অর্থনীতি

বিশ্বব্যাংক অনুমোদন করল বাংলাদেশের জন্য ৫০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা

বিশ্বব্যাংক আজ ৫০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা অনুমোদন করেছে, যা বর্তমান বাজারদরে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ। এই অর্থ বাংলাদেশে আর্থিক খাতের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধিতে ব্যবহার করা হবে। বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত বোর্ড সভায় এই ঋণ অনুমোদন দেয়া হয়।

বিশ্বব্যাংকের বাজেট সহায়তা: বিস্তারিত ও প্রভাব

বিশ্বব্যাংকের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই অর্থ মূলত সরকারের রাজস্ব সংগ্রহ ব্যবস্থা উন্নয়ন, করনীতির স্বচ্ছতা বৃদ্ধি, ব্যাংকিং খাতের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা জোরদারকরণ এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারি সেবায় ই-প্রকিউরমেন্ট কার্যক্রম চালু করার মতো সংস্কারমূলক উদ্যোগে খরচ করা হবে।

বিশ্বব্যাংকের অন্তর্বর্তীকালীন কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন বলেন, “বাংলাদেশের অর্থনীতি টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন জরুরি। এই অর্থায়ন দেশের নীতিমালাকে আরও শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে।”

বাজেট সহায়তার মূল লক্ষ্য ও প্রয়োগ ক্ষেত্র

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের আওতায় যা যা উদ্যোগ নেওয়া হবে:

  • কর অব্যাহতির সিদ্ধান্তে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা: জাতীয় সংসদের মাধ্যমে কর অব্যাহতির বিষয়ে আরও স্বচ্ছতা আনতে কাজ করা হবে, যাতে করনীতির স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত হয়।
  • ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: ব্যাংকিং খাতের ঝুঁকি কমাতে এবং আর্থিক প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে, যা ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতাকে দৃঢ় করবে।
  • সরকারি কেনাকাটায় ই-প্রকিউরমেন্ট (e-GP) বাধ্যতামূলক করা: সরকারি ক্রয়প্রক্রিয়ায় ই-জিপি বাধ্যতামূলক করে দরপত্র প্রক্রিয়ায় প্রতিযোগিতা বাড়ানো হবে, যা দুর্নীতি কমাতে এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।
  • প্রকল্পের মূল্যায়ন প্রতিবেদন উন্মুক্তকরণ: ২০২৭ সালের মধ্যে প্রকল্পের মূল্যায়ন প্রতিবেদন জনগণের জন্য উন্মুক্ত করার কৌশল প্রণয়ন করা হবে, যাতে জনগণ প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে সচেতন থাকে।

আন্তর্জাতিক আর্থিক সহায়তার ধারাবাহিকতা: এডিবি ও আইএমএফ এর সহায়তা

বিশ্বব্যাংকের এই বাজেট সহায়তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, গত বৃহস্পতিবার এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ৫০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা অনুমোদন করেছে। অর্থাৎ, ৩০ জুনের আগেই বাংলাদেশ প্রায় ১০০ কোটি ডলার পাচ্ছে এই দুই আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান থেকে।

আরো আশাব্যঞ্জক খবর হচ্ছে, আগামী সোমবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বোর্ড সভায় ঋণের দুই কিস্তির অনুমোদন হতে পারে। অনুমোদিত হলে বাংলাদেশ পাবে প্রায় ১৩০ কোটি ডলার। অনুমোদনের মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে এই অর্থ দেশে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নে এই সহায়তার গুরুত্ব

বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ ধ্রুব শর্মা বলেন, “এই অর্থায়ন দেশের অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতাকে বাড়িয়ে নাগরিকদের মৌলিক চাহিদা পূরণে সরকারের সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। পাশাপাশি, দুর্যোগ বা অর্থনৈতিক ধাক্কায় দরিদ্র ও অসহায় জনগোষ্ঠীর জন্য সহায়তা নিশ্চিত করবে।”

বাংলাদেশে সাম্প্রতিককালে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হলেও আর্থিক ব্যবস্থাপনায় কিছু চ্যালেঞ্জ থেকে যায়। বাজেট সহায়তার মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় সরকারকে আরও শক্তিশালী হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।

বাজেট সহায়তার পরবর্তী ধাপ ও প্রত্যাশা

  • সরকারি বাজেট পরিকল্পনায় স্বচ্ছতা: এই অর্থায়ন দেশের সরকারি বাজেট ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি করবে, যা জনসাধারণের আস্থাকে আরও মজবুত করবে।
  • কর সংগ্রহ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন: কর সংগ্রহ ব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশন এবং স্বচ্ছতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকারি রাজস্ব প্রবাহে স্থায়িত্ব আসবে।
  • ব্যাংকিং খাতের সুদৃঢ়তা: ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী হয়ে ব্যাংকিং খাত আরো স্থিতিশীল হবে, যা ব্যবসা ও বিনিয়োগকে উৎসাহিত করবে।
  • দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সরকারি সেবার গুণগত মান উন্নয়ন: ই-প্রকিউরমেন্ট ব্যবস্থার মাধ্যমে সরকারি কেনাকাটায় স্বচ্ছতা আসবে, দুর্নীতি হ্রাস পাবে এবং সেবার গুণগত মান উন্নত হবে।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এই বাজেট সহায়তা শুধু আর্থিক সংস্থান হিসেবে নয়, বরং দেশের আর্থিক ব্যবস্থার গুণগত উন্নয়নে এক বড় ভূমিকা রাখবে। বিশ্বব্যাংক, এডিবি এবং আইএমএফ-এর মতো আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতা দেশের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

বিশ্বব্যাংকের এই ঋণ অনুমোদন বাংলাদেশকে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামো আরও শক্তিশালী হবে এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নত হবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button