
রাজবাড়ীর কালুখালীতে রাতের বেলায় মোটরসাইকেল রেস করতে গিয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন দুই বন্ধু। দ্রুতগতির কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে ছিটকে পড়েন তারা। গুরুতর আহত হয়েছেন আরও একজন, আরেকজনকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
ঘটনার বিস্তারিত
রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজবাড়ী–কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের বাংলাদেশ হাট এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। চার বন্ধু দুটি মোটরসাইকেল নিয়ে পাল্লা দিয়ে দ্রুতগতিতে রেস করছিলেন। হঠাৎ একটি মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারালে সেটি ছিটকে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই আরিফ হোসেন (২২) ও স্বাধীন পাল (১৭) মারা যান।
আরেক বন্ধু শাওন রহমান (২২) গুরুতর আহত হয়ে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দুর্ঘটনার পর আরেকজন বন্ধুকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। স্থানীয়রা জানান, কারও মাথায় হেলমেট ছিল না।
পাংশা হাইওয়ে মডেল থানার ওসি হেলাল উদ্দিন জানান, দুর্ঘটনাকবলিত দুটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
নিহত ও আহতদের পরিচয়
নিহত আরিফ হোসেন কালুখালী উপজেলার ঘিকমলা গ্রামের বাসিন্দা। অন্য নিহত স্বাধীন পাল পাংশা উপজেলার মৈশালা পালপাড়া গ্রামের। তারা দুজনই ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। গুরুতর আহত শাওন রহমান একই এলাকার। বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন থাকলেও আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
নিহত দুই তরুণের মৃত্যুতে পরিবার ও এলাকায় শোক নেমে এসেছে। স্বজনদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।
পটভূমি ও ঝুঁকি
সাম্প্রতিক সময়ে তরুণদের মধ্যে মোটরসাইকেল রেস করার প্রবণতা বেড়ে গেছে। বিশেষত রাতের বেলায় খালি সড়কে এ ধরনের প্রতিযোগিতা বাড়ছে। তবে এর ফলে একের পর এক প্রাণহানি ঘটছে।
রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া ও আশপাশের এলাকায় এর আগেও মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হেলমেট ছাড়া দ্রুতগতি নিয়ন্ত্রণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়, ফলে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়।
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
দুর্ঘটনার পরপরই স্থানীয়রা উদ্ধারকাজে এগিয়ে আসেন। তারা আহতদের হাসপাতালে পাঠান এবং পুলিশকে খবর দেন। স্থানীয়রা জানান, রাতে প্রায়ই ওই সড়কে মোটরসাইকেল রেস হয়। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদারকি না থাকায় তরুণরা ভয় ছাড়া এসব কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন, “প্রায়ই দেখি রাতের বেলায় তরুণরা পাল্লা দিয়ে মোটরসাইকেল চালায়। আমরা ভয় পাই কখন আবার দুর্ঘটনা ঘটে।”
পুলিশের অবস্থান
পুলিশ জানিয়েছে, দুর্ঘটনার তদন্ত চলছে। তবে তারা এটিকে বেপরোয়া গতি ও হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল চালানোর পরিণতি বলে উল্লেখ করেছে।
ওসি হেলাল উদ্দিন বলেন, “নিহতরা হেলমেট ব্যবহার করেননি। দ্রুতগতি ও নিয়ন্ত্রণ হারানোর কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের রেস ঠেকাতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিশেষজ্ঞ মতামত
সড়ক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তরুণদের মধ্যে মোটরসাইকেল চালানোর প্রতি একধরনের উন্মাদনা তৈরি হয়েছে। সামাজিক সচেতনতা, আইন প্রয়োগ এবং পরিবার–সমাজের নজরদারি ছাড়া এ প্রবণতা কমানো সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির এক কর্মকর্তা বলেন, “তরুণরা মোটরসাইকেলকে বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে দেখছে। কিন্তু সঠিক প্রশিক্ষণ, লাইসেন্স ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছাড়া রাস্তায় নামা মৃত্যুর ঝুঁকি বহন করে।”
সারসংক্ষেপ
রাজবাড়ীতে মোটরসাইকেল রেস করতে গিয়ে দুই তরুণের মৃত্যু আবারও সতর্কবার্তা দিল। বেপরোয়া গতি ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও প্রাণ ঝরছে। স্থানীয়রা দাবি করছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সক্রিয় হতে হবে এবং পরিবারগুলোকে তরুণদের প্রতি সচেতন করতে হবে।
এম আর এম – ১২৪৫,Signalbd.com