কর্মসংস্থান

সাতক্ষীরায় স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ২৮ পুলিশ কনস্টেবল চূড়ান্ত

Advertisement

বাংলাদেশ পুলিশের ইতিহাসে নিয়োগ প্রক্রিয়া সবসময় আলোচনার বিষয়। অতীতে বিভিন্ন সময়ে অনিয়ম ও অস্বচ্ছতার অভিযোগ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ পুলিশ এই চিত্র পাল্টে দিতে সক্ষম হয়েছে। তারই সর্বশেষ প্রমাণ মিলল সাতক্ষীরায়। সম্পূর্ণ স্বচ্ছ, দুর্নীতিমুক্ত ও প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পুলিশ কনস্টেবল পদে প্রাথমিকভাবে ২৮ জন প্রার্থীকে চূড়ান্ত করা হয়েছে।

২০২৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর বুধবার রাত ৯টার দিকে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ লাইন্সে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ফলাফল ঘোষণা করেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম।

নিয়োগ প্রক্রিয়ার ধাপসমূহ

এবারের নিয়োগ প্রক্রিয়া ছিল বহুমাত্রিক ও কঠোর। তিনটি ধাপে প্রার্থীদের পরীক্ষা নিতে হয়।

  1. শারীরিক পরীক্ষা:
    প্রার্থীদের উচ্চতা, ওজন, বুকের মাপসহ শারীরিক সক্ষমতা যাচাই করা হয়। এছাড়া দৌড়, ফিটনেস ও অন্যান্য শারীরিক দক্ষতাও মূল্যায়ন করা হয়।
  2. লিখিত পরীক্ষা:
    প্রাথমিকভাবে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও সাধারণ জ্ঞানের ওপর লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়।
  3. মৌখিক পরীক্ষা:
    শেষ ধাপে প্রার্থীদের মৌখিক সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে তাদের বুদ্ধিমত্তা, আত্মবিশ্বাস, নৈতিক মূল্যবোধ ও সামগ্রিক ব্যক্তিত্ব যাচাই করা হয়।

এসব ধাপ অতিক্রম করার পর অবশেষে ১৪০০-এর বেশি পরীক্ষার্থীর মধ্যে থেকে ২৮ জনকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করা হয়। পাশাপাশি আরও ৬ জনকে অপেক্ষমান তালিকায় রাখা হয়েছে। ভবিষ্যতে কোনো কারণে কেউ বাদ পড়লে সেখান থেকে প্রার্থী নেওয়া হবে।

জেলা পুলিশ সুপারের বক্তব্য

ফলাফল ঘোষণার সময় জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন,

“এই নিয়োগ প্রক্রিয়া শতভাগ স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আমরা চাই সমাজে একটা বার্তা যাক—দেশকে ভালোবাসতে হবে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে দৃঢ় থাকতে হবে এবং সবাই মিলে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে হবে।”

তিনি আরও জানান, সাতক্ষীরার সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসা বহু শিক্ষার্থী দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ কনস্টেবল হওয়ার স্বপ্ন দেখছিলেন। সেই স্বপ্ন আজ বাস্তবে রূপ নিয়েছে।

উত্তীর্ণ প্রার্থীদের আনন্দ ও আবেগ

ফলাফল ঘোষণার পর উত্তীর্ণ প্রার্থীদের চোখেমুখে ছিল অশ্রুভেজা আনন্দ। বিশেষ করে নিম্নআয়ের পরিবার থেকে আসা অনেক ছেলে-মেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাদের অনেকেই জানালেন, এতদিন ধরে ভেবেছিলেন আর্থিক অক্ষমতার কারণে হয়তো চাকরি পাওয়া সম্ভব হবে না। কিন্তু স্বচ্ছ প্রক্রিয়া তাদের সেই ভুল ধারণা ভেঙে দিয়েছে।

জেলা পুলিশ সুপার নিজ হাতে ফুল দিয়ে নতুন নির্বাচিত কনস্টেবলদের শুভেচ্ছা জানান। এতে পুরো পরিবেশ এক অনন্য আবেগঘন মুহূর্তে পরিণত হয়।

