বিশ্ব

গাজায় ইজরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে ইয়েমেনে ব্যাপক বিক্ষোভ ও সমাবেশ

Advertisement

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে ইয়েমেনজুড়ে আবারও বিক্ষোভ ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজধানী সানাসহ বিভিন্ন শহরে লাখো মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন। ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানাতে আয়োজিত এ সমাবেশে ইসরায়েল বিরোধী স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে পুরো নগরী। আয়োজকরা বলেন, এ প্রতিবাদ শুধু ফিলিস্তিনের জন্য নয়, বরং মুসলিম উম্মাহর প্রতি আক্রমণের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধের প্রতীক।

রাজধানী সানায় লাখো মানুষের সমাবেশ

শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) ইয়েমেনের রাজধানী সানায় সবচেয়ে বড় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সানার সাবিইন স্কয়ার ও আশপাশের সড়ক জনসমুদ্রে পরিণত হয়। আয়োজক সূত্রে জানা যায়, কয়েক লাখ মানুষ হাতে ফিলিস্তিনের পতাকা, ব্যানার ও পোস্টার নিয়ে বিক্ষোভে অংশ নেন। ইসরায়েলবিরোধী স্লোগানে প্রকম্পিত হয় রাজপথ।

প্রতিবাদকারীদের অনেকের হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড, যাতে লেখা ছিল—“শহীদদের প্রতি অঙ্গীকার, গাজার পাশে চিরকাল”। অংশগ্রহণকারীরা দাবি জানান, গাজায় বোমা হামলা বন্ধ করে ইসরায়েলকে অবিলম্বে ফিলিস্তিনিদের মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।

হুতি আন্দোলনের সক্রিয় অংশগ্রহণ

ইয়েমেনের হুতি আন্দোলনের সমর্থকরাই বিক্ষোভে সবচেয়ে বেশি উপস্থিত ছিলেন। শুরু থেকেই হুতিরা গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সরব। তারা নিয়মিতভাবে লোহিত সাগরে ইসরায়েল-সম্পর্কিত জাহাজে হামলা চালাচ্ছে এবং নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করছে।

হুতিদের পক্ষ থেকে বলা হয়, গাজায় হামলা থামানো না পর্যন্ত তারা প্রতিবাদ অব্যাহত রাখবে। হুতিদের ঘোষণায় আরও জানানো হয়, ইসরায়েল শুধু ফিলিস্তিন নয়, মুসলিম বিশ্বের অস্তিত্বের ওপর হুমকি সৃষ্টি করেছে।

আয়োজকদের বিবৃতি ও বার্তা

সমাবেশ শেষে আয়োজকদের পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, “পবিত্র রক্ত ঝরিয়ে আমরা নৈতিক অবস্থানের মূল্য দিচ্ছি, আর এর ফলাফল নিশ্চিত বিজয়। এ বিজয় শুধু এই প্রজন্মের জন্য নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও অটুট থাকবে।”

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মুসলিম উম্মাহর যেকোনো অংশে আক্রমণ মানে পুরো উম্মাহর ওপর আক্রমণ। তাই গাজার প্রতি সমর্থন থেকে এক ইঞ্চি পিছু হটার প্রশ্নই আসে না। আয়োজকরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও আহ্বান জানিয়েছেন, যেন তারা ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ায় এবং ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও নিন্দা

শুধু গাজার ঘটনাই নয়, আয়োজকরা সাম্প্রতিক কাতারে হামাস নেতাদের ওপর ইসরায়েলি হামলারও তীব্র নিন্দা জানান। তাদের মতে, এটি কাতারের সার্বভৌমত্বের সরাসরি লঙ্ঘন।

আন্তর্জাতিকভাবে এই বিক্ষোভের প্রতিধ্বনি স্পষ্ট হয়েছে। ইরান, লেবানন, ইরাকসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ইসরায়েলবিরোধী প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইয়েমেনে এমন জনসমাগম শুধু স্থানীয় প্রতিক্রিয়া নয়, বরং এটি মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের প্রতি ক্রমবর্ধমান অসন্তোষের প্রতিচ্ছবি।

কেন ইয়েমেন এত সরব?

২০১৪ সাল থেকে ইয়েমেন গৃহযুদ্ধে নিমজ্জিত। হুতি আন্দোলন সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত। কিন্তু গাজার ইস্যুতে তারা ঐক্যবদ্ধ ও স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছে। এর আগে থেকেই হুতিরা ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে আসছিল।

বিশ্লেষকদের মতে, ইয়েমেনের জনগণ গাজার প্রতি সমর্থন দেখিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থানও শক্ত করছে। একইসঙ্গে তারা মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের বার্তা ছড়িয়ে দিতে চাইছে।

প্রতিবাদের ভবিষ্যৎ প্রভাব

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইয়েমেনে চলমান এসব বিক্ষোভ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি বড় বার্তা দিচ্ছে। এটি প্রমাণ করছে, গাজায় ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে জনমত কতটা শক্তিশালী।

এছাড়া, হুতি আন্দোলনের অবস্থান শুধু ইয়েমেন নয়, বরং আঞ্চলিক রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলছে। তারা লোহিত সাগর ও আশপাশের এলাকায় ইসরায়েলি জাহাজে হামলা চালিয়ে কার্যত মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের অর্থনৈতিক ও সামরিক স্বার্থে চাপ সৃষ্টি করছে।

পরিশেষে

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে ইয়েমেনজুড়ে চলমান বিক্ষোভ শুধু একটি সাধারণ সমাবেশ নয়। এটি মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের প্রতীক, যা ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান প্রকাশ করছে। তবে পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে, তা নির্ভর করছে আঞ্চলিক রাজনীতির ভবিষ্যৎ মোড় ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবস্থানের ওপর।

এম আর এম – ১৩০৫,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button