বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ নতুন করে ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ওপর পৌঁছে গেছে। দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলার এই খবর নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান।
১৬ জুলাইয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩০.০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুসারে প্রায় তিন হাজার কোটি ডলারের সমান। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্ধারিত বিপিএম-৬ পদ্ধতি অনুসারে নিট রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৪.৯৯ বিলিয়ন ডলার।
রিজার্ভ বৃদ্ধির পেছনে প্রধান কারণ
সম্প্রতি বাংলাদেশ এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) কাছে ২০১ কোটি ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার পরিশোধ করেছে, যা রিজার্ভ বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। এর ফলে, গত ৭ জুলাই বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে রিজার্ভ ছিল ২৪.৪৫ বিলিয়ন ডলার, যা মাত্র কিছুদিনের মধ্যে প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে।
গত কয়েক মাসের হিসাব-নিকাশে দেখা যায়, রিজার্ভের এই বৃদ্ধি ধারাবাহিক এবং দেশের বৈদেশিক অর্থনীতির ওপর দৃঢ় ভিত্তি তৈরি করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক রিজার্ভের হিসাব
| তারিখ | গ্রস রিজার্ভ (মিলিয়ন ডলার) | নিট রিজার্ভ (বিপিএম-৬ পদ্ধতি অনুযায়ী, মিলিয়ন ডলার) |
|---|---|---|
| ২ জুলাই ২০২৫ | ৩১৭১.৭৭ কোটি | ২৬৬৮.৬৯ কোটি |
| ৩০ জুন ২০২৫ | ৩১৬৮.৩৯ কোটি | ২৬৬৬.৩৬ কোটি |
| ২৯ জুন ২০২৫ | ৩১৩১.৩৭ কোটি | ২০৩১.৯৮ কোটি |
| ২৫ জুন ২০২৫ | ২৭৬৭.২০ কোটি | ২২৬৫.২৩ কোটি |
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট যে দেশের রিজার্ভের অবস্থা মোটামুটি স্থিতিশীল ও উন্নতির পথে রয়েছে।
রিজার্ভ কি এবং কেন তা গুরুত্বপূর্ণ?
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হল দেশের কাছে থাকা বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ, যা আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের আমদানি, ঋণ পরিশোধ এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়। রিজার্ভের পরিমাণ বেশি হলে দেশ অর্থনৈতিক সংকটে পড়লে তা সামলাতে সক্ষম হয়।
আইএমএফ নির্ধারিত বিপিএম-৬ (Balance of Payments Manual-6) পদ্ধতি অনুযায়ী নিট রিজার্ভ হিসাব করা হয়, যেখানে মোট রিজার্ভ থেকে স্বল্পমেয়াদি দায় বাদ দেওয়া হয়। তাই নিট রিজার্ভ প্রকৃত অর্থনৈতিক নিরাপত্তার প্রতীক।
সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিক থেকে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের বৃদ্ধি দেশটির বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে। এছাড়া বৈদেশিক ঋণের বোঝা কমিয়ে এনে দেশ নিজের অর্থনীতিকে আরও বেশি স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করছে।
বাংলাদেশ সরকারের চলমান নীতি ও পরিকল্পনা যেমন ‘মেক ইন বাংলাদেশ’, রপ্তানি উন্নয়ন এবং বিনিয়োগ অনুপ্রেরণা রিজার্ভ বৃদ্ধির পেছনে মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করছে।
আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান
বর্তমানে বিশ্বের অর্থনীতিতে প্রতিটি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক হিসেবে বিবেচিত হয়। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশের জন্য এটি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার মাপকাঠি। বাংলাদেশের রিজার্ভ বৃদ্ধির খবর আন্তর্জাতিক বাজারেও ইতিবাচক বার্তা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশংসা করেছে এবং রিজার্ভ বৃদ্ধিকে দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক সংকেত হিসেবে দেখছে।
আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনা
যদিও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি বাংলাদেশের জন্য আশাব্যঞ্জক, তবুও বিশ্ববাজারের অস্থিরতা, তেলের দাম বৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতি দেশের জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংককে এসব পরিস্থিতির মোকাবিলায় শক্তিশালী নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি রপ্তানি বৃদ্ধির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার আগমন নিশ্চিত করা এবং আমদানির ওপর সুষম নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে হবে।
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি দেশের অর্থনৈতিক শক্তি ও স্থিতিশীলতার প্রমাণ। চলমান অর্থনৈতিক নীতি ও বৈদেশিক বাণিজ্য বৃদ্ধির মাধ্যমে আগামীতে দেশের আর্থিক অবস্থান আরও শক্তিশালী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ৩০ বিলিয়ন ডলার পার হওয়া রিজার্ভ দেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় মাইলফলক। এটি দেশের জন্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে।



