
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার এক কৃষকের জীবনের শেষ অধ্যায় রচিত হলো খেতের মাটিতে—বজ্রপাতের আঘাতে। সকালের শান্ত প্রকৃতিও বজ্রাঘাতে বদলে গেল শোকের বাতাবরণে।
আজ সোমবার সকালে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার শীলকূপ ইউনিয়নে বজ্রপাতে মোহাম্মদ ফিরোজ (৩৬) নামের এক কৃষক নিহত হয়েছেন। স্থানীয় সূত্র ও প্রশাসনের তথ্যমতে, সকাল পৌনে ৯টার দিকে নিজ গ্রামের সবজিখেতে কাজ করার সময় বজ্রপাতের কবলে পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।
নিহত ফিরোজের পরিচয় ও পরিবার
নিহত মোহাম্মদ ফিরোজ পূর্ব শীলকূপ ইসমাইল সিকদার বাড়ির বাসিন্দা। তিনি ছিলেন মৃত মো. এয়াকুব আলীর ছেলে। পরিবার ও প্রতিবেশীদের ভাষ্যমতে, ফিরোজ ছিলেন একজন পরিশ্রমী কৃষক। তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে। পরিবারে তিনিই ছিলেন প্রধান উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রাশেদ নূরী বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সকালে খেতে কাজ করার সময় বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে গেলেও ততক্ষণে ফিরোজের প্রাণ চলে গেছে।
নিহতের দাফন ও প্রশাসনিক কার্যক্রম
ইউপি চেয়ারম্যান আরও বলেন, ঘটনাটি পুলিশকে জানানো হয়েছে। পরিবারের অনুরোধে এবং প্রশাসনিক অনুমতি নিয়ে নিহত ফিরোজকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফনের প্রস্তুতি চলছে। এলাকাজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
বজ্রপাত: এক নীরব ঘাতক
বাংলাদেশে প্রতিবছরই বজ্রপাতে প্রাণ হারাচ্ছেন বহু মানুষ, বিশেষত খোলা মাঠে বা কৃষি কাজে নিয়োজিত অবস্থায়। বজ্রপাত এখন দেশে একটি ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সরকারি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বজ্রপাতে অন্তত ৩৫০ জনের মৃত্যু হয়, যাদের বড় অংশ কৃষক ও খোলা স্থানে কাজরত শ্রমজীবী মানুষ। চলতি বছরও বজ্রপাতের কারণে মৃত্যুর হার বাড়ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আবহাওয়াবিদদের সতর্কতা
আবহাওয়া অধিদপ্তর আগেই জানিয়েছে, মে মাসে বৃষ্টি ও বজ্রপাতের প্রবণতা বাড়বে। গত সপ্তাহেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বজ্রপাতে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে বজ্রঝুঁকি বেশি থাকে বলে সতর্কতা দেওয়া হয়েছে।
কীভাবে সতর্ক থাকা যায়?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বজ্রপাতের সময় খোলা জায়গা, মাঠ, নদী বা পুকুরপাড়ে অবস্থান না করাই শ্রেয়। কৃষকদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ করণীয় তুলে ধরা হলো:
- বজ্রপাত শুরু হলে দ্রুত খোলা জায়গা থেকে সরে এসে নিরাপদ আশ্রয়ে যান
- গাছের নিচে আশ্রয় নেওয়া বিপজ্জনক হতে পারে
- ধাতব জিনিসপত্র শরীর থেকে দূরে রাখতে হবে
- কৃষিকাজের সময় আকাশে কালো মেঘ দেখা দিলে দ্রুত কাজ গুটিয়ে ফেলুন
সামাজিক সহানুভূতির আহ্বান
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, নিহত কৃষকের পরিবারকে জরুরি সহায়তা দিতে স্থানীয় প্রশাসন ও সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত। এ ধরনের দুর্ঘটনায় আর্থিক ও মানসিক বিপর্যয়ে পড়ে যায় পরিবার। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পরিবারের জন্য আর্থিক সহায়তা ও ক্ষতিপূরণ দাবি উঠছে।
সরকারি সহায়তার দৃষ্টি আকর্ষণ
যেহেতু বজ্রপাত এখন একটি জাতীয় দুর্যোগ হিসেবে বিবেচিত হয়, তাই বজ্রপাতে নিহতদের পরিবারকে তাৎক্ষণিক সহায়তা ও পুনর্বাসনের দাবি জানানো হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের তরফ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সহায়তা ঘোষণা করা হয়নি।
মোহাম্মদ ফিরোজের মৃত্যু একটি ব্যক্তি জীবনের ট্র্যাজেডি হলেও, এটি দেশের হাজারো কৃষক পরিবারের শঙ্কার প্রতিফলন। আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাবে এখন সাধারণ মানুষকেও প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে আরও সতর্ক হতে হবে। একইসঙ্গে প্রয়োজন সরকারি পর্যায়ে আগাম সতর্কবার্তা জারি, সচেতনতা কর্মসূচি এবং দ্রুত ক্ষতিপূরণ নীতিমালা বাস্তবায়ন।