
ওয়াশিংটন ডিসির রাস্তাঘাট থেকে গৃহহীন মানুষদের সরানোর পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও সম্ভাব্য রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি জানিয়েছেন, এই সিদ্ধান্ত অপরাধ দমন ও শহরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অংশ হিসেবে নেওয়া হয়েছে। তবে মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, গৃহহীনদের সরিয়ে নেওয়া সমস্যার সমাধান নয়, বরং এটি আরও বড় মানবিক সংকট তৈরি করতে পারে।
ঘটনাটির বিস্তারিত
সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টের মাধ্যমে ট্রাম্প এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি বলেন, ওয়াশিংটনের সৌন্দর্য ও নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনতে হলে প্রথমেই রাস্তায় বসবাসরত গৃহহীনদের সরিয়ে দিতে হবে। ট্রাম্প আরও উল্লেখ করেন, তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হবে, তবে তা হবে শহরের কেন্দ্র থেকে অনেক দূরে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমরা চাই রাজধানীকে আরও নিরাপদ ও পরিষ্কার রাখতে। শহরের অপরাধ কমাতে হলে এই পদক্ষেপ জরুরি।” তবে তিনি গৃহহীনদের পুনর্বাসনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা প্রকাশ করেননি।
পূর্ববর্তী পদক্ষেপ
এই সিদ্ধান্তের আগে গত মাসে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে গৃহহীনদের গ্রেফতারের জন্য একটি নির্বাহী আদেশে সই করেছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় গত সপ্তাহে ওয়াশিংটন ডিসির রাস্তায় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রে গৃহহীনতার সমস্যা দীর্ঘদিনের। বিভিন্ন শহরে বাড়ির ভাড়া বৃদ্ধি, কর্মসংস্থানের ঘাটতি এবং মাদকাসক্তি গৃহহীনতার প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ওয়াশিংটন ডিসিতে বর্তমানে কয়েক হাজার গৃহহীন মানুষ রাস্তায় বাস করছেন, যাদের একটি বড় অংশ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন।
প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনা
শহরের মেয়র মুরিয়েল বাউসার জানিয়েছেন, ওয়াশিংটনে অপরাধের হার বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং এই পদক্ষেপ অপরিহার্য নয়। মানবাধিকার সংস্থা ও সামাজিক কর্মীরা এই ঘোষণার তীব্র সমালোচনা করেছেন।
“গৃহহীনদের সরিয়ে ফেলা সমাধান নয়, বরং এটি তাদের আরও দুর্বল অবস্থায় ঠেলে দেবে,” বলেছেন একজন সামাজিক কর্মী। তাদের মতে, প্রকৃত সমাধান হলো সাশ্রয়ী বাসস্থানের ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা ও পুনর্বাসন প্রোগ্রাম চালু করা।
সম্ভাব্য প্রভাব
ট্রাম্পের ঘোষণার ফলে ওয়াশিংটন ডিসির কেন্দ্রীয় এলাকা হয়তো অস্থায়ীভাবে গৃহহীনদের মুক্ত হতে পারে। তবে দীর্ঘমেয়াদে এই পদক্ষেপে সমস্যার মূলে আঘাত করা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গৃহহীনদের শহরের বাইরে সরিয়ে দিলে তারা শুধু স্থান পরিবর্তন করবে, সমস্যার সমাধান হবে না। বরং এতে অন্য শহরে চাপ বৃদ্ধি পেতে পারে।
পরিসংখ্যান ও তুলনা
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স টু এন্ড হোমলেসনেস’-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দেশে প্রায় ৬ লাখ মানুষ গৃহহীন ছিলেন, যার মধ্যে ওয়াশিংটন ডিসির অংশ প্রায় ৫,০০০ জন। ২০১৫ সালের তুলনায় এই সংখ্যা প্রায় ১৫% বেড়েছে।
অন্যদিকে, লস অ্যাঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো ও নিউ ইয়র্কের মতো শহরেও গৃহহীনতার হার উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে প্রশাসন নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েও সমস্যার সমাধান করতে পারেনি।
বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞ মতামত
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে ট্রাম্পের এই ঘোষণা রাজনৈতিকভাবে লাভজনক হতে পারে। কারণ আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ইস্যুতে তিনি সবসময় কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তবে মানবাধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রশ্নে এই পদক্ষেপ তাকে বিরূপ সমালোচনার মুখে ফেলতে পারে।
একজন শহর পরিকল্পনাবিদ বলেন, “গৃহহীনদের সরানো এক ধরনের ‘দৃশ্যমান সমাধান’, কিন্তু বাস্তবে এটি মূল সমস্যাকে অমীমাংসিত রেখে দেয়।”
শেষ কথা
ট্রাম্পের এই ঘোষণায় ওয়াশিংটন ডিসির বাসিন্দাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ এটিকে অপরাধ দমন ও সৌন্দর্য রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন, আবার অনেকে বলছেন, এটি মানবিক মূল্যবোধের পরিপন্থী।
ভবিষ্যতে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে গৃহহীনদের অবস্থা কী হবে এবং শহরের অপরাধের হার আসলেই কমবে কি না, তা সময়ই বলে দেবে।
এম আর এম – ০৮০৩, Signalbd.com