অর্থনীতি

এমএলএম নিয়ে সতর্ক করল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

দেশের জনগণকে মাল্টি-লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) ব্যবসার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই ধরনের ব্যবসার মাধ্যমে গ্রাহকের বিনিয়োগ হারানোর নজির রয়েছে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। রবিবার (তারিখ) এ বিষয়ে একটি আনুষ্ঠানিক সতর্কবার্তা জারি করা হয়।

অবৈধ পিরামিড ও পঞ্জি স্কিমের ভয়াবহতা

বাংলাদেশ ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয় যে, এমএলএম ব্যবসার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো অস্বাভাবিক ও অযৌক্তিক হারে উচ্চ মুনাফা প্রদান এবং রেফারেলের ভিত্তিতে কমিশন প্রদান। সাধারণত, পিরামিড স্কিম বা পঞ্জি স্কিমের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করা হয়, যা অবশেষে নতুন বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির মাধ্যমে টিকে থাকে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, দেশের বাজারে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের প্রলুব্ধ করতে উচ্চ মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে আমানত সংগ্রহ করছে, যা পুরোপুরি প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের মধ্যে পড়ে। অতীতে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হলেও সাম্প্রতিক সময়ে একই ধরনের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনি অবস্থান

বাংলাদেশ ব্যাংক স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান আমানত সংগ্রহ বা ব্যাংক ব্যবসা পরিচালনা করতে পারে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্স ব্যতীত আমানত সংগ্রহ করা ১৯৯১ সালের ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৩১ (১) ধারার লঙ্ঘন।

এছাড়া, পিরামিড স্কিম বা এমএলএম পদ্ধতির মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের আওতায় অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। ফলে, এই ধরনের প্রতিষ্ঠানে লেনদেন করলে গ্রাহকরাও আইনি জটিলতার মধ্যে পড়তে পারেন।

ই-কমার্স প্রতারণার দৃষ্টান্ত

বাংলাদেশ ব্যাংকের সতর্কবার্তায় ই-কমার্স সেক্টরে প্রতারণার প্রসঙ্গও উঠে এসেছে। সাম্প্রতিক সময়ে কিছু ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম অস্বাভাবিক মূল্যছাড়ের মাধ্যমে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে প্রতারণার ফাঁদে ফেলেছে।

বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান অস্বাভাবিক কম মূল্যে পণ্য বিক্রির ঘোষণা দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করলেও পরে তারা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়। এতে ভুক্তভোগীরা অর্থ হারানোর পাশাপাশি প্রতারণার শিকার হন।

সাম্প্রতিক প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড

সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু এমএলএম কোম্পানি উচ্চ মুনাফার লোভ দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

এ ধরনের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের ফলে অনেক গ্রাহক তাদের সঞ্চিত অর্থ হারিয়েছেন। বিশেষ করে যারা দ্রুত লাভবান হতে চান, তারা সহজেই এই ধরনের স্কিমের ফাঁদে পা দেন। পিরামিড স্কিমের মাধ্যমে শুরুর দিকে বিনিয়োগকারীদের কিছু মুনাফা প্রদান করা হলেও পরবর্তীতে নতুন বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ বন্ধ হয়ে গেলে প্রতিষ্ঠানটি ধসে পড়ে। ফলে, অধিকাংশ বিনিয়োগকারী তাদের অর্থ ফেরত পান না।

সতর্কতা ও করণীয়

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শ অনুযায়ী, জনগণকে এ ধরনের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকা উচিত। বিশেষ করে অস্বাভাবিক হারে মুনাফার প্রতিশ্রুতি দেওয়া প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লেনদেন করার আগে তাদের আইনি অবস্থান যাচাই করা প্রয়োজন।

জনসাধারণকে সতর্ক থাকার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে:

  • অস্বাভাবিক হারে মুনাফার প্রলোভনে পা না দেওয়া।
  • বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোথাও আমানত বা বিনিয়োগ না করা।
  • সন্দেহজনক কোনো এমএলএম বা বিনিয়োগ স্কিমের তথ্য থাকলে বাংলাদেশ ব্যাংকে অবহিত করা।

বাংলাদেশ ব্যাংক গণমাধ্যম ও জনগণকে আহ্বান জানিয়েছে যে, যদি তারা এ ধরনের কোনো প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তথ্য পান, তবে তা দ্রুত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানোর জন্য।

উপসংহার

মাল্টি-লেভেল মার্কেটিং ব্যবসার নামে প্রতারণা নতুন কিছু নয়, তবে সাম্প্রতিক সময়ে প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে এই প্রতারণার মাত্রা আরও বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সতর্কবার্তা জনগণকে এ ধরনের প্রতারণা থেকে রক্ষা করতে সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়।

সতর্ক ও সচেতন থাকাই পারে জনগণকে আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে। তাই, বিনিয়োগের আগে যাচাই-বাছাই করা এবং সন্দেহজনক স্কিমে অর্থ না খাটানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button