অর্থনীতি

২০২৫-২৬ অর্থবছরে ভারতের প্রবৃদ্ধি হবে ৬.৫%: ফিচ রেটিংস

ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আগামী দুই অর্থবছরেও ইতিবাচক ধারায় থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং সংস্থা ফিচ রেটিংস। সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ভারতের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হবে ৬.৫ শতাংশ। তবে এর পরের অর্থবছরে (২০২৬-২৭) তা সামান্য কমে ৬.৩ শতাংশে নেমে আসতে পারে।

ফিচ রেটিংসের পূর্বাভাস

ফিচ রেটিংসের মার্চ মাসের ‘ইকোনমিক আউটলুক রিপোর্ট’-এ উল্লেখ করা হয়েছে যে ভারতের অর্থনীতি স্থিতিশীল গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। সংস্থাটি জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬.৩ শতাংশ। এ হিসাবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি সামান্য বাড়লেও ২০২৬-২৭ অর্থবছরে তা কিছুটা কমবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে রপ্তানি খাতের তুলনামূলকভাবে কম অবদান রয়েছে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ভারতের পণ্যে শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত দেশটির অর্থনীতিতে বড় কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতি ও ভারতের প্রভাব

ফিচ রেটিংসের মতে, ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র একটি আক্রমণাত্মক বাণিজ্য নীতি অনুসরণ করছে। তবে ভারত তার অভ্যন্তরীণ চাহিদার ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় এই নীতির কারণে দেশটির অর্থনীতি বড় ধাক্কা খাবে না।

ভারতীয় বাজার বিশেষভাবে স্থানীয় চাহিদার ওপর নির্ভরশীল। ফিচের বিশ্লেষকদের মতে, ভারতে ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং অবকাঠামো উন্নয়ন খাতের প্রসার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

ভারতের বাজেট ও অর্থনৈতিক নীতি

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেছেন। সেখানে কর ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বেশ কিছু বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে, যার ফলে জনগণের হাতে অতিরিক্ত অর্থ থাকবে।

ফিচের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, কর ছাড়ের কারণে ভারতীয়দের ব্যয় বাড়বে, যা অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা বাড়িয়ে দেবে। বিশেষ করে ভোগ্যপণ্য, আবাসন ও পরিষেবা খাতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে সামগ্রিকভাবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে।

জিডিপি প্রবৃদ্ধির সাম্প্রতিক চিত্র

২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে শেষ হওয়া প্রান্তিকে ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৬.২ শতাংশ। এর আগের ত্রৈমাসিকে (২০২৪-২৫ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে) এটি ছিল ৫.৬ শতাংশ, যা গত সাতটি প্রান্তিকের মধ্যে সর্বনিম্ন।

বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৪ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধির হার কমার কারণ ছিল কিছু নির্দিষ্ট খাতের ধীরগতি। তবে ২০২৪ সালের শেষ প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধির গতি কিছুটা বেড়েছে, যা আগামী অর্থবছরের জন্য ইতিবাচক ইঙ্গিত বহন করে।

ভারত হবে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি?

বিশ্বখ্যাত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান মরগ্যান স্ট্যানলির সাম্প্রতিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৮ সালের মধ্যে ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে উঠবে। প্রতিষ্ঠানটি দাবি করেছে, ওই সময় ভারতের জিডিপির আকার বার্ষিক ৫.৭ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে।

বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির তালিকায় ভারত পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে। ২০২৩ সালে ভারতের মোট অর্থনীতির আকার ছিল ৩.৫ ট্রিলিয়ন ডলার। ২০২৫ সালের মধ্যে এটি ৪.৭ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

যদি ভারতের অর্থনীতি এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখে, তবে ২০২৮ সালের মধ্যে দেশটি জার্মানিকে পেছনে ফেলে তৃতীয় স্থানে উঠে আসবে। বর্তমানে এই তালিকায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও জার্মানি।

ভারতের প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি

বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পেছনে মূল চালিকাশক্তিগুলো হলো:

  1. স্থানীয় চাহিদা বৃদ্ধি: ভারতের বিশাল জনগোষ্ঠী এবং ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণির কারণে ভোগ্যপণ্যের বাজার প্রসারিত হচ্ছে।
  2. পরিকাঠামো খাতে বিনিয়োগ: অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারের বড় বিনিয়োগ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করছে।
  3. তথ্যপ্রযুক্তি ও পরিষেবা খাত: ভারতের আইটি এবং স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম দ্রুত বিকাশমান, যা অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে।
  4. সরকারি নীতি সহায়তা: কেন্দ্রীয় সরকারের কর হ্রাস, ভর্তুকি ও প্রণোদনা মূলক নীতি প্রবৃদ্ধির গতি বাড়াচ্ছে।

সংক্ষেপে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস

অর্থবছরজিডিপি প্রবৃদ্ধি হার (%)
২০২৪-২৫৬.৩
২০২৫-২৬৬.৫
২০২৬-২৭৬.৩

উপসংহার

ফিচ রেটিংসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী কয়েক বছরে ভারতের অর্থনীতি ইতিবাচক গতিতে এগিয়ে যাবে। তবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতি কিছু চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে।

তবে, ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারের শক্তিশালী অবস্থান এবং সরকারি নীতিসমূহ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করা হচ্ছে। তাই, ভারত ২০২৮ সালের মধ্যে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে উঠতে পারে—এমন আশার কথাই বলছে আন্তর্জাতিক গবেষণা ও বিনিয়োগ সংস্থাগুলো।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button