্ন উঠিয়েছে। দুদকের তদন্তের ফলে যদি এই অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তবে এটি দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জন্য বড় একটি ধাক্কা হতে পারে।