আলাস্কায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে এমন দৃশ্যের সাক্ষী ছিলেন বিশ্ব, যা একদিকে যেমন প্রতিরক্ষা ও কূটনৈতিক শক্তির নিদর্শন, অন্যদিকে অন্য দেশগুলোর কৌশলগত সতর্কতার উদাহরণ। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মাথার ঠিক ওপর দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী বি-২ বোমারু বিমান উড়ে যাওয়ায় বিষয়টি আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
গতকাল, শুক্রবার (১৫ আগস্ট) পুতিন আলাস্কায় যান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করতে। বিমানবন্দরে বিমান থেকে নামার পর পুতিন এবং ট্রাম্প একে অপরের সঙ্গে হাতে হাত মেলান। তারপর তারা একসঙ্গে লাল কার্পেট ধরে স্টেজের দিকে এগোচ্ছিলেন। ঠিক এই মুহূর্তে আকাশে উড়ে আসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ বোমারু বিমান, যা পুতিনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
বি-২ বোমারু: এক নজরে শক্তি প্রদর্শন
বি-২ বোমারু বিমান, যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে আধুনিক এবং শক্তিশালী যুদ্ধবিমানগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি এমনভাবে তৈরি, যাতে অন্য দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সহজেই এটির উপস্থিতি সনাক্ত করতে পারে না। চলতি বছরের জুনে ইরানের ফর্দো পরমাণু কেন্দ্রসহ অন্যান্য কৌশলগত লক্ষ্যবস্তুর উপর যুক্তরাষ্ট্র এই বিমান ব্যবহার করেছে।
বিশ্বের সবচেয়ে দামী বিমানগুলোর মধ্যে অন্যতম বি-২ বোমারুর দাম ২.১ বিলিয়ন ডলার, যা একাধিক পারমাণবিক ও প্রচলিত অস্ত্র বহনের সক্ষমতা রাখে।
- উড়তে থাকা সময় জ্বালানি গ্রহণের ক্ষমতা থাকায় এটি বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে আঘাত হানতে সক্ষম।
- এটি সাধারণ ও পারমাণবিক উভয় ধরণের অস্ত্র বহন করতে পারে।
- একসঙ্গে এটি সর্বোচ্চ ১৬টি বি৮৩ পারমাণবিক বোমা বহন করতে সক্ষম।
ভাইরাল ভিডিওতে দৃশ্যমান শ্বাসরুদ্ধকর মুহূর্ত
২২ সেকেন্ডের একটি ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, দুই রাষ্ট্রপ্রধান লাল কার্পেট ধরে হেঁটে স্টেজের দিকে এগোচ্ছিলেন। সেই সময় আকাশে উড়ে যাওয়া বি-২ বোমারু বিমান এবং অন্যান্য যুদ্ধবিমান পুতিনকে উপরের দিকে তাকাতে বাধ্য করে।
এই দৃশ্য কেবল একটি রাজনৈতিক বা কূটনৈতিক সাক্ষাত নয়, এটি যুদ্ধ প্রস্তুতি ও কৌশলগত শক্তি প্রদর্শনের নিদর্শন হিসেবেও ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।
যুদ্ধের কৌশল ও প্রযুক্তি
বি-২ বোমারু বিমানটিতে মূলত দুইজন পাইলট থাকলেও এর বেশিরভাগ কার্যক্রম স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত হয়। ফলে পাইলটদের উপর চাপ অনেক কম। এর প্রযুক্তি এতটাই উন্নত, যে এটি দূরবর্তী লক্ষ্যবস্তুর উপর অত্যন্ত নিখুঁত হামলা চালাতে সক্ষম।
মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ এবং এশিয়ার বিভিন্ন কৌশলগত অঞ্চলে এই বিমানটিকে প্রেরণ করা হয়েছে। চলতি বছরের জুনে ইরানের ফর্দো পারমাণবিক কেন্দ্র এবং অন্যান্য লক্ষ্যবস্তুর উপর অন্তত ছয়টি বাঙ্কার-বাস্টার বোমা ফেলা হয়েছিল। এদের প্রত্যেকটির ওজন ছিল প্রায় ৩০,০০০ পাউন্ড।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বি-২ বোমারু বিমান দূরপাল্লার আঘাত ও গোপনীয়তা বজায় রাখার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এর কারণে এটি বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে দ্রুত এবং কার্যকর আক্রমণ চালাতে সক্ষম।
ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক এবং কূটনৈতিক প্রভাব
আলাস্কায় দুই রাষ্ট্রপ্রধানের বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও, ইউক্রেন যুদ্ধ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক বিরোধ সমাধানে বৈঠকের পরে কোনো দৃঢ় ঘোষণা আসেনি। এর মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে, বৈঠকটি মূলত কৌশলগত আলোচনার এবং শক্তি প্রদর্শনের জন্য আয়োজন করা হয়েছিল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ বোমারু বিমান চালনা কেবল শক্তির প্রদর্শন নয়, এটি অন্য দেশের প্রতিরক্ষা নীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে রাশিয়ার মতো শক্তিধর দেশগুলোর কাছে এটি একটি সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা যাচ্ছে।
পরবর্তী কূটনৈতিক পরিস্থিতি
বিশ্ব রাজনীতির জন্য এই ঘটনা একটি নতুন দিক নির্দেশ করছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া সম্পর্ক এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা নীতি এই ধরনের শক্তি প্রদর্শনের কারণে আরও জটিল হতে পারে।
- যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল: শক্তি প্রদর্শন এবং প্রতিরক্ষা ক্ষমতার প্রকাশ।
- রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া: নিরাপত্তা বাড়ানো এবং কৌশলগত প্রস্তুতি।
- আন্তর্জাতিক প্রভাব: অন্যান্য দেশসমূহও নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করবে।
আলাস্কায় পুতিনের মাথার ওপর দিয়ে বি-২ বোমারু বিমান উড়ে যাওয়া কেবল একটি দৃশ্য নয়, এটি আন্তর্জাতিক কূটনীতি, যুদ্ধ প্রযুক্তি এবং শক্তির ভারসাম্য সম্পর্কিত একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত। বিশ্ব রাজনীতির এই নাটকীয় মুহূর্তটি বিভিন্ন দেশের কৌশলগত সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলবে।
যদিও দুই রাষ্ট্রপ্রধান বৈঠকে কোনো সমাধান ঘোষণা করতে পারেননি, তবে এই দৃশ্য বিশ্ববাসীর মনে রাখার মতো। এটি প্রযুক্তি, শক্তি এবং কূটনৈতিক কৌশলের মিলিত নিদর্শন, যা ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ধারাকে প্রভাবিত করবে।
MAH – 12349 , Signalbd.com



