আঞ্চলিক

শিক্ষার্থীদের সড়কে দাঁড় করিয়ে ইউএনওকে অভ্যর্থনা, সমালোচনার ঝড়

Advertisement

পটুয়াখালীর বাউফলে ইউএনও আমিনুল ইসলাম এবং তার স্ত্রী নুরই আয়েশা সুচিকে বাউফল আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) শিক্ষার্থীদের রেজাল্ট প্রকাশ ও মতবিনিময় সভার আড়ালে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, অনুষ্ঠান চলাকালীন তাদের বিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড় করানো হয়।

প্রথমে ইউএনও এবং তার স্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয় এবং পরে ক্রেস্ট উপহার দেয়া হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা গান ও নৃত্য পরিবেশন করে। কিছু শিক্ষার্থীকে বিশেষভাবে শাড়ি পড়তে বলা হয়।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, আগে কখনও রেজাল্ট ঘোষণার জন্য এমন ধরনের সংবর্ধনা আয়োজন করা হয়নি। তারা বলেন, “আমাদের দীর্ঘ সময় রোদে দাঁড় করানো হয়েছে, যা আমাদের জন্য খুবই কষ্টকর।”

শিক্ষার্থীদের বক্তব্য অনুযায়ী, প্রধান শিক্ষক জাহানারা বেগম এই সংবর্ধনা আয়োজন করেছেন ইউএনও এবং তার স্ত্রীর খুশি পাওয়ার জন্য। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এই ধরনের প্রথা শিক্ষার্থীদের উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত করে।

শিক্ষক ও প্রশাসনের মন্তব্য

বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক, নাম প্রকাশ না করার শর্তে, জানান যে ইউএনও এবং তার পরিবার দুপুর ৩টায় বিদ্যালয়ে উপস্থিত হন। প্রধান শিক্ষক স্বীকার করেন যে, “ইউএনও স্যার আসছেন ভাবিকে নিয়ে তাই আমরা কিছু আপ্যায়ন করেছি। অল্প সময়ের জন্য নাচ-গান হয়েছে।”

জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ শহীদ হোসেন চৌধুরী বলেন,

“যদি ইউএনও’র বদলী হয়, তবে বিদায় সংবর্ধনা হওয়া সম্ভব। কিন্তু শিক্ষার্থীদের রোদে দাঁড় করানোর বিষয়টি ঠিক নয়। আমরা খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”

বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার রায়হান কাওছার জানান, “পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসককে বিদ্যালয়ের বিষয়টি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হবে। ইউএনওকে সতর্ক করা হবে।”

প্রেক্ষাপট ও পূর্বপ্রথা

পটুয়াখালী জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রথাগতভাবে কোনো ভিআইপি আগমন উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের সড়কে দাঁড় করানো হয় না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মকর্তা বা অতিথি আগমন উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের রাস্তায় দাঁড় করানো যাবে না।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ধরনের অনুষ্ঠান শিক্ষার্থীদের অধিকার লঙ্ঘন করে এবং শিক্ষার্থীদের উপর অনাকাঙ্ক্ষিত চাপ সৃষ্টি করে। এটি শিক্ষার মান ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনা

অনলাইন ও সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনার ব্যাপক সমালোচনা দেখা গেছে। শিক্ষাবিদ ও নাগরিকরা বলছেন, সরকারি কর্মকর্তাদের আগমন উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের রাস্তায় দাঁড় করানো উচিত নয়। কিছু জনমত বলছে, “এটি শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার জন্য হুমকি।”

প্রশাসনিক পক্ষ জানিয়েছে, এ ধরনের প্রক্রিয়া পুনরায় ঘটতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করা হবে।

বিশ্লেষণ

এই ঘটনার মাধ্যমে পরিষ্কার হচ্ছে, প্রশাসনিক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়হীনতা শিক্ষার্থীদের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সরকারি কর্মকর্তা বা ভিআইপির আগমনের জন্য শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করা উচিত নয়। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা এবং শিক্ষার পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রাখা জরুরি।

অধ্যাপক ও শিক্ষাবিদরা পরামর্শ দিচ্ছেন, বিদ্যালয়ে ভিআইপি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করার পরিবর্তে প্রশাসনিক বা সাংস্কৃতিক কর্মসূচি আয়োজন করা উচিত। এতে শিক্ষার্থীদের উপর চাপ পড়বে না এবং শিক্ষা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে না।

পটুয়াখালীর বাউফল আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়ের ঘটনা শিক্ষার্থীদের অধিকার ও নিরাপত্তার গুরুত্বকে সামনে এনেছে। প্রশাসনিক পর্যায়ে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের উপর অনাকাঙ্ক্ষিত চাপ ও সমালোচনার পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, বিদ্যালয় ও প্রশাসনের মধ্যে সুসংগঠিত সমন্বয় এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগামীতে এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ করা গেলে শিক্ষার মান ও পরিবেশ আরও উন্নত হবে।

এম আর এম – ১৫২৬,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button