সিলেটে ২৫ জন আটক, বিপুল মাদকদ্রব্য ও নগদ অর্থ উদ্ধার

সিলেট মহানগরীতে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান চালিয়ে ২৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ। শনিবার বিকেলে কোতোয়ালি থানার কাষ্টঘর সুইপার কলোনি এলাকা থেকে এই অভিযানের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য ও নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম রোববার সকালে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মাদকদ্রব্য ধ্বংস এবং মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে এই অভিযান পরিচালিত হয়েছে।
মাদকবিরোধী অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য
মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানে নেতৃত্ব দেন সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন ও অর্থ) মোঃ মাসুদ রানা। অভিযানে মহানগর পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও ফোর্স অংশগ্রহণ করেন।
অভিযান সূত্রে জানা গেছে, আটক ব্যক্তিদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ২২০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ৬৯০ পুরিয়া গাঁজা, ১৫৮ লিটার দেশীয় চোলাই মদ, এবং মাদক বিক্রয় থেকে অর্জিত নগদ ৫৭ হাজার ৫০ টাকা।
অভিযানের গুরুত্ব ও প্রভাব
সিলেটের কাষ্টঘর সুইপার কলোনি এলাকা দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসায়ীর আড্ডাস্থল হিসেবে পরিচিত ছিল। স্থানীয়দের অভিযোগ ছিল, এখানে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও গ্যাংগুলো এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করায় জনজীবন কঠিন হয়ে উঠেছিল। পুলিশ এই অভিযানের মাধ্যমে এলাকা থেকে মাদক ব্যবসায়ীদের সরিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিশেষ ভূমিকা রাখছে।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, “আমরা মাদক নির্মূলে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এই অভিযান শুধু কাষ্টঘর সুইপার কলোনি নয়, সারা মহানগরীকে মাদকমুক্ত করার প্রক্রিয়ার অংশ। যেকোনো অপরাধী যাতে আইন থেকে বাদ না যায়, সে জন্য কঠোর নজরদারি ও অভিযান অব্যাহত থাকবে।”
মাদক বিরোধী প্রচেষ্টায় পুলিশের উদ্যোগ
গত বছর সিলেট মহানগর পুলিশ মাদক বিরোধী অভিযান ত্বরান্বিত করেছে। বিভিন্ন থানায় একযোগে মাদকদ্রব্য উদ্ধার ও মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারের ঘটনা বেড়েছে। বিশেষ করে কাষ্টঘর সুইপার কলোনির এই অভিযান সফলতার সাথে সম্পন্ন হওয়ায় এলাকার জনসাধারণের মধ্যে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে।
সিলেট মহানগর পুলিশের এ ধরনের অভিযান স্থানীয় প্রশাসন ও জনসাধারণের সহযোগিতায় আরও শক্তিশালী হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। এছাড়া, মাদকসেবন ও বিক্রয় প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও গুরুত্বের সঙ্গে বলা হয়।
মাদক নির্মূলের জন্য সমাজের অবদান প্রয়োজন
সিলেটের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং জনসাধারণ সংগঠন মাদক নির্মূলে একযোগে কাজ করছে। এই ধরনের অভিযান সফল করতে জনগণের সহযোগিতা অপরিহার্য। সচেতন নাগরিকরা মাদক ব্যবসা বা ব্যবহার সম্পর্কে পুলিশ ও প্রশাসনকে তথ্য দিতে পারেন, যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য রক্ষায় মাদকমুক্ত সমাজ গঠন অত্যন্ত জরুরি। স্থানীয় নেতৃবৃন্দেরাও মাদক বিরোধী আন্দোলনে আরও সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছেন।
আইনগত ব্যবস্থা ও গ্রেফতারকৃতদের পরবর্তী অবস্থান
পুলিশ জানায়, আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তারা আগামী দিনগুলোতে আদালতের মাধ্যমে দণ্ডবিধি অনুযায়ী দোষীদের বিচার নিশ্চিত করবে।
সিলেটের মাদকমুক্ত কর্মসূচির ভবিষ্যত পরিকল্পনা
সিলেট মহানগর পুলিশ ভবিষ্যতে আরও কঠোর ও পরিকল্পিত অভিযান চালানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে মাদকবিরোধী সচেতনতা কার্যক্রম জোরদার করার পরিকল্পনা রয়েছে।
অভিযানের সফলতা সিলেটবাসীর জন্য ভালো বার্তা হলেও, মাদক নির্মূলের যাত্রা এখনো শেষ নয়। সকল স্তরের মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও পুলিশের কঠোর নজরদারি মিলে সিলেটকে মাদকমুক্ত নগরী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য অর্জিত হবে।