গাজায় অনাহারে তিন শিশুসহ আরও ১৩ জনের মৃত্যু

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলা ও অবরোধের কারণে মানবিক সংকট দিন দিন বাড়ছে। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, অনাহারে এবং দুর্ভিক্ষের কারণে তিন শিশুসহ আরও ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই পরিস্থিতি গাজার সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৭৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। মৃতদের মধ্যে অনেকেই সাধারণ মানুষ ও ত্রাণপ্রার্থী।
গাজা উপত্যকায় খাদ্য, পানি ও ওষুধের সরবরাহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার কারণে স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে মৃত্যুর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বর্তমানে এক লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি শিশু তীব্র অপুষ্টির ঝুঁকিতে রয়েছে।
অনাহার ও দুর্ভিক্ষের প্রেক্ষাপট
গত ২২ আগস্টে বৈশ্বিক ক্ষুধা পর্যবেক্ষণ সংস্থা (Global Hunger Monitoring) গাজায় দুর্ভিক্ষের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করে। এরপর থেকে প্রতিনিয়ত অনাহারে মৃত্যু হচ্ছে। গাজার চিকিৎসা ও খাদ্য সরবরাহের ঘাটতি, এবং অবরোধের কারণে মানুষের জীবন নিরাপত্তাহীন অবস্থায় রয়েছে।
স্থানীয়দের কথায়, বহু মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও খাবার পাননি। এই পরিস্থিতিতে শিশু ও বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সংস্থার উদ্বেগ
আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থা এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন গাজার পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা ইসরায়েলকে অবরোধ সরিয়ে দ্রুত ত্রাণ পৌঁছানোর আহ্বান জানাচ্ছে। সংস্থাগুলোর মতে, অবরুদ্ধ উপত্যকায় খাদ্য ও চিকিৎসা সরবরাহ না হলে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে।
শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের প্রভাব
গাজার শিশুদের স্বাস্থ্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। অপুষ্টি ও অনাহারের কারণে শিশুদের শারীরিক এবং মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া বৃদ্ধরা ও অসুস্থরাও অপর্যাপ্ত খাবার ও চিকিৎসার কারণে মৃত্যুর মুখোমুখি।
এক স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মী জানান, “হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তি হচ্ছে, কিন্তু পর্যাপ্ত ওষুধ ও খাদ্য নেই। অনাহারের কারণে মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে।”
গাজার প্রায়শই ঘটে চলা হামলা ও অবরোধের প্রভাব
গাজা উপত্যকায় অবরুদ্ধ অবস্থা দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান। সীমান্ত বন্ধ ও নিয়মিত হামলার কারণে মানুষের জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। খাদ্য ও পানি সরবরাহের সীমাবদ্ধতা, হাসপাতাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমে ব্যাঘাত, এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাহীনতা দীর্ঘমেয়াদে সমাজের জন্য বিপজ্জনক।
বিশ্লেষক ও মানবাধিকার সংগঠনের মন্তব্য
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাজার অবরোধ ও নিয়মিত হামলা শুধু মৃত্যু নয়, দীর্ঘমেয়াদে মানসিক এবং শারীরিক ক্ষতি বাড়াচ্ছে। তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দ্রুত হস্তক্ষেপ করতে আহ্বান জানাচ্ছেন।
এক মানবাধিকার কর্মী বলেন, “গাজায় শিশুদের মৃত্যুর সংখ্যা অব্যাহত থাকলে আন্তর্জাতিক নৈতিক এবং মানবিক সংকট আরও গভীর হবে। ত্রাণ পৌঁছানো এখন সময়ের অতি জরুরি দাবি।”
গাজার মানবিক সংকট ক্রমবর্ধমান হচ্ছে। ইসরায়েলি হামলা, অবরোধ এবং অনাহারের ফলে তিন শিশুসহ আরও ১৩ জনের মৃত্যু প্রমাণ করে, সাধারণ মানুষই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্রুত হস্তক্ষেপ না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে। শিশুদের নিরাপত্তা, খাদ্য এবং চিকিৎসা নিশ্চিত করাই এখন অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।
এম আর এম – ১১৫৯, Signalbd.com