অর্থনীতি

আফগানিস্তানে প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ আছে: মোল্লা আব্দুল গনী

Advertisement

আফগানিস্তান দীর্ঘদিন ধরে দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে আসছে। কিন্তু মাটির নিচে চাপা রয়েছে বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদ, যার মূল্য প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলার। লোহা, তামা, লিথিয়াম, স্বর্ণ, বিরল মেটাল থেকে শুরু করে প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেলের সম্ভার রয়েছে এই দেশে। রাজনৈতিক অস্থিতিশ্চলতা, দুর্নীতি ও অবকাঠামোর অভাবে এ সম্পদ কাজে লাগেনি। তবে চীনের বিনিয়োগ আগ্রহ এবং তালেবান যুগে শুরু হওয়া নতুন উন্নয়ন পদক্ষেপে আশার আলো দেখা যাচ্ছে। আজকের প্রতিবেদনে আমরা আফগানিস্তানের সম্পদের বিস্তারিত, চীনের ভূমিকা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করব।

আফগানের সম্পদের মাপ ও মূল্য

  • ১ ট্রিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ সম্পদ:
    মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের মেমো ও কেবিনেট গবেষণায় আফগানিস্তানের মাটি ও খনিজের মূল্য প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলার ধরা হয়েছে। কিছু বিশ্লেষক দাবি করেন, এর পরিমাণ ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি।
    (সূত্র: Prothomalo, Daily Janakantha, Bangla Tribune)

মূল্যবান খনিজের বিবরণ

  • লোহা: প্রায় ২.২ বিলিয়ন মেট্রিক টন, যার বাজার মূল্য প্রায় ৩৫০ বিলিয়ন ডলার।
  • হাজিগাক লোহা খনি: ১.৭–১.৮ বিলিয়ন টন উচ্চমানের লোহা মজুদ।
  • লিথিয়াম: এক ট্রিলিয়ন ডলারের মূল্যমানের সম্ভার, যা আফগানিস্তানকে “লিথিয়ামের সৌদি আরব” হিসেবে পরিচিতি দিয়েছে।
  • সোনা: আনুমানিক ২,৭০০ কেজি।
  • তামা: আনুমানিক ৩০ মিলিয়ন টন, যার মূল্য শত বিলিয়ন ডলার।
  • বিরল খনিজ: ১.৯ মিলিয়ন টন, যা ইলেকট্রনিক্স ও সামরিক সরঞ্জামে ব্যবহৃত হয়।
  • বেরিলিয়াম: হেলমান্দে অবস্থিত, আনুমানিক ৮৮ বিলিয়ন ডলার মূল্যমান।
  • এছাড়াও ইউরেনিয়াম, বক্সাইট, কয়লা, সীসা, দস্তা, মার্বেল, আলুমিনিয়াম উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রয়েছে।
    (সূত্র: Bangla Tribune, Roar Media Archive, Wikipedia)

উন্নয়ন অভিযান ও চীনের বিনিয়োগ আগ্রহ

  • চীনের আগ্রহ ও BRI:
    ২০ আগস্ট ২০২৫-এ চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই কাবুলে আফগান নেতৃত্বকে জানান, “চীন চলতি বছর বাস্তব খনন কার্যক্রম শুরু করতে আগ্রহী” এবং আফগানিস্তান যেন বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে (BRI) যোগ দেয়।
    (সূত্র: Reuters)
  • আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া:
    বিশ্ব দরিদ্র দেশ হলেও আফগানের অপ্রকাশিত সম্পদ বিশ্ব অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে বলে সাংবাদিকরা মনে করছেন।
    (সূত্র: একাত্তর, Reuters)

