অর্থনীতি

রিজার্ভ ফের ৩১ বিলিয়ন ডলার

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ১৭ সেপ্টেম্বরের শেষে দেশের গ্রস বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩১ বিলিয়ন ডলারে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী রিজার্ভের হিসাব BPM–৬ পদ্ধতিতে ২৬.৮ বিলিয়ন ডলার হিসেবে দেখানো হয়েছে।

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সম্প্রতি পুনরুদ্ধার হওয়ার পেছনে প্রবাসী আয়, রপ্তানি, বৈদেশিক ঋণ ও বিনিয়োগের অবদান বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এ অবস্থায় রিজার্ভের পুনরুদ্ধার অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতার দিক নির্দেশ করছে।

রিজার্ভের বর্তমান পরিস্থিতি

সেপ্টেম্বরের ১৪ তারিখে রিজার্ভ ছিল প্রায় ৩০.৫৯ বিলিয়ন ডলার। ৭ সেপ্টেম্বর দেশে দেড় বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ বিদেশে পরিশোধের ফলে রিজার্ভ সাময়িকভাবে ৩০.৩০ বিলিয়ন ডলারে নামেছিল।

বর্তমানে ব্যয়যোগ্য নিট রিজার্ভ (NIR) প্রায় ২১ বিলিয়ন ডলার, যা চার মাসের আমদানি ব্যয় মেটাতে সক্ষম। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমপরিমাণ রিজার্ভ থাকা উচিত।

২০২১ সালের আগস্টে দেশের রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল। তবে পরে অর্থপাচার, কোভিড-১৯ পরবর্তী আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি এবং বাণিজ্য ঘাটতির কারণে রিজার্ভ হ্রাস পেয়েছিল।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ মূলত রপ্তানি আয়, প্রবাসী আয় এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের মাধ্যমে বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে, আমদানি ব্যয়, ঋণের সুদ এবং বিদেশি কর্মীদের পারিশ্রমিকের কারণে রিজার্ভ কমে যেতে পারে।

প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

রিজার্ভ পুনরায় ৩১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানো দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য ইতিবাচক সংকেত। বিশেষ করে আমদানিকারক, রপ্তানিকারক ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রিজার্ভের এই পুনরুদ্ধার অর্থনীতিকে একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে স্থিতিশীল রাখবে এবং বৈদেশিক ঋণ ও বাণিজ্য ব্যয়ের চাপ কমাবে।

আন্তর্জাতিক তুলনা

প্রায়শই আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী একটি দেশের রিজার্ভের পরিমাণ তার আমদানি ব্যয়ের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হয়। বর্তমান অবস্থায় বাংলাদেশ চার মাসের আমদানি ব্যয় নির্বাহ করতে সক্ষম, যা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় একটি শক্ত অবস্থান নির্দেশ করে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে এমন পুনরুদ্ধার দেশের অর্থনৈতিক আত্মবিশ্বাসকে বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং ভবিষ্যতে বিনিয়োগ আকর্ষণও সম্ভব করছে।

বিশ্লেষণ

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, প্রবাসী আয় এবং রপ্তানি থেকে আসা ডলার রিজার্ভ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তবে, ভবিষ্যতে আমদানি ব্যয় ও বৈদেশিক ঋণের চাপের কারণে রিজার্ভে পরিবর্তন আসতে পারে।

বাংলাদেশের নীতি প্রণেতাদের উচিত স্থিতিশীল রিজার্ভ বজায় রাখতে আরও কার্যকর অর্থনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এতে দেশের বাণিজ্য ঘাটতি ও বৈদেশিক ঋণের চাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনরায় ৩১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানো অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য ইতিবাচক খবর। তবে এটি ধরে রাখার জন্য প্রবাসী আয়, রপ্তানি ও বৈদেশিক বিনিয়োগের উপর নির্ভরতা থাকবে। নীতি প্রণেতাদের সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এই স্থিতিশীলতা দীর্ঘমেয়াদি করা সম্ভব।

এম আর এম – ১৩৯৩,Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button