বাংলাদেশে স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার গুরুত্ব

বাংলাদেশ পুলিশের কনস্টেবল পদ দেশের অন্যতম জনপ্রিয় সরকারি চাকরির একটি। প্রতিবছর হাজার হাজার তরুণ-তরুণী এ পদে আবেদন করেন। অতীতে নানা সময়ে ঘুষ, প্রভাব খাটানো, কিংবা অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও বর্তমান সরকার ও পুলিশ প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে।

বর্তমানে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে:

  • পরীক্ষার প্রতিটি ধাপ মিডিয়া ও সাধারণ মানুষের সামনে উন্মুক্ত রাখা
  • লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়া গোপনীয়ভাবে সম্পন্ন করা
  • নিয়োগ বোর্ডে একাধিক পর্যায়ের কর্মকর্তা উপস্থিত থাকা
  • অপেক্ষমান তালিকা প্রকাশ করা যাতে কোনো ধরনের অস্পষ্টতা না থাকে

এসব উদ্যোগ নিয়োগে বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে এনেছে এবং প্রার্থীদের মধ্যে আস্থা বাড়িয়েছে।

সাতক্ষীরার প্রেক্ষাপট

সাতক্ষীরা জেলা সীমান্তবর্তী হওয়ায় এখানকার মানুষের জীবন-জীবিকা নানা চ্যালেঞ্জের মুখে। কৃষি ও শ্রমনির্ভর অর্থনীতির কারণে অনেক পরিবার আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল। ফলে সরকারি চাকরি বিশেষ করে পুলিশের মতো স্থায়ী ও সম্মানজনক পেশায় প্রবেশ করা এখানকার তরুণদের জন্য বড় স্বপ্ন।

এবারের নিয়োগে সাতক্ষীরার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকেও বহু প্রার্থী অংশ নেন। তাদের মধ্যে অনেকে বলছেন, এই সুযোগ কেবল চাকরি নয়, তাদের পরিবারের ভবিষ্যৎ বদলে দেওয়ার এক নতুন অধ্যায়।

স্বচ্ছ নিয়োগে সরকারের অঙ্গীকার

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার দুর্নীতি ও অনিয়ম রোধে কঠোর অবস্থানের কথা বলেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ পুলিশের নিয়োগ প্রক্রিয়াও গত কয়েক বছর ধরে পরিবর্তিত হয়েছে।

এখন আর সুপারিশ বা টাকার বিনিময়ে চাকরি পাওয়ার সুযোগ নেই—এমন আস্থাই সাধারণ মানুষের মধ্যে গড়ে উঠছে। এ কারণে গ্রামের দরিদ্র পরিবার থেকেও যোগ্য প্রার্থীরা সাহস করে আবেদন করছেন।

ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ ও প্রত্যাশা

বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধুমাত্র নিয়োগ প্রক্রিয়া নয়, কর্মক্ষেত্রেও দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধ করা জরুরি। নতুন নিয়োগ পাওয়া কনস্টেবলদের নৈতিক শিক্ষা, মানবিকতা ও পেশাগত দক্ষতা বাড়াতে দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণের প্রয়োজন।

তারা আশা প্রকাশ করেন, নতুন প্রজন্মের এই কনস্টেবলরা দেশ ও জনগণের নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন এবং পুলিশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করবেন।

সাতক্ষীরায় স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ২৮ জন পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ শুধু একটি চাকরির ফলাফল নয়; এটি দেশের তরুণ সমাজের আস্থার প্রতীক। প্রমাণ হয়েছে—পরিশ্রম, যোগ্যতা ও সততা থাকলে স্বপ্ন পূরণ সম্ভব।

বাংলাদেশ পুলিশ যদি এভাবে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে পারে, তাহলে শুধু পুলিশ নয়, পুরো সরকারি চাকরি খাতেই আস্থা ও বিশ্বাস ফিরে আসবে।

MAH – 12747,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button