ব্যবহারে বাধা ও চ্যালেঞ্জ

  • নিরাপত্তা ও অবকাঠামোর দুর্বলতা:
    রাস্তা, পানি সরবরাহ, বিদ্যুৎসহ অবকাঠামো ভঙ্গুর হওয়ায় খনিজ উত্তোলন ও প্রক্রিয়াকরণ কঠিন।
    (সূত্র: Prothomalo)
  • রাজনৈতিক অস্থিতিশ্চলতা ও আইনি অনিশ্চয়তা:
    আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি না থাকায় বিনিয়োগকারীরা দ্বিধাগ্রস্ত। আইনি কাঠামো ও নিরাপত্তা পরিবেশ অনুপস্থিত।
    (সূত্র: Prothomalo, দৈনিক ইনকিলাব)
  • দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও সময়সাপেক্ষ উন্নয়ন:
    লিথিয়াম উত্তোলন ও বেচা বিক্রি পর্যন্ত ৭-৮ বছর সময় লাগতে পারে।
    (সূত্র: Prothomalo, Risingbd)
  • আন্তর্জাতিক অবরোধ ও আর্থিক নিষেধাজ্ঞা:
    তালেবানের স্বীকৃতি না পাওয়া ও অবরুদ্ধ ব্যাংক রিজার্ভ অর্থনৈতিক অংশগ্রহণে বাধা সৃষ্টি করেছে।
    (সূত্র: দৈনিক ইনকিলাব, Prothomalo)

আশা ও অগ্রগতির চিহ্ন

  • চীনা ইজারা চুক্তি ও বিনিয়োগ:
    কিছু খনি চীনের যৌগিক বিনিয়োগে দীর্ঘমেয়াদি ইজারায় রয়েছে, যা উন্নয়নের সূচনা হতে পারে। ২০২৩ সালে চীনা কোম্পানি “গোচিন” ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছিল।
    (সূত্র: Risingbd, একাত্তর)
  • TAPI গ্যাস পাইললাইন প্রকল্প:
    তুর্কমেনিস্তান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ভারতকে সংযুক্ত করবে এই প্রকল্প, আফগান অংশের কাজ চলছে।
    (সূত্র: Wikipedia)
  • ড্যাম নির্মাণ ও উন্নয়ন:
    • পাশদান ড্যাম (Herat): ২০২৫ সালের আগস্টে উদ্বোধন, জলবিদ্যুৎ ও পানি সঞ্চয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
    • বাখশাবাদ ড্যাম (Farah প্রদেশ): নির্মাণাধীন, বিদ্যুৎ ও জল সঞ্চয়ে অবদান রাখবে।
      (সূত্র: Wikipedia)

সারসংক্ষেপ ও ভবিষ্যতের দিশা

খনিজ/সম্পদআনুমানিক পরিমাণমূল্য (মার্কিন ডলার)
লোহা২.২ বিলিয়ন টন৩৫০ বিলিয়ন
লিথিয়ামবিপুল পরিমাণ১ ট্রিলিয়ন+
তামা৩০ মিলিয়ন টনশত বিলিয়ন
স্বর্ণ~২.৭ টনকোটি ডলার
বিরল খনিজ১.৯ মিলিয়ন টন
বেরিলিয়ামউল্লেখযোগ্য~৮৮ বিলিয়ন

সুপারিশ

  • সামাজিক ও অবকাঠামো উন্নয়ন: নিরাপদ পরিবেশ বিনিয়োগ আকর্ষণে অপরিহার্য।
  • আর্থিক ও প্রযুক্তিগত মান উন্নয়ন: আন্তর্জাতিক উদ্যোগ ও প্রশিক্ষণ জোরদার করা।
  • স্বচ্ছতা ও আইনি কাঠামো: দুর্নীতি রোধে সার্বজনীন আইন প্রয়োগ প্রয়োজন।
  • দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ পরিকল্পনা: বেল্ট অ্যান্ড রোড, TAPI, ড্যাম প্রকল্প এগিয়ে নেওয়া।

আফগানিস্তান সংকটময় দেশ নয়, বরং সম্ভাবনাময় প্রাকৃতিক সম্পদের দেশ। ১ ট্রিলিয়ন ডলারের দখল ছাড়িয়ে সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের আশেপাশেও মূল্যায়ন হচ্ছে। যুদ্ধ ও রাজনীতির ছায়া থাকলেও চীনের বিনিয়োগ আগ্রহ, অবকাঠামোর উন্নয়ন ও বৃহৎ প্রকল্পগুলো দেশটিকে পরিবর্তনের পথে নিয়ে যাচ্ছে। তবে দারিদ্র্যের অন্ধকার থেকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের আলোয় পৌঁছাতে নিরাপত্তা, আইনি স্থিতি, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অপরিহার্য।

MAH – 12633,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button