ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দরের অবকাঠামো নির্মাণ বন্ধের দাবি ব্যবসায়ীদের

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দরের অবকাঠামো নির্মাণ বন্ধের দাবি জানিয়েছে ভোলাগঞ্জ চুনাপাথর আমদানিকারক গ্রুপ। আজ শনিবার দুপুরে সিলেটের জিন্দাবাজারে একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন আমদানিকারক গ্রুপের নেতারা।
স্থলবন্দরের বর্তমান অবস্থা ও ব্যবসায়ীদের দাবি
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভোলাগঞ্জ চুনাপাথর আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি মো. সাহাব উদ্দিন। তিনি জানান, ২০১৯ সালে ভোলাগঞ্জ শুল্ক স্টেশনকে দেশের ২৪তম স্থলবন্দর হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এই বন্দরের উন্নয়নে ১৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে এই অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়।
তবে নিয়ম অনুযায়ী বন্দরের উভয় পাশে স্থলবন্দর নির্মাণের কথা থাকলেও, বর্তমানে শুধুমাত্র বাংলাদেশ অংশে স্থলবন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ব্যবসায়ীরা তাঁদের অংশেও স্থলবন্দরের অবকাঠামো নির্মাণের আবেদন করলেও, ভারত সরকার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে তাদের অংশে কোনো অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে না। এতে দুই দেশের ব্যবসায়িক ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন আমদানিকারকরা।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ: ক্ষয়ক্ষতি ও অনিয়ম
সংবাদ সম্মেলনে আমদানিকারক গ্রুপের নেতারা অভিযোগ করেন, প্রকল্পের অধিভুক্ত এলাকায় আগে কয়েক শ ব্যবসায়ীর কার্যালয় ও পাথর ডাম্পিং এলাকা ছিল। কিন্তু প্রকল্পের কাজ শুরুর আগে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করে, হঠাৎ অভিযান চালিয়ে ব্যবসায়ীদের কার্যালয় ও ডাম্পিং স্টেশন গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে ব্যবসায়ীদের কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
বিশেষ করে ডাম্পিং এলাকায় রাখা প্রায় ৫-৬ কোটি টাকার পাথর নষ্ট করে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তারা। ফলে ব্যবসায়ীরা চরম আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন এবং তাঁদের অনেকেই এখন ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারছেন না।
দুর্নীতির অভিযোগ ও ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ
ভোলাগঞ্জ চুনাপাথর আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি মো. সাহাব উদ্দিন বলেন, “এই প্রকল্পে বড় অঙ্কের দুর্নীতি হয়েছে। দুর্নীতির স্বার্থেই স্থলবন্দরের নির্মাণকাজ অব্যাহত রাখা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এই অবকাঠামো নির্মাণের কোনো প্রয়োজন নেই। আমাদের দাবি, দ্রুত এই নির্মাণ কাজ বন্ধ করা হোক এবং ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা যদি আমাদের ন্যায্য অধিকার না পাই, তাহলে ব্যবসায়ীরা আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবেন। সাধারণ শ্রমিকরাও বেকার হয়ে পড়েছেন, যা এলাকার সামগ্রিক অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।”
স্থলবন্দর প্রকল্পের ভবিষ্যৎ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভূমিকা
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দরের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দেশে বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে এবং ব্যবসায়ীদের সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। তবে ব্যবসায়ীরা এই দাবি মানতে নারাজ। তাঁদের মতে, এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবিক সুবিধার পরিবর্তে কেবলমাত্র কিছু নির্দিষ্ট মহল লাভবান হচ্ছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, অবকাঠামো নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে ব্যবসায়ীদের জন্য সুবিধা বৃদ্ধি পাবে এবং আন্তর্জাতিক মানের স্থলবন্দর হিসেবে এটি পরিচিতি পাবে। তবে ব্যবসায়ীদের একাংশ মনে করছে, এটি কেবল সরকারি তহবিলের অপচয় এবং কিছু নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর লাভবান হওয়ার সুযোগ ছাড়া কিছুই নয়।
ব্যবসায়ীদের পরবর্তী পদক্ষেপ
সংবাদ সম্মেলনে ভোলাগঞ্জ চুনাপাথর আমদানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, “আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, অবিলম্বে স্থলবন্দর নির্মাণকাজ বন্ধ করা হোক এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক। অন্যথায় আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো।”
সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ আব্দুস সালাম বলেন, “আমাদের ব্যবসার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আমরা চাই, সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হোক।”
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সদস্য নোমান আহমদ, ফখরুল হকসহ অনেকে। তারা একযোগে সরকারের কাছে দাবি জানান, এই অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প পুনর্বিবেচনা করা হোক এবং ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করা হোক।
উপসংহার
ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দরের অবকাঠামো নির্মাণ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাঁদের মতে, এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ছোট-বড় ব্যবসায়ীদের স্বাভাবিক ব্যবসা ব্যাহত হবে, যা সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। সরকারের উচিত, ব্যবসায়ীদের দাবির প্রতি গুরুত্ব দেওয়া এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসা। অন্যথায়, এই ইস্যু আরও বড় আকারের আন্দোলনে রূপ নিতে পারে।