ট্রাম্পের নতুন শুল্কে অস্থির বিশ্ববাজার, জনগণকে ধৈর্য ধরতে বললেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট

বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতির প্রভাব পড়তে শুরু করেছে, যার নেতিবাচক অভিঘাত সবচেয়ে তীব্রভাবে অনুভূত হচ্ছে নিজ দেশের বাজারেই। গতকাল শনিবার থেকে কার্যকর হওয়া ট্রাম্প প্রশাসনের ১০ শতাংশ বেসলাইন শুল্কে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি প্রবল চাপে পড়ে গেছে। দেশজুড়ে শেয়ারবাজারে ধস, সাধারণ জনগণের মধ্যে উদ্বেগ এবং গণবিক্ষোভ—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি বেশ উত্তাল।
ট্রাম্পের ভাষ্য: ‘অর্থনৈতিক বিপ্লব চলছে’
এই অস্থিরতার মধ্যেই ট্রাম্প নিজেকে আত্মবিশ্বাসীভাবে তুলে ধরেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক বার্তায় তিনি বলেন,
“আপনারা ধৈর্য ধরুন, শক্ত থাকুন। এই যাত্রা সহজ হবে না, কিন্তু ফলাফল হবে ঐতিহাসিক। যুক্তরাষ্ট্রেরই জয় হবে।”
ট্রাম্প এই শুল্কনীতিকে একটি ‘অর্থনৈতিক বিপ্লব’ বলে উল্লেখ করলেও মার্কিন জনগণের বড় একটি অংশ তাঁর এই কথায় আস্থা রাখছেন না।
দেশজুড়ে বিক্ষোভ, শেয়ারবাজারে ধস
শুল্ক কার্যকর হওয়ার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সহস্রাধিক স্থানে হাজার হাজার মানুষ অংশ নিয়েছে এই বিক্ষোভে, যার অনেকগুলোতে সংঘর্ষও হয়েছে।
একইসঙ্গে ভয়াবহ পতন ঘটেছে মার্কিন শেয়ারবাজারে।
- এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক একদিনেই ৬ শতাংশ পড়ে গেছে।
- ডাও জোনস ও ন্যাসডাক-এর মতো অন্যান্য বড় সূচকও কমপক্ষে ৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, গত পাঁচ বছরে মার্কিন শেয়ারবাজারের জন্য এটি সবচেয়ে বাজে সপ্তাহ।
বৈশ্বিক বাজারেও কম্পন
শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, এই শুল্কনীতির ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে।
- যুক্তরাজ্যের এফটিএসই ১০০ সূচক ৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, যা ২০২০ সালের পর সর্বনিম্ন।
- জার্মানি, ফ্রান্স, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনের বাজারেও বড় ধস দেখা গেছে।
আরও শুল্ক আসছে ৯ এপ্রিল থেকে
ট্রাম্প প্রশাসন এখানেই থেমে নেই। ৯ এপ্রিল থেকে আরও কঠোর শুল্ক আরোপের ঘোষণা এসেছে। ট্রাম্প জানিয়েছেন,
“যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য ঘাটতির জন্য দায়ী, তাদের ওপর সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হবে।”
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপরও ২০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের কথা বলেছেন তিনি।
ইলন মাস্কের প্রস্তাব: ‘মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল’
এই সংকটময় পরিস্থিতিতে ট্রাম্প প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ এবং ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি (ডিওজিই)-র প্রধান ইলন মাস্ক একটি সমাধানের প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন,
“ইউরোপ ও আমেরিকার মধ্যে একটি ‘জিরো ট্যারিফ জোন’ গঠন করা যেতে পারে, যা ভবিষ্যতে একটি মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলে পরিণত হতে পারে।”
যুক্তরাষ্ট্র-চীন টানাপোড়েনে নতুন মোড়
এদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের চীনবিরোধী শুল্কনীতির জবাবে বেইজিংও তৎপর হয়ে উঠেছে।
- যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত পণ্যে ৩৪ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে চীন।
- একইসঙ্গে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)-তে আনুষ্ঠানিক অভিযোগও দায়ের করেছে তারা।
ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন শুল্কনীতি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এক নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। মার্কিন জনগণের প্রতিক্রিয়া, বিশ্ববাজারের প্রতিক্রিয়া এবং অন্যান্য দেশের প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ—সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক অর্থনীতি এক অনিশ্চিত পথে হাঁটছে। এমন পরিস্থিতিতে ট্রাম্প প্রশাসনের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ এবং বৈশ্বিক নেতাদের প্রতিক্রিয়া নির্ধারণ করবে বিশ্ববাণিজ্যের আগামী দিকনির্দেশনা।