অর্থনীতি

এজিএমকরতে ব্যর্থ গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, দুর্বল কোম্পানির তালিকায়

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, যা এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন, নির্ধারিত সময়ে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করতে ব্যর্থ হয়েছে। এর ফলে ব্যাংকটিকে শেয়ারবাজারে দুর্বল মানের কোম্পানি হিসেবে ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার থেকে ব্যাংকটি ‘জেড’ শ্রেণিতে স্থানান্তরিত হয়েছে, যেখানে আগে এটি ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানি হিসেবে ‘এ’ শ্রেণিতে ছিল।

শেয়ারবাজারের তথ্য

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে জানানো হয়েছে, শ্রেণি অবনতি হওয়ায় গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা কোনো ধরনের ঋণ সুবিধা পাবেন না। গত বছরের মে মাসে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত করার নতুন নির্দেশনা জারি করা হয়। সেই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এজিএম না করলে কোম্পানিকে ‘জেড’ শ্রেণিতে স্থানান্তরিত করা হবে।

এজিএম স্থগিতের কারণ

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক গত বছরের জুনে সমাপ্ত আর্থিক বছরের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করেছিল এবং এজিএমের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল ৮ আগস্ট। কিন্তু জুলাইয়ে শুরু হওয়া কোটাবিরোধী আন্দোলন এবং পরবর্তীকালে সরকার বদলের কারণে ওই সভা স্থগিত করা হয়। ছয় মাস অতিবাহিত হলেও ব্যাংকটি এজিএম করতে পারেনি।

পরিচালনা পর্ষদের পরিবর্তন

সরকার বদলের পর গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এস আলমের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত করতে ব্যাংকটির পর্ষদে নিয়োগ দেওয়া হয় স্বতন্ত্র পরিচালক। তবে, পর্ষদ বদল হলেও ব্যাংকটির মালিকানার বড় অংশ এখনও এস আলম ঘনিষ্ঠদের হাতে রয়েছে।

ব্যাংকটির ইতিহাস

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক আগে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক নামে পরিচিত ছিল। এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন প্রশান্ত কুমার হালদার, যিনি পি কে হালদার নামেই বেশি পরিচিত। পি কে হালদারের কেলেঙ্কারির পর ব্যাংকটির নাম পরিবর্তন করে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক রাখা হয়।

শেয়ারবাজারের অবস্থা

২০২২ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ব্যাংকটি। ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ১ হাজার ৩৭ কোটি টাকা মূলধনের এই ব্যাংকের শেয়ারের ৩০ শতাংশের বেশি রয়েছে ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে। বাকি শেয়ারের বড় অংশই এস আলম ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে। এখন ব্যাংকটি ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত হওয়ায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

শেয়ারের দাম কমে যাওয়া

‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত হওয়ার খবরে আজ সকালে লেনদেন শুরুর প্রথম ১ ঘণ্টায় ব্যাংকটির শেয়ারের দাম ১০ পয়সা বা প্রায় আড়াই শতাংশ কমে ৪ টাকা ১০ পয়সায় নেমে এসেছে। গত দুই বছরের মধ্যে ব্যাংকটির শেয়ারের সর্বনিম্ন বাজারমূল্য ছিল ৪ টাকা।

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের এজিএম করতে ব্যর্থ হওয়া এবং ‘জেড’ শ্রেণিতে স্থানান্তরিত হওয়া ব্যাংকটির জন্য একটি বড় ধাক্কা। এটি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়। ব্যাংকটির ভবিষ্যৎ এবং শেয়ারবাজারে এর অবস্থান নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে। আশা করা যায়, ব্যাংকটি দ্রুত পরিস্থিতি মোকাবেলা করবে এবং শেয়ারবাজারে তার অবস্থান পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button