বিশ্ব

ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনা: ফিলিস্তিনিদের ফেরার অধিকার থাকবে না

Advertisement

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার পরিকল্পনা অনুযায়ী গাজা উপত্যকাকে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে আনার ঘোষণা দিয়েছেন এবং বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের গাজায় ফিরে যাওয়ার কোনো অধিকার দেওয়া হবে না। তিনি এই পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন ফক্স নিউজকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে।

গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসনের জন্য আলাদা ছয়টি জায়গা তৈরি করার পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প। কিন্তু তিনি নিশ্চিত করেছেন যে, গাজায় কোনো ফিলিস্তিনির ফিরে আসার অনুমতি দেওয়া হবে না। ট্রাম্পের দাবি, ফিলিস্তিনিদের জন্য যেসব নতুন এলাকা তৈরি করা হবে, তা তাদের জন্য আরও ভাল অবস্থানে থাকবে। তাঁর মতে, গাজা উপত্যকা এখনো বসবাসের জন্য উপযুক্ত নয়, এবং এর বদলে অন্যান্য নিরাপদ জায়গায় ফিলিস্তিনিদের বসবাসের ব্যবস্থা করা হবে।

ট্রাম্পের পরিকল্পনা: গাজার নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্রের হাতে

ট্রাম্পের পরিকল্পনায় গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের ফেরার অধিকার বাতিল করা হলেও, তারা মিসর এবং জর্ডানে সরিয়ে নেওয়ার কথা বলেন। এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়েছে আরব দেশগুলো। তবে ট্রাম্প বলছেন, গাজার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার মাধ্যমে তিনি ওই এলাকা পুনর্গঠন করবেন এবং সেখানে বসবাসের জন্য সুস্থ ও নিরাপদ জায়গা তৈরি করবেন।

তিনি বলেন, “ফিলিস্তিনিরা গাজায় ফিরে যাবে না, কারণ আমি তাদের জন্য একটি সুন্দর, স্থায়ী এবং বসবাসযোগ্য জায়গা তৈরি করছি। আমি এই পরিকল্পনাকে একটি রিয়েল এস্টেট উন্নয়নের মতো দেখছি। এটি একটি নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে, যেখানে তারা ভালো অবস্থানে থাকতে পারবে।”

নিরাপদ এলাকা: ফিলিস্তিনিদের জন্য নতুন আশ্রয়

গাজা উপত্যকায় ২০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনির বসবাস, যাদের জন্য ট্রাম্প নতুন এলাকা তৈরি করার কথা বলেছেন। এই নতুন এলাকা গাজার কাছে নিরাপদ হবে এবং সেগুলোর জন্য তহবিলও বরাদ্দ করা হবে। ট্রাম্পের ভাষ্যমতে, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তেমন ব্যয় বাড়বে না এবং এটি ভবিষ্যতে গাজার উন্নয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে।

তিনি দাবি করেন, গাজার পুনর্গঠনে যে অর্থ খরচ হবে, তা খুবই সাশ্রয়ী হবে এবং এটি একটি ‘সুন্দর’ জায়গা হিসেবে গড়ে উঠবে। “এই নতুন পরিকল্পনাটি শুধুমাত্র ফিলিস্তিনিদের জন্য নয়, বরং পুরো অঞ্চলের জন্য একটি উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ হবে।”

প্রতিরোধ এবং সমালোচনা

এদিকে, ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা শুরু থেকেই আরব দেশগুলোর পক্ষ থেকে তীব্র বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছে। মিসর এবং জর্ডান তাদের সম্মতি দেয়নি, এবং তারা জানিয়েছে যে গাজার ফিলিস্তিনিদের স্থানান্তর একটি অত্যন্ত অগ্রহণযোগ্য পরিকল্পনা।

এছাড়া, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেক বিশেষজ্ঞ এবং মানবাধিকার সংগঠনও ট্রাম্পের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তারা বলছেন, ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসন এবং তাদের মৌলিক অধিকারগুলো হরণ করা হবে, যা মানবাধিকারের লঙ্ঘন।

ট্রাম্পের যুক্তি: নিরাপদ ও উন্নত ভবিষ্যতের প্রস্তাব

ট্রাম্পের মতে, ফিলিস্তিনিদের গাজায় ফিরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই, কারণ তারা যে নতুন জায়গাগুলোর জন্য স্থানান্তরিত হবে, সেগুলো তাদের জন্য একটি নিরাপদ, উন্নত, এবং স্থায়ী ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করবে। তিনি বিশ্বাস করেন, গাজার অবস্থা বর্তমানে বাসযোগ্য নয় এবং সেখানে বসবাসকারীরা একটি নতুন, উন্নত আশ্রয়ে বসবাস করতে পারবেন। এই ধারণাকে তিনি “স্টেবিলিটি” এবং “প্রগ্রেস” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

তিনি আরও বলেন, “এই উদ্যোগের মাধ্যমে, আমরা গাজার অবস্থা আরও ভালো করতে পারব। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প, যেখানে নিরাপত্তা, উন্নয়ন এবং শান্তি একত্রিত হবে।”

ইসরায়েলের দৃষ্টিকোণ

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ট্রাম্পের এই পরিকল্পনাকে সমর্থন জানিয়েছেন, এবং তিনি বলেন, এই ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে। তবে, ইসরায়েলের এই সমর্থনও বিশ্বের কিছু অঞ্চলে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। ইসরায়েলের অবস্থান প্রায়ই আন্তর্জাতিক মঞ্চে সমালোচনার সম্মুখীন হয়ে থাকে, বিশেষ করে ফিলিস্তিনিদের অধিকার নিয়ে।

আঞ্চলিক সমীকরণ

মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি অনেক জটিল, এবং ট্রাম্পের এই গাজা পরিকল্পনা একে আরও বিতর্কিত করেছে। আরব দেশগুলোর মধ্যে ঐক্যবদ্ধ বিরোধিতা, জাতিসংঘ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্বেগ, এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর আশঙ্কা—সবকিছু মিলিয়ে এটি একটি অস্থির পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

ভবিষ্যত পদক্ষেপ

বর্তমানে ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা অনেক বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হলেও, তিনি আশাবাদী যে, একদিন গাজা উপত্যকায় বসবাসের ক্ষেত্রে একটি দীর্ঘমেয়াদি সমাধান আসবে। তার মতে, এর মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের জীবনের মান উন্নত হবে এবং তারা একটি নতুন, সুরক্ষিত ভবিষ্যতের দিকে এগোতে পারবে।

তবে এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন কিভাবে হবে, তা সময়ই বলে দেবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, আরব দেশগুলো, এবং ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতিক্রিয়া কী হবে, তাও বড় একটি প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button